এই কেষ্ট বেটাই খুঁনি !!

জীবন পথিক
Published : 14 Feb 2012, 05:46 AM
Updated : 14 Feb 2012, 05:46 AM

আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। আমাদের প্রথম সন্তান। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সব ঠিক রাখলে এই তো আর তিন মাস। কি অধীর প্রতিক্ষা সবার..। দুই পরিবারের সদস্যদের কত কত যে প্রস্তুতি, কেউ কাথা সেলাই করে তো কেউ জামা, কেউ আবার লেংটি সেলাই করছে হরেক রকম ডিজাইন করে। হবু বাবা হিসেবে বুকের ভেতর গুড় গুড় করে অপার্থিব একটা আনন্দ।

গত দুই দিন প্রায় সব কয়টা পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ, টেলিভিশন চ্যানেল অসাধারণ মায়াময় মুখের একটা ছবি প্রচার করছে যাকে দেবশিশু বলা যায়। সেই মুখের ছবিটা কিছুতেই মুছতে পারছি না মন থেকে, বুকের ভেতর থেকে উদগত কান্নার ঢেউ টা সমস্ত অস্তিত্বকে নাড়া দিয়ে দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হয়ে আসে। কেবল মনে হয় আমরা কি আর নিজেদের মানুষ বলার নৈতিক অধিকার রাখি ?

এভাবে দুটি মানুষ চলে যাওয়া কেবল দুটি মানুষ চলে যাওয়া তো না, দুটি পরিবার তার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, তাদের কর্মক্ষেত্র সব জায়গা থেকেই তো তাদের অস্তিত্ব লীন হয়ে যাওয়া। কয়দিন মনে রাখবো আমরা ? কয়দিন মনে রাখি ? ।

কিন্তু যে শিশুটা তার নিরাপদ কোল হারালো তার আদর স্নেহের জায়গাটা কিছু না বুঝেই হারালো, তার কি হবে ? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার যাবতীয় দায়ীত্ব গ্রহন করেছেন, এটা তার মহানুভবতা। কিন্তু তিনি কি মা হতে পারবেন ? মা কি হওয়া যায় ? হতে পারে কেউ ? বাবার কাঁধে চড়ে মেঘের আকাশ দেখা, পারবেন তিনি দেখাতে ? মেঘের জীবনের একটা সময় হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই ছবিটা কেবল তার ঘরের দেয়ালে ঝুলবে, এর বেশি কি কিছু পাওয়া হবে তার, আদর আর স্নেহ কি টাকায় বিনিময়যোগ্য ?

কত টক-শো, কত কত আলোচনা সমালোচনা, প্রতিবাদ আর মানববন্ধন। আমাদের করিৎকর্মা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘন্টা সময় বেধে দিয়েছিলেন খুনিদের গ্রেফতার করার জন্য। ব্যাপারটা কি এমন যে খুঁনি আমগাছের উপর গিয়ে বসে আছেন আর আমাদের পুলিশবাহিনী তাকে টুপ করে পেড়ে এনে তাদের মিডিয়া উইং এর সামনে হাজির করবেন বুকে পোষ্টার সেঁটে, এই কেষ্ট বেটাই খুঁনি।

আমাদের পুলিশ প্রধান বলেছেন প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে তদন্তে। আপনাদের কি মনে পড়ে ঠিক এমন কিছু কথামালা এর আগেও বহুবার শুনেছি আমরা !! এইতো কয়েকদিন আগে প্রচন্ড জনপ্রিয় একজন জননেতা প্রকাশ্য দিবালোকে খুঁন হয়েছিলেন। তার তদন্ত থেকে শুরু করে অপরাধী গ্রেফতার পর্যন্ত অনেক নাটক দেখেছি আমরা। মেগাসিরিয়ালের সেই নাটক এখনো চলছে। আমরাতো দর্শক মাত্র । অসহায়ত্ববোধ করা ছাড়া আমাদের কি সত্যিই আর কিছু করার আছে ? সাংবাদিক দম্পতির খুন হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলোর পারস্পরিক প্রচ্ছন্ন দোষারোপের খেলাও দেখছি আমরা গণমাধ্যমগুলোর বদৌলতে। শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ে যতগুলো হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে, তার কয়টার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছে আমাদের রাষ্ট্র। তবুও যখন আমাদের পুলিশ প্রধান বলেন অপরাধ আগের তুলনায় কমেছে তখন আর নিজেকে আহাম্মক বলা ছাড়া কি করা যাবে ।

আমরা আর নাটক দেখতে চাই না। অনেক হয়েছে……। অনেক…..। পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর মত আমাদেরকে বুঝ দেয়ার জন্য যেন তেন ভাবে কাউকে এনে হাজির করলেই হবে না "এই কেষ্ট বেটাই চোর" আমরা আর মানবো না। এরে তারে ধরে এনে থুক্কু ভুল হয়েছে এই লোক খুঁনি নয় আসল খুঁনি ওমুক। আর শুনতে বা দেখতে চাইনা আমরা ।

আমরা ক্লান্ত, বিরক্ত, ক্ষুদ্ধ এবং ক্রুদ্ধ। সঠিক পেশাদার সূলভ তদন্তের প্রেক্ষিতে প্রকৃত অপরাধীকে দেখতে চাই আমরা। দেখতে চাই রাষ্ট্র প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করেছে। আমরা অপরাধ বিহীন ধোয়া তুলশীপাতার মত রাষ্ট্র আশা করি না, কিন্তু এটা অবশ্য অবশ্যই আশা করি যে রাষ্ট্র অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করবে এবং নিরপরাধ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারা যোগ্য এটা বিশ্বাস করতে চাই আমরা। তাদের পেশাগত দ্বায়ীত্ববোধ, আত্মমর্যাদাবোধ তাদের বিবেক কে জাগাবে, তাদের সন্তানদের মুখ যেন তাদের মনে করিয়ে দেয় তারাও বাবা, সৃষ্টিকর্তার কাছে কেবল সেই প্রার্থনা করি।