অন্ধত্ব প্রতিরোধে সবার এগিয়ে আসা উচিত

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 21 March 2017, 08:31 AM
Updated : 21 March 2017, 08:31 AM

চোখ হচ্ছে মানুষের অমূল্য সম্পদ। বলা হয়ে থাকে, যার চোখে দৃষ্টি শক্তি নেই তার মত হতভাগ্য নেই। চোখ একটি স্পর্শকাতর সংবেদনশীল অঙ্গ, যার সাহায্যে আমার এ সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পাই, তার রূপ ও সৌন্দর্য উপভোগ করি। চোখে দেখতে না পাওয়াকে মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চোখের দৃষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। যাদের মধ্যে ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ পুরোপুরি দৃষ্টিহীন এবং বাকি ২৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষ স্বল্প দৃষ্টি কিংবা চোখের অন্য কোনো জটিল রোগে ভুগছে। এসব চোখের রোগীদের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি জানানোর জন্য প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্প্রতিবার 'বিশ্ব দৃষ্টি দিবস' হিসেবে পালন করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে সাড়ে চার কোটি মানুষ চরম মাত্রা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তথা একেবারেই দৃষ্টিহীন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ না নিলে ২০২০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। কারণ বর্তমানে প্রতি ৫ সেকেন্ডে একজন বয়স্ক মানুষ এবং প্রতি এক মিনিটে একটি শিশু অন্ধত্ব হয়ে বরণ করছে। সবচেয়ে চোখের সমস্যায় বেশি ভুগছে উন্নয়নশীল দেশের দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠি। উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ সব দেশের দৃষ্টিহীন মানুষের সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে। সূত্র: (ইন্টারনেট)
বাংলাদেশে চোখের রোগী ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা নেই বলে দাবি করে আসছে দৃষ্টিহীনদের উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), অরবিস ইন্টান্যাশনাল, সাইট সেভারস ইন্টারন্যাশনাল, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি (বিএনএসবি) সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু দৃষ্টিহীনতার শিকার । ২ বা আড়াই কোটি মানুষ চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভুগছে। সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা না করায় অকালে অন্ধত্ব বরণ করছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে বিশ্বের মানুষ চোখের যেসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে গুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ছানিপড়া রোগী। সাধারণত বয়স জনিত, আঘাত জনিত, ডায়াবেটিস রোগ, ইউভিআইটিস এবং অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে চোখে ছানি পড়ে।
চল্লিশ বা তদুর্ধ মানুষ প্রেসবাইওপিয়া রোগে ভুগছে। এটি যদিও চোখের কোন রোগ নয় তবুও বয়সজনিত কারণে চোখের গঠনগত পরিবর্তন হয়ে থাকে। ফলে একসময় যেকোন জিনিস ঝাপসা দেখে।
আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা মায়োপিয়া রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরনের রোগীরা কাছে মোটামুটি ভালো দেখলেও দূরে ঝাপসা দেখে। তবে যাদের চোখে ছয় ডায়াপটারের বেশি মাইনাস পাওয়ারের লেন্স লাগে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চোখের পাওয়ার বাড়তে থাকে, তখন তাকে প্যাথলজিক্যাল মায়োপিয়া বলা হয়। এটিও ভয়ঙ্কর। এটিকে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা ৭ নম্বর অন্ধত্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। সে ক্ষেত্রে প্যাথলজিক্যাল মায়োপিয়া বা হাই মায়োপিয়ায় চোখের দেয়াল পাতলা হয়ে যায় এবং রেটিনা ছিদ্র হয়ে পরবর্তীকালে রেটিনা আলাদা হয়ে গিয়ে অপূরণীয় দৃষ্টি শক্তির ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং মাযোপিয়া রোগীদের সব সময় চোখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নিতে হয় । কিন্তু এ রোগীদের চিকিৎসকের সংখ্যাও কম বাংলাদেশে।
গ্লকোমা রোগ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর চোখের রোগ। গ্লকোমা হলো বাংলাদেশ তথা পৃথিবীতে অনিবারণযোগ্য অন্ধত্ব তথা দৃষ্টিহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ। যে কোন বয়সে এ ভয়ঙ্কর চোখের রোগ হতে পারে।
এছাড়াও অ্যাসটিগমেটিজম,নেত্রনালী প্রদাহ, ভাইরাস জনিত কারণে চোখ ওঠা,কর্ণিয়ার আলসার বা চোখের ঘা, ইউভিয়াইটিস রোগসহ ট্যারা চোখের কারণে মানুষ সামাজিকভাবেও সমস্যার সম্মূর্খীন হয়ে থাকে।
চক্ষুগোলকের বাইরে ব্লফারাইটিস, টোসিস, চোখের অঞ্জলি ও চোখের মেওয়ার ফলে মানুষ এক ধরনের যন্ত্রণায় ভুগে থাকে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনও চোখের রোগের টোটকা চিকিৎসা ও ঝাঁড়-ফুক করে থাকে। যা কুসংস্কার। ফলে অনেকে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলছে।
অন্ধত্ব নিবারণে বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি, সাইটসেভারস্ ইন্টারন্যাশনাল, ওএসবি চক্ষু হাসপাতাল, ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু চক্ষু চিকিৎসক রোগীর তুলনায় কম। অনেক তরুণের চক্ষু চিকিৎসক হওয়ার আগ্রহ কম। কারণ, যন্ত্রপাতির ব্যয় বেশি, প্রতিটি হাসপাতালে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি না থাকা মূল কারণ।
অন্ধত্ব নিবারণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,শিক্ষক, সাংবাদিক, দানশীল ব্যক্তি, যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনেকে বয়স জনিত কারণে চোখের রোগে ভুগলেও পরিবার থেকে চিকিৎসা করা হয় না। বিষয়টির প্রতি সকলের সুদৃষ্টি কামনা করলি।

লেখক-
শিক্ষক ও ফ্রিল্যান্স লেখক
হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,
চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
মোবাইল নং-০১৭০৪২৪৪০৮৯।