ট্রাফিক পুলিশের রেকার বানিজ্য বন্ধ করতে হবে!

বাংগাল
Published : 9 July 2014, 09:33 PM
Updated : 9 July 2014, 09:33 PM

ডিএমপি ট্রাফিক উইং ঢাকা শহরে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেও উল্লেখ যোগ্য শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি । এটা তাদের পরিকল্পনা গত ত্রুটির কারনেই হোক , আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জ্ঞানের ঘাটতিই হোক ,  অপরিসর সড়কের জন্যই হোক বা দুর্নীতি করার জন্য ইচ্ছাকৃতই হোক, সবকিছুর পর ফলাফল একটাই, তা হচ্ছে  ডিএমপি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় চরম ব্যর্থ হয়ে রাজধানী শহরকে অচল করার জন্য প্রধান ভূমিকা রেখে চলেছে ।

ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আমরা নাগরিকরা ও কম দায়ি নই । আমরা যখন যে বাহনে চড়ে   চলাফেরা করি তখন সে বাহনের চালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলার পরামর্শ বা আদেশ তো দেই-ইনা বরং অনেক ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য চালককে ট্রাফিক আইন অমান্য করে অন্যায় পথে যাবার জন্য উৎসাহিত করি ।

আমরা নাগরিকরা যখন পাবলিক বাসে চড়ি তখন বাসচালকের বেপরোয়া গাড়ি চালনায় তাকে নিবৃত করিনা, এতে করে প্রায়ই নগরবাসী বাসের চাকায় পিস্ট হয়ে প্রান দিয়ে যাচ্ছে , বাসের চাকায় পিস্ট হবার তালিকায় যে আজকের বাসযাত্রীদের মধ্য থেকে কারো নাম লেখা হয়ে যাবে তা ভেবে আমরা বাসচালককে কেন থামাচ্ছিনা ?

আমরা রিক্সায় যখন চড়ব তখন দুনিয়া যেদিকে যায় যাক, আমাকে সবার আগে যেতে হবে ভেবে রিক্সা চালককে উৎসাহ দিতে থাকি সব চুরমার করে এগিয়ে যেতে । রিক্সাচালকের অন্যায় ঝগড়ায় নিজেরাও সামিল হয়ে যাই ওর পক্ষ নিয়ে । রিকশা চালকের সঙ্গে আমরাও রিকশার সিটে বসে বলতে থাকি ঢাকা শহরের আসল সমস্যাই হচ্ছে "পেরাইবেট" । এই "পেরাইবেট" ওয়ালারা একজনের জন্য রাস্তার এত যায়গা দখল করে রাখে, ঐ পরিমাণ যায়গায় তিনটি রিকশায় ছয় জন চলতে পারে।

আবার আমরাই যখন ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে রাস্তায় বের হই , তখন মনে হয় এই রিক্সাগুলো যে কেন সরকার বন্ধ করে দেয়না, যানজটের প্রধান কারনই এই নচ্ছাড় রিকশাগুলো, এদের কমিয়ে সংখ্যায় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারলে ঢাকাবাসী একটু শান্তিতে রাস্তায় চলতে পারত। গাড়ীতে বসে আশ পাশ দিয়ে ফুড়ুৎ ফারুত চলে যাওয়া রিকশা গুলোকে রক্ত চক্ষু দেখিয়ে শাসাতে থাকি। ঐ ব্যাটা, রং সাইড দিয়া আইলি ক্যান? একদম..! চিনছ আমারে? আমরা নগরবাসি এভাবেই চলছি ঢাকার রাস্তায় দিন মাস বছর ।

