রূপচর্চার ফাঁদে: ফান্দে পড়িয়া বগা….

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 18 Nov 2012, 03:46 AM
Updated : 18 Nov 2012, 03:46 AM

রূপসজ্জার জন্য আমরা কতকিছুই না করছি। বিধাতার দেয়া রুপ নিয়ে সন্তুষ্ট নই তারা বদলাতে কত চেষ্টাই না করছি। কারও গায়ের রং বাদামি কিংবা শ্যামলা _ তা নিয়ে কষ্ট বেদনা। কেউ যথেষ্ট ফরসা নয় তা নিয়েও বেদনার হতাশার অন্ত নেই। আরও ফরসা হতে হবে যে!কেউ যথেষ্ট ফরসা;তারও মনে সুখ থাকবেই খুব জোর দিয়ে বলি কেমন করে! তার কষ্ট এই রুপ যদি সব সময় অটুট না থাকে। যদি রোদ পুড়ে রঙ শ্যামলা হয়ে যায়।তাহলে রুপে গৌরবে আপ টু ডেট থাকা যে হবে না। সবাই যে সুন্দরী রুপসী বলছে তা বুঝি আর বলবে না। কি বোম্বে;কি ঢাকা; কি চট্টগ্রাম কি বরিশাল- শহরে নগরে বন্দরে গ্রামে এখন ব্যাপকভাবে রুপ সচেতনতা ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই এখন ফ্রেশ থাকতে চায়। সতেজ থাকতে চায়। রুপের সন্ধানে টেনশন এখন ছেলেদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে বেশ। বিধাতার দেয়া চেহারাকে ঘষে মেজে কেমন করে বদলে আরও নিখুঁত আকর্ষনীয় করা যায় তার জন্য চেষ্টা আর চেষ্টা।

ব্যাপারটা যে মন্দ;কিংবা ঠিক নয়-জোর করে তা বলা যায় না। আপনি ফ্রেশ থাকতে চাইবেন-অবশ্যই ঠিক। আপনি সতেজ ফুরফুরে থাকতে চাইবেন অবশ্যই ঠিক। আপনি পরিচ্ছন্ন পরিষ্কার খোশ মেজাজে থাকতে চাইছেন সেটা অবশ্যই ঠিক। কিন্তু ধরা যাক কেউ শ্যামলা হয়ে জন্মেছে সে এখন রুপচর্চা করে ফরসা হয়ে উঠবে_এজন্য প্রানান্ত চেষ্টা; আমি বলবো এই চেষ্টার বাড়াবাড়িটা ঠিক নয়। গায়ের রঙ যাই হোক কাল ধলো শ্যামলা বাদামি এই বিধাতার দেয়া রঙটা আহামরি বদলে ফেলা এটা সম্ভবও নয়;ঠিকও নয়। ঠিক নয় এজন্য যে যতই চেষ্টা করুন তা বিফলে যেতে বাধ্য। আমরা যে গায়ের রঙটা পেয়েছি এর পেছনে বিজ্ঞান সম্মত ক্রণ রয়েছে। সেই কারণকে কেমন করে পাল্টাবেন।

আর এই যে রঙ বদলানোর চেষ্টা ; এই যে রুপ বদলানোর চেষ্টা -এটাকে পুজি করে কত প্রতারনার ব্যাবসা চলছে। ৭ দিনে ফরসা ;তিন মাসে ফরসা কত রকম বিজ্ঞাপন। মুখ ঢেকে যায় প্রতারনার হাজারো বিজ্ঞাপনে। শহরে বন্দরে হাজারও বিলবোর্ড;ব্যানার ফেস্টুন। টিভিতে ঘন্টার পর ঘন্টা বিজ্ঞাপন। ইদানিং শুরু হয়েছে আধা ঘন্টা একঘন্টার বিশেষ প্রতারনামূলক বিজ্ঞাপন। ভেষজ বোটানিক নানা জিনিষপাতির বিজ্ঞাপন। হোমিও ফার্মেসীর বিজ্ঞাপন। দাতের চিকিৎসা;মাদক রোগ,মানসিক রোগ;ফিজিওথেরাপি;সাইকোথেরাপি-সব কিছুর চিকিৎসা এখন বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে চলছে। রাতভর চলছে বিজ্ঞাপন; দিনের বেলা চলছে বিজ্ঞাপন। টিভি অনুষ্ঠানে কেবলি অপচিকিৎসার বিজ্ঞাপন। অথচ আশ্চর্য ব্যাপার হল বাংলাদেশে মেডিকেল ওষুধপাতির বিজ্ঞাপন আইন করেই নিষিদ্ধ। অথচ এগুলো চলছে অবাধে। তার মধ্যেই শনিবার অনলাইন নিউজ গুলোয় অবাক হলাম খবরটি দেখে। বোটানিক এরোমার মালিক সপত্মীক গ্রেফতার। তার সব কোম্পানি সিলগালা।

