ব্যলকনি এক নাগরিক সাম্পান

মাজুলহাসান
Published : 26 Oct 2018, 03:06 PM
Updated : 26 Oct 2018, 03:06 PM


শৈশবে কাঠের বন্দুক দেখে আবারও ডাকাত হতে ইচ্ছে করে। অথবা নাবিক। আমার কাছে ছেলেবেলা এক এবং অদ্বিতীয় সমুদ্রঘটক। নিশিদিন ঘুঙুর বাজে পায়ে। তবু গুটিশুটি বেড়ালের মতো সন্ধ্যা নামে শহরে। আর রাত মানেই ফিনফিনে নাগলিঙ্গম। গলিতে রিকশার টুংটাঙ। দূরে উদ্ধত ফণা। শুধু ঢেউ। শুধু ঢেউ। ১৩ নটিক্যাল মাইল দূরে ফ্রিজ হয়ে আছে ডুবসাঁতার। এখন এই সিমেন্টের সাগরে স্মৃতিকে কতদূর প্রসারিত করতে পারবে খেলনা দূরবীন। সেই কবে লিখেছিলাম, 'বন্দরের কথা এলেই চলে আসে ক্রন্দনরত তলোয়ার আর হাস্যোজ্জ্বল শিশুর গল্প। আর হুটোপুটি হলে কাচের বয়াম তো ভাঙবেই, ছিঁড়ে যাবে বিনয়ের বোতাম। এখন ছেড়া শার্টে কোন দিকশূন্যপুরে জাহাজ ভাসাবে সারেং? মহাবৃক্ষের ছায়ার মতো ভাবো। ততক্ষণে আমি দূর থেকে চীনা গণিকাটাকে দেখে পিনিক করে নেই। জানোই তো- একটু আধটু আমিষ না হলে পৃথিবী আদতে পোকা খাওয়া একটা সুগোল কমলালেবু। যেমনি রেড-ইন্ডিয়ানরা বলে, একটা কচ্ছপের ওপর আরেকটা কচ্ছপ, তারপর আরেকটা, তার ওপর পৃথিবী… এভাবে গড়ে উঠেছে মোরগফুলের মতো রক্তরাগমিশ্রিত মহাব্রহ্মাণ্ড। যেখানে দ্যুতিবিচ্ছুরণ। কুহকের নদ। নারী। তার হুহু ময়দানে মটরদানা কি সরিষাকণার চেয়েও ক্ষুদ্র যে টিপ- সবুজ- তার মধ্যে আড়াআড়ি শুয়ে থাকে গাছের গুঁড়ি, করাতকল, মাঝারি ট্রাফিক জ্যাম, মানুষের ঝুলন্ত উদ্যান। একদিন এ সবই মিথ্যে হয়ে যাবে। সূর্য কুঁজো হলে সকাল মিথ্যে আর বিকেল মানেই ভাবুকতা। ভাবতে ভাবতে একদিন ম্যাগিলানও বলেছিল, আশলে কেউ ফেরে না শুরুর বিন্দুতে। এমনকি ধবধপে উরু, মেসবাড়ি, চীনা গণিকা, জাহাজ ভাঙার শব্দ। শুধু একটা পরিত্যক্ত ডক ফিরে ফিরে আসে। ডকের ডান পাঁজরে দশভুজার মতো মহাবৃক্ষের অধিষ্ঠান; আর বাম পাঁজরে আকুলিবিকুলি করে বাস্তুচ্যুত মন্থর তারা-কচ্ছপ… ওরা চীনা গণিকা আর বোতাম ছেঁড়া সারেংয়ের হারানো সন্তান।'

সমুদ্র মানুষকে টানে। টানে অসীম, অপার রহস্যময়তা। কারণ মন মানেই গভীর জলোচ্ছ্বাস। যাকে বলে চিন্তা সাগর, ভাবনা সাগর, রূপসাগর ইত্যাদি ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশ এই বোধসাগরে হারিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন ভিয়েনা, টোকিও, রোম, মিউনিখ – তুমি?
সার্থবাহ, সার্থবাহ, ওইদিকে নীল
সমুদ্রের পরিবর্তে আটলাণ্টিক চার্টার নিখিল মরুভূমি!
বিলীন হয় না মায়ামৃগ – নিত্য দিকদর্শিন;
যা জেনেছে – যা শেখেনি –
সেই মহাশ্মশানের গর্ভাঙ্কে ধূপের মত জ্ব'লে
জাগে না কি হে জীবন – হে সাগর –
শকুন্ত-ক্রান্তির কলরোলে।
-সাতটি তারার তিমির, ১৯৪৮

