রাজনীতির ল্যাঞ্জা-গোবর অবস্থা ও দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী

জীবন পথিক
Published : 19 March 2012, 10:26 AM
Updated : 19 March 2012, 10:26 AM

প্রিয় পাঠক, এমনিতেই বাংলাদেশের রাজনীতির এখন ল্যাঞ্জা-গোবর অবস্থা। গতকাল "দৈনিক নয়াদিগন্তে" 'ভারতীয় সাংবাদিকের অপপ্রচার' শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ কিছুটা সংক্ষেপ করে নিচে সংযুক্ত করলাম। দয়া করে বোল্ড করা অংশটুকু মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন প্রথমে পানি ঘোলা করা তারপর সেখানে মাছ শিকারের চেষ্টা যারা করছেন তারা মনে হয় বাংলাদেশের মানুষকে গো-মূর্খ আর আহাম্মক মনে করেন। আমরা অবশ্য এমনিতেই নাচুনি বুড়ি তার উপর কেউ যদি ঢোলের বাড়ি দেয় তখন আমরা কিছু না বুঝেই নাচতে শুরু করি। আমাদের মূল সমস্যাটা সেখানেই। আমরা যেন একটু সাবধান হই, কারা , কেন, আর কি উদ্দেশ্যে আমাদের রসগোল্লা খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। এই দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীদের থেকে আমরা যেন সাবধান থাকি।

আইএসআই বিএনপিকে টাকা দিয়েছে বলে দুবাইভিত্তিক খালিজ টাইমসের যে প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশে হইচই চলছে সে ব্যাপারে প্রকৃত সূত্র ও তথ্যের সত্যতা মিলছে না। খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে পাঁচ কোটি রুপি দিয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ তথ্য পাকিস্তানের কোনো পত্রপত্রিকা কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এমনকি নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত ভারতের প্রধান কোনো পত্রিকাতেও এ খবর প্রকাশিত হয়নি।

ডেইলি মেইলের ভারতীয় অনলাইন সংস্করণ, সাপ্তাহিক ইন্ডিয়া টুডে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে যে তথ্যসূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে, তা কল্পনানির্ভর।

বিষয়টি নিয়ে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিপোর্টটি গত ৩ মার্চ সর্বপ্রথম খালিজ টাইমসে ছাপা হয়। এর পরদিন ৪ মার্চ একই রিপোর্ট ঢাকার দৈনিক প্রথম আলো ছাপে। ডেইলি মেইলের রিপোর্টটি লিখেছেন দীপাঞ্জন রায়। এই দীপাঞ্জন রায় প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি। ইনডিয়া টুডেতেও তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে লিখে থাকেন। বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বাসস ইন্ডিয়া টু ডের ওই রিপোর্টটি হুবহু প্রচার করেছে।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, একই ব্যক্তির রিপোর্ট হওয়া সত্ত্বেও টাকার অঙ্ক উল্লেখ কালে কোথাও পাঁচ কোটি, আবার কোথাও ৫০ কোটি উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানের দ্য নিউজ ও প্রধান বিজনেস ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার এবং ডনের অনলাইন সংস্করণে আদালতে মামলার বিবরণী হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। এর কোথাও আইএসআই কর্তৃক বিএনপিকে টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ নেই। আদালতে স্বীকারোক্তি বলে যে কথা চালিয়ে দেয়া হয়েছে তা কোথা থেকে সরবরাহ করা হয়েছে সে তথ্যের কোনো সূত্র নেই।

নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত ভারতের প্রধান সংবাদপত্র দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্থান টাইমসে বিএনপিকে আইএসআই টাকা দিয়েছে- এ সংক্রান্ত কোনো খবর নেই। নয়াদিল্লিতে প্রথম আলোর প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায়ের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

খালিজ টাইমস প্রথম এ খবরটি প্রকাশ করে। দুবাই থেকে প্রকাশিত দৈনিকটি পরিচালিত হয় ভারতীয় সাংবাদিকদের দিয়ে। দীপাঞ্জন রায় ডেইলি মেইল ও ইন্ডিয়া টুডেতে তার নাম কিছুটা কাটছাঁট করে লিখেছেন। ডেইলি মেইলে নামের শেষে চৌধুরী উল্লেখ করেননি কিন্তু আর্কাইভে তার অন্য রিপোর্টে চৌধুরী পরিচিতি রয়েছে।

ইন্টারনেটে দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর পরিচিতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। তিনি ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে লেখালেখি করেন।

অতএব সাধু সাবধান ! লিঙ্ক টি দিলাম আগ্রহ থাকলে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন –
'ভারতীয় সাংবাদিকের অপপ্রচার'