অভিযানে কোম্পানির এমডি আসাদুজ্জামান লিটন (৩৮), তার স্ত্রী ফেরদৌসীসহ (২৮) ৯ জনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছে র‌্যাব-১'র অভিযান দল।

র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা
জানান, মানব শরীরে ক্ষতিকারক মার্কাই ব্যবহার করে আটককৃতরা আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী 'বোটানিক অ্যারোমা' নামে বিভিন্ন সামগ্রী প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করে আসছিল। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বোটানিক অ্যরোমার কেরাণীগঞ্জের তিরনি এলাকার ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানকালে বোটানিক অ্যরোমার মালিক আসাদুজ্জামান, তার স্ত্রী ফেরদৌস, ভাগিনা আক্তারসহ আরও ৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদেরকে ভেজাল ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করে আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী সামগ্রি উৎপাদন ও বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
র্যাবকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না।

রূপলাবণ্যের প্রতি নারীর অরোধ্য আকর্ষণকে পুজি করে দেশে শত কোম্পানি চালিয়ে যাচ্ছে রুপ সামগ্রীর নানা ভেজাল ব্যবসা। এরা দিচ্ছে অসম্ভব সব প্রলোভন। দিচ্ছে এমন সব ওয়াদা যা রাজনীতিবিদদেরও হার মানাচ্ছে। দিনের বেলা এমন কি রাতে প্রাইম টাইমে এরা রুপ লাবন্য নিয়ে অসম্ভব প্রতিশ্রুতির অনুষ্ঠান করছে টিভিতে। অমুক হারবাল রুপ জিজ্ঞাসা;তুমুক হারবাল রুপের রহস্য।অমুক বোটানি ত্বকের যত্ন। রঙ ফরসা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রুপ লাবন্যে মাধুরী দি্ষ্কিত বানিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এরা ঘন্টার পর ঘন্টা বক বক করে যাচ্ছে। এই যে র্যাব যাদের কে ধরল তাদেরও মনে হচ্ছে মাঝে মধ্যে দেখেছি টিভি আলো করে বসেছেন স্বমী স্ত্রী দুজন মিলে। আমিই তো চকিতে ভেবেছিলাম এরা রূপচর্চার মস্ত হস্তি জানে অলা না হয়ে যান না। র্যাবের অভিযানে সেই বিশ্বাস আর তো থাকল না। এদের একটা প্রডাক্ট ছিল ব্লাক ডায়ামন্ড স্কিন ক্রিম।এর বিজ্ঞাপনে মেতে ছিল মিডিয়া।

আমার কথা প্রডাক্ট নিয়ে নয়। প্রডাক্টের ভাল মন্দ ভেজাল অভেজাল দেখবে সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমি বলছি নামটা কি ভয়ংকর। ব্লাক ডায়ামন্ড স্কিন ক্রিম। টার্গেট পিপল কারা! তাদেরকে রাতারাতি ফরসা বানানোর ওয়াদায় কেমন ব্যাবসা করেছে ভাবুন। দিনের পর দিন অবাধে চলেছে ব্লাক ডায়ামন্ডের ব্যাবসা। র্যাব অবশেষে সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছে তাদের ধন্যবাদ। শুধু বোটানি হারবালকে ধরলে চলবে না। অলিতে গলিতে কত হারবাল ;টিভি পর্দায় কত হারবাল -সকল কিছুর বিরুদ্ধে একশন নেওয়ার আহবান রইলো তাদের কাছে। একদিনে না হোক, তবু এগিয়ে যাক সরকার।

সতেজতার খোঁজে মানুষ ছুটবেই। নারী পুরুষ উভয়েরই রুপ লাবণ্যের প্রতি আরাধ্য আকর্ষন থাকবেই। কিন্তু সেই আকর্ষন যেন মানসিক রোগের মত হয়ে না যায়। বিধাতা যে রুপ গড়ন চেহারা শৈলী দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেই ফ্রেশ সতেজ থাকার চেষ্টা করতে হবে। বিধাতার দেয়া চেহারা রঙ, পিতামাতা পরম্পরার কারনে পাওয়া রঙ ও গড়ন চাইলেই আমুল পাল্টে ফেলা যাবে না। এটা মনে রাখতে হবে। রুপ রঙ বদলাতে পাগল হয়ে লাভ নেই। তাতে এই ভেজাল প্রলোভনে শ্যামলা ন্যাচারাল রঙ আরও পুড়ে অঘটন ঘটাবে। ভেজালের জালে বিধাতার দান বিকৃত করে লাভ নেই। মনকে সামলান। বিধাতার সৃষ্টি মানুষ মাত্রেই সুন্দর। নিজেকে যা কিছু সুন্দর তা নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে দেখুন; কর্মের গুনাবলীকে বাড়ান ;দেখবেন আপনি যেমন এই প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে রুপ হারা হবেন না;তেমনি সমাজে সংসারে একজন যোগ্য দরকারি মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে দেখুন _ দেখবেন জীবন কত সুন্দর। কত মায়াময়। কত ছন্দ ময়। @