অথবা সেই রূপসাগর, সাগর বালিকা। যার দেখা মেলে কি মেলে না বলা যায় না।
বাসা তোমার সাতসাগরের ঘূর্ণী হাওয়ার বুকে!
ফুটছে ভাষা কেউটে ঢেউয়ের ফেনার ফণা ঠুকে!
প্রায়ণ তোমার প্রবালদ্বীপে, পলার মালা গলে
বরুণরানি ফিরছে যেথা, মুক্তপ্রদীপ জ্বলে
যেথায় মৌন মীনকুমারীর শঙ্খ ওঠে ফুঁকে।

(সাগরবালিকা, জীবনানন্দ দাশ)
আসলে সবকিছু একসুতোয় গাথা। এক অব্যখ্যেয় প্রশ্নবোধকতায়। কারন 'জলের সাথে আছে জলের গভীর পরিচয়,/ সমুদ্র তাই ঐক্যবদ্ধ, পাহাড় ততো নয় ।/ পাহাড় হলো একটা থেকে অন্যটা বেশ দূরে,/ কিন্তু সাগর মহাসাগর বাঁধা একই সুরে ।' -ঐক্যবদ্ধ জল ; নির্মলেন্দু গুণ

সমুদ্র : সাগর, সায়ব, অর্ণব, সিন্ধু, দরিয়া, জলধি, পাথার, পারাবার, প্রচেতা, অকূল, জলধর, নদীকান্ত, নীরধি, তোয়াধি, পয়োধি, বারিধর, বারীন্দ্র, ইরাবান, দ্বীপী। অর্ণব বলতেই ভেসে আসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান—
আজিকে পাতিয়া কান,
শুনিছি তোমার গান,
হে অর্ণব! আলো ঘেরা প্রভাতের মাঝে
একি কথা! একি সুর!
প্রাণ মোর ভরপুর,
বুঝিতে পারিনা তবু কি জানি কি বাজে
তব গীত মুখরিত প্রভাতের মাঝে!

সুর না বাধলেও বোধের সুর ভেসে আসে জীবনানন্দের কণ্ঠ থেকে। এটা সময়, যখন কবিগুরুর স্বর্গীয় ও আধ্যাত্মিক জগৎ থেকে কবিতা চলে আসছে বস্তুদুনিয়োয়। যখন বুদ্ধদেব বাবুরা গুরুতর অভিযোগ চলছে কবিগুরুর এই প্লেটোনিক ভালোবাসা নিয়ে। হয়তো তখনই সাগর নবরূপে হাজির হয় বাঙ্গাল জীবনানন্দের লেখায়। ১৯৩৩ শীর্সক কবিতায় তিনি বলছেন, 'তারপর, সমুদ্র গাহিবে গান বহুদিন — আকাশে আকাশে যাবে জ্বলে নক্ষত্র অনেক রাত আরো, নক্ষত্র অনেক রাত আরো, (যদিও তোমারও রাত্রি আর দিন শেষ হবে একদিন কবে!) আমি চলে যাব, তবু, সমুদ্রের ভাষা রয়ে যাবে — তোমার পিপাসা ফুরাবে না পৃথিবীর ধুলো মাটি তৃণ রহিবে তোমার তরে — রাত্রি আর দিন রয়ে যাবে রয়ে যাবে তোমার শরীর'।
জীবনানন্দে দেখা মেলে আরেক বিখ্যাত সাগর- সিংহল সমুদ্র কিংবা আঁধার ঘেরা মলয় সাগরের। জীবনানন্দ কি মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন কখনও? যাননি। তাহলে? এই সাগর কবির মলয়। জীবনানন্দ দাশের "বনলতা সেন" কবিতাটি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু তার কবিতা পত্রিকায়, ডিসেম্বর, ১৯৩৫। পাণ্ডুলিপির হিসেবে ১৯৩৩ খৃস্টাব্দে কবিতাটি লিখিত হয়েছিল বলে জানা যায়। আমার জানা মতে কবিতাটি সম্ভবত বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বহুল পঠিত কবিতাগুলোর একটি। জীবনানন্দ দাসের জীবনে বনলতা সেন নামীয় কোনও রমণীর বাস্তব উপস্থিতি ছিল কি-না সেই অমর কৌতূহল সাধারণ-অসাধারণ সকল শ্রেণীর পাঠককেই শুরু থেকে ভাবিয়ে এসেছে। জীবনানন্দ গবেষকরা বলেন তিনি কখনো নাটোর যাননি। তখন নিজের অজান্তে মনের ভেতর প্রশ্ন জাগে তবে কেন এ মফস্বল শহরটির নামোল্লেখ ? বলা যেতে পারে নাটোরের হলেও বনলতা সেনের সঙ্গে কবির দেখা হয়েছিল অন্যত। যেমন বরিশালে কিংবা কলিকাতায় । তেমনি মলয়, সিংহল। এই যে কবিতায় ভ্রমণ, সাগর মন্থন।, তার নোনা জলের ঝাপটা ঠিকই এসে লাগে গায়ে। জন্ম নেয় এক নাগরিরক নাবিকের জীবন, মহাপর্যটক এক, ক্লান্ত কিন্তু বোধ ও অভিজ্ঞতা রোমাঞ্চে ঠাসা।