এবার আমি শিরোনামের বিষয়বস্তুতে আসি । আমার একটি ব্যক্তিগত ব্যবহার্য গাড়ী থাকলেও ঢাকার রাস্তায় বিশেষ না ঠেকলে গাড়ীতে চলাচল করিনা । রিকশায় আমি আরাম এবং নিশ্চিন্ত বোধ করি । দীর্ঘ দিন যাবত ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার করে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে মোটামুটি যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে গিয়ে তাঁদের বানিজ্য সম্পর্কে একটা ধারনা হয়েছে,  সেরকম অভিজ্ঞতাই এখানে উল্লেখ করতে যাচ্ছি । গতকাল মঙ্গলবার পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসপাতালের পারকিং এ গাড়ী রেখে হাসপাতাল থেকে বের হবার ১০ মিনিট আগে ড্রাইভারকে গাড়ী বের করে গ্রিন রোড সিগনালে ইউটার্ন করে স্কয়ার হাসপাতালের বিপরীত দিকের রাস্তায় আসতে বলি । সময় বাঁচানোর জন্য আমরা রাস্তা পার হয়ে পান্থপথের দক্ষিন অংশে চলে আসি পায়ে হেঁটে । এসেই দেখি ড্রাইভার একজন ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে খুব কাকুতি মিনতি করে বলছে,  আমি এক মিনিটও দাঁড়াইনি, স্যার আমি এখুনি চলে যাচ্ছি । অদূরেই একটি রেকার বা টোয়ার, যাই বলি, দাঁড়ানো । ড্রাইভারকে ট্রাফিক সার্জেন্ট বলছিল, রেকার লাগিয়ে গাড়ী এখন থানায় নিয়ে যাব । এ সময় আমি এসে সার্জেন্টকে জিজ্ঞাসা করলে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, ধরেই যখন ফেলেছি ইনস্ট্যান্ট ফাইন দিয়ে চলে যান । আমার পূর্ব অভিজ্ঞতায় আমি জানি থাবা যখন দিয়েছে থাবা ভরেই নিয়ে যাবে, নিস্তার নেই । রোজা রেখে খাড়া দুপুরের (২টা) খরায় তার সঙ্গে তর্ক করার রুচি হলনা ।

১৫০০ টাকা দিয়ে স্লিপ নিয়ে রেহাই পেলাম । বর্তমান আইনে যা ফাইন হবে তার অর্ধেক সার্জেন্ট পাবে । কথা বলার কোন সুযোগ নেই, আইনের লোকের এক কথা। মনকে বুঝালাম, মনরে,  জাকাতের হিসাব থেকে ১৫০০ টাকা বাদ দিয়ে দাও । প্রশ্নসাপেক্ষ, উনি জাকাত পাবার যোগ্য কিনা । বলে রাখছি , এটা আমার প্রথম অভিজ্ঞতা নয় । চারদিকে দেখলাম আরও ১০/১২ জন ড্রাইভার রেকারের ড্রাইভারের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন , আরেকজন সহকারি কানে কানে সার্জেন্টের কাছে টাকার অংক শুনিয়ে যাচ্ছে , দফা রফা হচ্ছে ।

উল্লেখ্য, এটা নো পারকিং জোন নয়, কোথাও নো পারকিং সাইন নেই । সময়টাও নো পারকিং আওয়ার নয় । সরকারি রাস্তায় গাড়ী না দাঁড়ালে আরোহীর ওঠানামার প্রয়োজনে কোথায় দাঁড়াবে। গাড়ী নিয়ে রাস্তা ব্যবহার করার জন্য একবার থোক ট্যাক্স দিয়ে গাড়ী কিনেছি, উপরন্তু প্রতি বছর ট্যাক্স দিয়েই রাস্তায় গাড়ী চালাচ্ছি ।

বাস মিনিবাস লেগুনা এখন আর যাত্রী উঠা নামার জন্য রাস্তার কিনারে থামেনা, পিছনে যত গাড়ীই থাকুক , একেবারে রাস্তার মাঝ বরাবর ওদের যতক্ষণ প্রয়োজন দাঁড়িয়ে থাকবে । ট্রাফিক সার্জেন্ট তখন রিকশা বা অটো রিকশায় বহন করা মালামাল পরীক্ষা করে বানিজ্যে ব্যস্ত । বাস মিনিবাস লেগুনা ড্রাইভার এমনকি হেল্পার কন্ডাক্টরের সঙ্গে ট্রাফিক সার্জেন্ট এবং ট্রাফিক কনস্টেবলদের বেজায় ভাব, অনেকটা দোস্ত বন্ধুর মত ওদের ব্যবহার ।

