সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ- উদযাপন না তামাশা?

বাংগাল
Published : 28 July 2014, 05:24 AM
Updated : 28 July 2014, 05:24 AM

বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় আজ সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপন হবার কথা। বেশ কয়েক বছর ধরেই শুরু হওয়া বিষয়টি এখন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে, এমন কি সম্ভবত ছোঁয়াচে ব্যাধির মত খোদ রাজধানী ঢাকা শহরের দু একটি এলাকায় শাওয়াল মাসের এক তারিখ ঈদ উদযাপন না করে রমজান মাসের ২৯ বা ত্রিশ তারিখেই ওরা সকাল বেলা ঈদের নামাজ পড়ে হাস্যকর ভাবে কোলাকুলি শুরু করে দেয় । ওরা ঈদের নামাজ পড়ে বাড়ীতে এস দেখে বাড়ীর অন্য কোন সদস্য হয়তো ত্রিশ তম রোজা পালন করছে । বিষয়টি হচ্ছে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা শুরু করা এবং রোজা শেষে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন না করলে ওদের মতে কোন কিছুই শুদ্ধ হবেনা । বাংলাদেশের মানুষের ধর্মপ্রাণ হবার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর পীর নামধারি ধর্ম ব্যবসায়ি গোষ্ঠী মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা পালন করাকে বিতর্কিত রুপ দিচ্ছে ।

আজ সোমবার যেহেতু সৌদি আরবে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে , তাই বরাবরের মত এবারও দক্ষিন চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলার ৩০ টি গ্রামে আজ ঈদ উদযাপিত হবে । পটুয়াখালির ২২টি গ্রামের ৫০০ এর অধিক পরিবার এবং শরিয়ত পুরের ডামুড্যা উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে আজ সোমবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে । চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ সহ চারটি উপজেলার মট ৪০ টি গ্রামে আজ সোমবার ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে । এর বাইরেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পীর-আক্রান্ত অনেক এলাকার শত শত পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছে ।

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনকারিদের আজকের সংখ্যাটি কিন্তু আজ থেকে দশ পনেরো বছর আগে এক দশমাংশের বেশী ছিলনা । সচেতনতার অভাবে আজ এ সমস্যা এভাবে মহামারির রূপ ধারন করেছে ।

এভাবে চলতে থাকলে, দেশে যে হারে পীর -কামেলের সংখ্যা এবং মতলববাজ অনুসারির সংখ্যা বেড়ে চলেছে অচিরেই দেশে ঈদ উদযাপনের তারিখ নিয়ে দাঙ্গা ফ্যাসাদ শুরু হওয়া বিচিত্র নয়।

এ বিষয়ে সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের ঘুম কবে ভাঙ্গবে ? দেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা মাদ্রাসার আলেম সম্প্রদায় মুখে কেন কুলুপ এঁটে আছে , চিন্তার বিষয় । কথায় কথায় ফতোয়া জারি করা ইসলামি চিন্তাবিদ , আল্লামা শায়েখ খেতাব বহনকারি ওস্তাদদের মুখেও বোধগম্য কারনেই কুলুপ এঁটে দেওয়া আছে ।

এ সমস্ত পীর কামেল নামধারি ধর্ম ব্যবসায়িরা ইসলাম ধর্ম অনুসারি বিপুল জনগোষ্ঠীর এদেশে ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত করে যাচ্ছে , এদের সুপথে ফিরিয়ে আনা এখন আর সহজ কাজটি নয়। সরকার যদি এখন ই উদ্যোগ নিয়ে বিষয়টির সমাধান না করে তবে এমন সময় আসবে ঈদ উদযাপন নিয়ে এদশের মুসলমানরা ইরাক ইরানের শিয়া সুন্নি বিভেদের মত অবস্থায় উপনীত হতে বেশী সময় লাগবেনা ।

আমার প্রশ্ন,
(১) সৌদি আরবে ইফতার হয় আমাদের দেশে যখন রাত ১০টা । সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনকারীরা রাত ১০টায় ইফতার করেন না কেন? মাগরিব নামাজ কেন রাত ১০টায় পড়েন না ?

(২) সৌদি আরবে ফজরের ওয়াক্ত হয় তখন, যখন আমাদের দেশে সকাল ৮টা , তাহলে  সকাল ৮টায় ফজর নামাজ আদায় করা হয় না কেন? ?

(৩) আমাদের দেশে যখন সকাল ৭টা বাজে তখন সৌদি আরবের সেহেরির সময়,  তাহলে কি আমরা সকাল ৭টায় সেহেরি কবর?

মিডিয়ার কথা একটু বলে শেষ করি । টক শো করে প্রতিটা চ্যানেল বহু স্বঘোষিত আতেল দেশবাসিকে উপহার দিয়েছে । আমরা দেশবাসী এই বিষয়টির উপর ধারাবাহিক টক শো দেখতে চাই । পীর উপদ্রুত এলাকার সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ গুলো কে সত্য জানানো যায় এমন ব্যবস্থা টিভি চ্যানেল গুলোর করা উচিত ।

সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নিয়ে এর সুরাহা করা উচিত । ইসলাম ধর্মের লোকাল এজেন্ট , বেহেশতের টিকিট বিক্রয়ের ডিলার অনেক পীর কামেল বুজুর্গ এমনকি নিজেদেরকে দেশের মুরুব্বি বলে জাহির করতে লজ্জা পায়না এমন বিজ্ঞ ব্যক্তিদের টিভিতে টক শো করতে দেওয়া হোক এ বিষয়ের উপর । দেখি তিনারা কি বলেন এ ব্যপারে ।

সবাইকে আমার তরফ থেকে অগ্রীম ঈদ মোবারক ।