প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত; আশুগঞ্জ সার কারখানার ওভারহোলিং কাজের এক মাসেও উৎপাদন চালু হয়নি

আব্দুল্লাহ আল মামুন
Published : 24 June 2011, 06:11 PM
Updated : 24 June 2011, 06:11 PM

প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত
আশুগঞ্জ সার কারখানার ওভারহোলিং কাজের এক মাসেও উৎপাদন চালু হয়নি

আশুগঞ্জ সংবাদদাতা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানার ওভারহোলিং কাজ শেষ করার এক মাস পরও ইউরিয়া সার উৎপাদন চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ওভারহোলিং কাজে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করায় নতুন করে একাধিক ত্রুটি দেখা দেয়ার কারণে পুনরায় ইউরিয়া সার উৎপাদনের বিষয়টি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে । এবার উৎপাদনেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। গুদামে সারের মজুদও সর্বনিম্ন রেকর্ড অতিক্রম করেছে।এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

কারখানার কারিগরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড়'শ কোটি টাকা ব্যয় করে বৃহৎ একটি ওভারহোলিং কাজ করার জন্য গত পহেলা এপ্রিল দেড় মাসের জন্য কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়। শতাধিক বিদেশী বিশেষজ্ঞ এবং অর্ধসহস্রাধিক দেশীয় দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক কাজ করে নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন পর গত ২৫ মে ওভারহোলিং কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু গত এক মাস যাবৎ কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়েও পুনরায় ইউরিয়া সার উৎপাদন চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। প্রকৌশলীরা জানায়, কারখানার ইউরিয়া ও এ্যামোনিয়া প্লান্টে নতুন করে একাধিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার কারণে উৎপাদনের কাছাকাছি গিয়েও আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে হচ্ছে এবং নতুন ত্রুটি গুলো মেরামত করে সার উৎপাদন চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার একাধিক প্রকৌশলী জানান, দেড়'শ কোটি টাকা খরচ করে ওভারহোলিং কাজ করা হলেও নিম্নমানে যন্ত্রাংশ ব্যবহার করায় কারখানা যেমন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি কারখানা চালু হলেও ইউরিয়া সারের উৎপাদন বাড়ানো বিষয়টি অনিশ্চিত। যথা সময়ে উৎপাদনে না আসার ব্যাপারে কারখানার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ওসমান গণির আমলে দায়িত্ব পাওয়া মহা-ব্যবস্থাপক কারিগরি স্বপন দত্ত ও মহা-ব্যবস্থাপক উৎপাদন মোঃ জিন্নাত আলীর অদক্ষতাকে দায়ি করছেন সাধারণ শ্রমিকরা। প্রতিদিন ১৬'শ টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই কারখানায় গত ৩০ বছরে ২৫% উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বন্দের আগে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১২'শ টন পর্য্ন্ত ইউরিয়া সার উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

অর্থ্ বছরের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জ্ন থেকে কারখানা এখনও ৭০ হাজার টন পিছিয়ে রয়েছে। বিসিআইসি থেকে কারখানাকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ৩ লাখ ৪০ হাজার টন। কারখানা এ পর্য্ন্ত উৎপাদন করেছে মাত্র ২ লাখ ৭০ হাজার টন। গুদামেও পর্যাপ্ত পরিমান সার মজুত নেই। বর্তমানে আমদানি করা সার সহ ব্যাগ ২০ হাজার টন ও খোলা সার ২৫ হাজার টন মজুদ রয়েছে। কারখানা ওভারহোলিং কাজ শেষ করার পর এক মাসেও কারখানার উৎপাদন চালু করতে না পারায় প্রতিদিন ১২'শ টন উৎপাদন ক্ষমতা হিসাবে গত এক মাসে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা মূল্যের ৩৬ হাজার টন সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

কারখানার ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মোঃ জিন্নাত আলী জানান, ইউরিয়া সার উৎপাদন চালু করার প্রক্রিয়া চলছে।কারখানার যে সব যন্ত্রাংশ পরিবর্ত্ন করা হয়নি সে সব যন্ত্রাংশে বার বার ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে উৎপাদন চালু করা সম্ভব হয়নি। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, ওভারহোলিং কাজ করার পর এ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া প্লান্টে নতুন করে কিছু ত্রুটি দেখা দেওয়ায় যথা সময়ে উৎপাদন চালু করা সম্ভব হয়নি। ক্যাটালিক্স রিডাকসন ভাল মনে হচ্ছে। সুতরাং আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে পুনরায় ইউরিয়া সার উৎপাদন চালু হতে পারে।

আশুগঞ্জ, তারিখঃ ২৪/০৬/১১