পার্শ্ববর্তী দোকানের লোকজন বলাবলি করছিলো,  এটা রমজানের বানিজ্য , প্রতিদিন এখানে গড়ে ৫০টি গাড়ি থেকে কয়েক হাজার টাকা তুলে ১- ২ ঘন্টার বানিজ্য করে মোটা টাকা নিয়ে যায় । ১০০ গজ পশ্চিমে দুই তিনটা বাস পান্থপথের অর্ধেকের বেশী যায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে, এখানে রেকার আসেনা, মাসিক চুক্তি !  ৩০০ গজ পশ্চিমে এলেই একটি নামকরা ঔষধের দোকানের সামনে প্রধান সড়কের (মিরপুর রোড ) উপর ৩/৪ সারি গাড়ী রাস্তার উপর ২৪ ঘন্টা থাকবে, কোন দিন এখানে রেকার আসবে না, মাসিক চুক্তি ।

ধানমন্ডি ২ নং সড়কে কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ২/৩ টা করে গাড়ী রাস্তায় ওদের নিরাপত্তা কর্মীর দেখভালে রাখা হয়।  সিটি কলেজের দিক থেকে ঝিকাতলার দিকে যাবার রাস্তাটি মনে হয় ডায়াগনস্টিক ওয়ালারা কিনেই নিয়েছে । এখানে রেকার আসবে না, মাসিক বিপুল অংকের চুক্তি ট্রাফিক বিভাগের সাথে। একটু এগিয়ে গেলেই একটি কাবাবের দোকানের সামনে যাবেন, একটা রিকশা চলার মত যায়গাও থাকে না, এখানে রেকার আসবে না, মাসিক চুক্তি ।

নীল ক্ষেত মোড় থেকে সাইন্স ল্যাব পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তিন চতুর্থাংশ রাস্তা  বন্ধ করে টাকার বিনিময়ে পারকিং করা যায় । এখানে প্রধান সড়কের উপর পাশাপাশি ৪টি গাড়ী রাখলেও সমস্যা নেই। জীবনে কোন দিন দেখিনি এখানে রেকার এসেছে বা সার্জেন্ট এসে ড্রাইভারকে ভয় দেখাচ্ছে । বিপুল বানিজ্য ট্রাফিক বিভাগের ।   এগিয়ে যান মিরপুর সড়ক ধরে , আসাদ গেট ক্রসিং পর্যন্ত প্রতিটা মার্কেটের সামনে অর্ধেকের বেশী রাস্তা দখল করে ঘন্টার পর ঘন্টা সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে । সার্জেন্ট- রেকার এখানে আসবেনা , মাসিক বিপুল অংকের চুক্তি ।

মতিঝিল , গুলশান বনানি বাদই রইল । সার্জেন্টদের আচমকা ইনকামের দরকার হলেই চিপা চাপায় হানা দিয়ে ২/ ৩ ঘন্টায় বানিজ্য , পকেট ভরে বাসায় গিয়ে ঢেকুড় । তবে ব্যতিক্রম ট্রাক ড্রাইভার হেল্পার সম্প্রদায় , অত্যাচারের সীমা অতিক্রম করে গেলে   বিরক্তির চরমে পৌঁছে ওরা মটর সাইকেল সহ পিষে দেয় , সাধারন মানুষের সহানুভূতি তখনও ট্রাক ড্রাইভারের প্রতি বেশীই থাকে ।

অভিযোগ যতটা সম্ভব সৌজন্যতা বজায় রেখে প্রকাশের চেষ্টা করলাম । এরপরও পোস্টটি  পুলিশ সম্প্রদায়ের কোন  সদস্যের মনে  কষ্ট দিয়ে থাকলে দুঃখিত ।