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

সেই ক্ষনিক সুখের আশায় আমি বলতে চাই নারীদেহ, শরীর এক অজ্ঞাত রহস্যগুহা, জ্যোতির্ময় অন্ধকার আর ফলাময় উত্তাল সমুদ্রের কথা। আমি বলতে চাই- অহম্- উহা রৌদ্রাকর্ষক। হিমার্দ্র বেহালা এক। সেই বীর- যার আছে গহিন দ্বীপান্তর অথবা একাকিত্বের কৈলাস। যুদ্ধজয়ের ঢাককাঠির অপেক্ষায় থাকে বসন্ত তোরণ। হে কৈলাসেশ্বর, ত্রিশূল ভালোবাসি আমি, ভালোবাসি শৈত্যস্মারক। জীর্ণ পত্রচীর। শূন্যমুহূর্ত। আপত্তি শুধু পুজোয়। একদিন নির্লিপ্ত বরফসিংহাসনে আগুন জ্বালাব। লহরি শুনে ঢুকে পড়া নারীর সাথে খুব লীলা হবে রক্তজবায়। শুধু গুহা; ছায়াডুব। প্রিয় রাধিকা অঙ্গার- তোমার মুখ সেদিন টলটলে সবুজ! হরিৎ মীন আর ব্রহ্মাণ্ডের বিজলি সাঁতার…

সাগরের আরেক সমার্থক নিরধী বলতে মনে পড়ে বিখ্যাত শিল্পী হেমন্তকুমার রায়ের গান। কাঙালের অশ্রুনীর, প্রমত্ত নীরধি গর্ভে বিক্ষোভেতে হয়েছে অস্থির | বজ্র ছাড়ে উন্মত্ত ফুত্কার বুভুক্ষু ভিক্ষুক প্রাণে যত দুঃখ রহি রহি করিছে উদ্গার !

কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত কবিতা/গান দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার। মনে পড়ে প্রতিভা বসু-এর কবিতা 'নিসর্গ পারাবার'। এই সেই সমুদ্দুর। যাকে নজরুলের পূজারিনী কবিতায় দেখা মেলে পয়োধি রূপে। নজরুল বলছেন, প্রলয়-পয়োধি-নীরে গর্জে-ওঠা হুহুঙ্কার-সম বেদনা ও অভিমানে ফুলে' ফুলে' দুলে' ওঠে ধূ-ধূ ক্ষোভ-ক্ষিপ্ত প্রাণ-শিখা মম! পথ-বালা আসে ভিক্ষা-হাতে, লাথি মেরে চুর্ণ করি গর্ব তার ভিক্ষা-পাত্র সাথে। আর বারীন্দ্র নামের সাগরটির দেখা পাই অই নজরুলেই। অগ্নিবীণার উৎসর্গপত্রে নজরুল বলেছিলেন, সাগ্নিক বীর অগ্নি ঋষি বারীন্দ্র কুমার ঘোষকেই শুধু অগ্নিবীণা সমাজে। তাঁর সামনে ছিল শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার সমাজতান্ত্রিক আদর্শ। ভারতবর্ষকে ইংরেজ শাসনমুক্ত করার কঠোর অঙ্গীকার তো ছিলই। কি বিদ্রোহী কবিতা লেখার আগে, কি বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশের পরে নজরুলের তাঁর বিদ্রোহের ধ্বজা উড়িয়েই বেড়াচ্ছিলেন। তাঁর প্রাণপণ সংগ্রাম ছিল ভারতবর্ষে একটি স্বাধীন প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তোলার।
এই বারীন্দ্র বোধ নিয়ে আমি কখনো খবর পড়তে চাই। কাগজে লেখা আসে। টিভি চ্যঅনেলের স্ক্রলে ভেসে ওঠে ব্রেকিং নিউ: 'বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠা হলো বাংলাদেশের। এ ছাড়া ২০০ নটিক্যাল মাইল ছাড়িয়ে মহীসোপানের বাইরের সামুদ্রিক সম্পদেও বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত হলো। সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।'
উইকিপিয়া বাংলা বলছে, সাগর হল লবনাক্ত জলের একটি অতি বৃহৎ জলাশয়। শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত "সাগর" বলতে বোঝায় মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত একটি বৃহৎ লবনাক্ত জলাশয়। কখনও কখনও মহাসাগর বোঝাতেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আবার বিরাটাকার লবনাক্ত জলের হ্রদ বোঝাতেও "সাগর" শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণ, কাস্পিয়ান সাগর।
মহাসাগরও আছে, যা অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। মহাসাগর শব্দটি এসেছে গ্রীক 'ওকিআনোজ' শব্দ থেকে। এটি পৃথিবীর মোট আয়তনের (৩.৬১*১০১৪ বর্গ মিটার) প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। এ বিপুল জলরাশি আবার অনেকগুলো মহাসাগর ও ছোট ছোট সমুদ্রে বিভক্ত।
মহাসাগরের অর্ধেকেরও বেশী জায়গার গড় গভীরতা ৩,০০০ মিটারেরও (৯,৮০০ বর্গফুট) বেশী। মহাসাগরের গড় লবণাক্তের উপাদান ৩.৫% এবং প্রায় সকল সমুদ্রের গড় লবণাক্ততা ৩% থেকে ৩.৮%। বৈজ্ঞানিকেরা হিসেব করে দেখেছেন যে, মহাসাগরে প্রায় ২,৩০,০০০ সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণী রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণীর সংখ্যা নির্ণিত সংখ্যার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশী।
আবারও ফিরি সমুদ্র জয়ে। মনের ঝড়ে। বলা হচ্ছে, এই নতুন সীমা, নতুন জলভূমি এবং তার নিচের ডুবোচর নিয়ে দেখা দেয় নতুন সম্ভাবনা। 'বাংলাদেশের সমুদ্রজয়ের ফলে বিপুল সম্পদ আহরণের সম্ভাবনা দেখা দিলেও তা এখনো কাজে লাগানো যায়নি। এ সম্ভাবনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ শুরু করা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু আগে থেকেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে থাকা তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজও শুরু হচ্ছে না। অথচ পৃথিবীর বৃহত্তম এই উপসাগরের অন্য অংশীদারেরা বিশেষ করে মিয়ানমার ও ভারত বাংলাদেশের সীমানা-সংলগ্ন এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করে দিয়েছে। ভূতত্ত্ববিদদের অভিমত, মাটির তলার ওই সম্পদের অবস্থান ভৌগোলিক সীমা মানে না। ভৌগোলিক সীমানা-সংলগ্ন অন্য দেশের তেল-গ্যাস কূপও বাংলাদেশের সম্পদ তুলে নিতে পরে।'
এখন সেই সাগর ঘিরে ব্লু ইকোনমি। নতুন হাতছানি। নৌবাহিনীর নতুন মহড়া, বহরে যোগ হচ্ছে নতুন রণতরি, কথা শুনি ত্রিমাত্রিক বাহিনীর। জানতে পারি এই বিশাল জলরাশির অধিকার পেলেও মহীসোপানে ঢোকার করিডোর পায়নি বাংলাদেশ। তবে জেনেভার আদালত বলেছে, সেই অধিকার থাকতে হবে বাংলাদেশের। আমি পরিপূর্ন জয় চাই। চাই মহাসাগরে ঢোকার অধিকার। এই জলজ কাটাতার মানি না আমি। এই কাটাতার থাকলে অনেক স্বপ্নবাজ মারা পড়তো বেঘোরে। উদাহরণ হিসেবে বলি, রুয়াল আমুনসেন'এর কথা। '১৮৯৭-৯৯ সালে সংঘটিত বেলজিয়ান দক্ষিণমেরু অভিযানে তিনি একজন ফার্স্ট মেট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। "বেলজিকা" (Belgica) নামের জাহাজ নিয়ে আদ্রিয়াঁ দ্য গেরলাশের (Adrien de Gerlache) নেতৃত্বাধীন এই অভিযান ছিল দক্ষিণমেরুতে শীতকালে সংঘটিত প্রথম অভিযান। ডিজাইনের ত্রুটি অথবা নাবিকদের ভুলে বেলজিকা অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের পশ্চিমে অ্যালেকজ্যান্ডার ল্যান্ডে (ইংরেজি: Alexander Land, ৭০°৩০'দক্ষিণ) সামুদ্রিক বরফে আটকে যায়। জাহাজের অভিযাত্রীদের তখন এমন এক শীতকাল অতিবাহিত করতে হয় যার জন্য তাঁরা উপযুক্তভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। আমুনসেনের নিজস্ব ধারণা অনুযায়ী, জাহাজের মার্কিন ডাক্তার ফ্রেডেরিক কুক (ইংরেজি: Frederick Cook) পশু শিকার করে তাজা মাংস খাইয়ে অভিযাত্রীদের স্কার্ভি রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন। আমুনসেনের ভবিষ্যতের অভিযানগুলোর জন্য এটা ছিল খুবই দরকারী একটি শিক্ষা।'

