ইন্টারনেটে ‘সেক্স’, ‘পর্নো’ খুঁজা শিশুদের নিয়ে পরিবার কতটা উদ্বিগ্ন হতে পারে ?

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 11 Jan 2011, 10:41 AM
Updated : 11 Jan 2011, 10:41 AM

বেশ কিছুদিন আগে ডয়েচে ভেলে রেডিও জার্মানের একটি খবর শুনেছিলাম। মনে হলো কিছু একটা লেখা দরকার। পত্রিকায় না হোক ব্লগে লেখাটা উচিত। তাই ব্লগিং করলাম।
১৮ বছরের কম বয়সিরা ইন্টারনেটে যেসব শব্দ অনুসন্ধান করেছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইউটিউব, গুগল এবং ফেসবুক৷ (ফাইল ফটো)২০০৯ সালে ইন্টারনেটে শিশুরা যে শব্দগুলো সার্চ করেছে তার মধ্যে অন্যতম 'সেক্স'৷ ইন্টারনেট নিরাপত্তা সংস্থা নর্টনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সিরা ইন্টারনেটে যেসব শব্দ অনুসন্ধান করেছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইউটিউব, গুগল এবং ফেসবুক৷ আর এরপরেই অবস্থান 'পর্নো' এবং 'সেক্স' শব্দ দুটির৷ নর্টন আরো জানিয়েছে, বাবামাদের জন্য এই সংবাদ বেশ উদ্বেগের এবং এটি রোধ করতে তাদের উচিত শিশুদের সঙ্গে কথা বলা৷ একইসঙ্গে সন্তানদের বোঝাতে হবে ইন্টারনেট থেকে কোন বিষয়টি নেয়া উচিত আর কোন বিষয়টি থেকে দূরে থাকা উচিত।
আমি দীর্ঘ একটি বছর ইউনিসেফ এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক 'ব্যাসিক সোসাল সার্ভিসেস ট্রেনিং ফর সোসাল ওয়ার্কার' বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণ থেকে আর্থিকভাবে হলেও কিছুটা যেমন উপকৃত হয়েছি ঠিক তেমনি শিশুদের সম্বন্ধে কিছুটা জানতে পেরেছি। শিশুরা পবিত্র। শিশুদের জানার কৌতহুল রয়েছে। স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। প্রশিক্ষণে জানতে পেরেছিলাম যে, শিশুদের যৌন শিক্ষা দেওয়াটা বাবা-মায়ের উচিত। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করলেও উত্তর দিতে পারি নি। কারণ, প্রশিক্ষণার্থী এবং প্রশিক্ষকরা ছিলেন নারী। উন্নত বিশ্বে নাকি শিশুদের যৌন শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে তাদের আগ্রহ কম থাকে সেক্স বিষয়ে। বাংলাদেশের মত উন্নত বিশ্বে এটা অসম্ভব। ধর্মীয় গ্রন্থে এটাকে কবিরা গুনাহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিমা বিশ্বে যত বেশি পাড়ি জমাচ্ছে তত পশ্চিমা বিশ্বের সাংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে পারছে। যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। মুক্ত আকাশ সাংস্কৃতির প্রভাবতো আছেই। এরফলে আমাদের দেশের শিশুরা অকালে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাবা-মা শিশুদের অকপটে বলে ফেলছে তুমি কি বাবা কারো সাথে প্রেম করো। তোমার কি কাউকে পছন্দ কর? বাবা-মাও লজ্জা হারিয়ে ফেলেছে।
বনানীল কামাল আতার্তুকে রেডিও টুডের অফিসে একদিন যাচ্ছিলাম। দেখলাম ১৫ থেকে ১৬ বছরের এক সুন্দরী কিশোরী কালো অরুচিশীল ড্রেস পড়ে এল, তার সমবয়সী প্রেমিকা তাকে শত শত মানুষের সামনে জড়িয়ে ধরলো। তারপর এক জায়গায় খোশ গল্প শুরু করলো। জানি না ওদের মা-বাবা কি এ ঘটনা জানে। নাকি জেনেও না জানার চেষ্টা করে। আজকাল ইভটিজিং বেড়েই চলেছে। তবে যারা রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে তারাই বেশি কষ্ট অনুভব করে। ইভটিজারদের কারণে আত্বহত্যা করে।
কিন্তু তারা প্রগেসিভ মাইন্ডেড পরিবার। বাবা-মা একসাথে মুক্ত সাংস্কৃতি উপভোগ করে। এক সাথে স্ত্রী, ছেলে মেয়েকে নিয়ে ক্লাবে আড্ডা দেয়। মদ খায়। তাদের মেয়েদের কাছে ইভটিজিং নাথিং। কারণ, তারা মনে করে সুন্দরীর দিকে যদি তরুণরা না তাকায় তবে সুন্দরভাবে ড্রেসআপ করা হয়েছে কি না বা রূপ-লাবণ্যে ঝলক দিচ্ছে কি না তা বুঝা যাবে না। একবার অনলাইন ভিত্তিক এক ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম, আজকাল অনেক সুন্দরী মেয়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের সামনেই পরপুরুষের সাথে খোশগল্পে লিপ্ত থাকে। ঢাকা শহরে এ সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আজকাল শিশুরাও তাদের প্রেমিক-প্রেমিকাকে নগ্ন ভিডিও দেখায়। ওগুলো দেখে শিশুরাও মজা পায়।
কিন্তু আমাদের সমাজ কি ভেবে দেখেছে যে, আমাদের শিশুরা কোন পথে ধাবিত হচ্ছে। তাদের নৈতিক অবক্ষয় কেন ঘটছে? এর জন্য কে দায়ী? দায়ী যেমন সমাজ তেমনী দায়ী পরিবারও। গারো কমিউনিটির আমার এক কলিগ একদিন আমাকে বলল, আমার ১৬ বছরের ভাতিজিকে আমি প্রেম করতে বলি। কারণ, তার যা খুশি সে তা করবে। শুধু আমার ওই সহকর্মী নয়, মুসলিম সমাজের হাজার হাজার মানুষ এসব অশ্লীল কৃষ্টি কালচারে ধাবিত হচ্ছে। এদের রক্ষা করার উপায় এখনও খুজে বের করা যাচ্ছে না।
আবার ফিরে আসি পূর্বের কথায়। ট্রেনিং এ ট্রেইনার অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্ন করেছিল। আপনার একজন ১৪ বছরের সুন্দরী মেয়ে আছে। পাশের বাড়ির দাদু গতকাল তার স্তনে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। আপনি এখন কি করবেন? আমি এর উত্তর খুজে পায় নি? এসব কথা প্রশিক্ষণে শোনার পর ভেবেছি। দেশক একশ্রেণীর এনজিওরা ফ্রি সেক্সের দেশ বানাতে চায়। কিন্তু সেটা বিভিন্ন কৌশলে করতে হবে। শিশুদের মাঝে পশ্চিমা কৃষ্টি কালচার ছড়িয়ে দিতে পারলে হয়ত: আমাদের সমাজকে ধব্বংশ করা সম্ভব। তা না হলে এদেশের মানুষ বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবেই।
আসুন আমরা আমাদের শিশুদের ইন্টারনেটে 'সেক্স' পর্ণো' খোজা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করি। তাদেরকে ধর্মীয় অনুশাসনের দীক্ষায় দীক্ষিত করি। তা না হলে তাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটবে। তার পরিণতি প্রতিটি মানুষকে ভোগ করতে হবে। নগর পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়? আপনার শিশুর কাছ থেকে আমার শিশুও শিখবে। তারপর যা হবার হবে………………………………।