আমারও ইচ্ছে করে ঘুরে আসি দূর সমুদ্রে। কবিতায়। দেখে আসি চীন সাগরে মানুষের মুখের আদলের মুনিঋষি কাকড়াদের। কিন্তু সেটা তো হবে না। বড়বেশি ক্ষয় জ্বার শৃঙ্খলিত, তাহলে কামনার সাগরেই যুব দেই না কেন?

সমুদ্রে যেতে হলে রণজিৎ দাশ…..

আমার ইরাবতি ডলফিনগুলো ঘুরুক অবাধ। সেইসব ভাবছি ব্যালকনিতে দাড়িয়েঁ। সামনে বেলীদের বাড়ি। ওদের বাড়ির ২৮/২৯ ডিগ্রী ডানে হয়তো বর্ণালি বি ক্যাটাগরির একটা তারা। তাই ঊজ্জ্বল। অথবা ক্ষীণকায়। মনে হয়- এইমাত্র চোখ টিপ মারে। সেই কবে বেলীরা চলে গেছে অন্যপাড়ায়, হয়তো অন্য জেলায় অন্য দেশে, অন্যগ্রহে। তবু এখনো কত ঘ্রাণ। কতো টাটকা গৌতমবুদ্ধের দেশান্তরি হবার স্মৃতি। পুরো রাস্তা রিকসাঠাসা। টুংটাং। হে নগর, আমি সমুদ্র যাব। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ বললো, এইসব ধুকতে থাকা রিকসাগুলোকে শহুরে রাজহাসের স্বীকৃতি না দিলে ওরা আমাকে গভীর সমুদ্র মানে মহীসোপানে যেতে দেবে না।

বিদ্র: এই লেখার মূল চালিকা চক্তি কাট-কপি-পেস্ট। এর বেশি এর কোনো সীমাবদ্ধতা নাই।