ব্লগার অভিজিত নিহত হয়েছেন কট্টরপন্থীদের চাপাতির কোপে কয়েকদিন আগে । মারকিন মুল্লুক থেকে চারজন এফবিআই সদস্য আজই ঢাকা এসে পৌঁছেছেন অভিজিতের হত্যাকারিদের পাকড়াও করতে ।কারণ অভিজিত হলেন ভিভিআইপি , মার্কিন নাগরিক !!
এর আগে বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পরও তদন্ত করতে বাংলাদেশে এসেছিল এফবিআই এর বিশাল তদন্ত দল । অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি বিডিআর সদর দপ্তরে সেট করে উনারা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্ত করেছেন !! কারণ ঐ সময় সরকারের বিরুদ্ধবাদিরা তারস্বরে চ্যাঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিলো , আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই ! আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই!! কি আর করা, এফবিআই একাইতো "আন্তর্জাতিক" বটে !!! ওরা কি তদন্ত করেছে বিডিআর হত্যাকান্ডে, আল্লাহ মালুম ।
এখন আমরা বাঙ্গালী জাতি যে কোন কিছুতেই আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই , নির্বাচন হয় বাংলাদেশের শহরে গ্রামে গঞ্জে । কিন্তু আমরা বলি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হয়না । মহল্লায় মহল্লায় কিশোর তরুণদের মারামারির বিচার শালিশ হলে ওখানেও দাবি ওঠে আন্তর্জাতিক মানের শালিশ হতে হবে । আজকালকের চ্যাংড়া পোলাপান ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে বন্ধুদের দেখালে মন্তব্য করে – কি ছবি তুলেছিস ব্যাটা , আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়নাই !!
যাহোক , উপরে যা লিখেছি তা আমার আসল বক্তব্য নয় । গত ৫ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত বেগম জিয়া তার ক্ষমতারোহনের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করিয়ে ১০২ জন মানব-মানবি ও শিশু (কেউ ভিভিআইপি?? নয়) আগুন দিয়ে পুড়ে মেরেছে ।মানুষ পুড়ে মারা শুরু করার পর থেকে কয়েকবার ইউরোপীয় ও মার্কিন দেশের কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন , মানুষ মারা বন্ধ করতে পারেননি ।ঐ যে ১০২ জন মানব সন্তান আগুনে ঝলসে মরে গেলো এদের মধ্যে একজনের জীবনও কি অভিজিতের মত মুল্যবান ছিলনা ?।যদি ওরা অভিজিতের থেকে নিচুজাতের বা নিচুমানের অচ্ছ্যুত মানুষ হয়ে থাকে তাহলে তা কিসের মাপকাঠিতে ?
১০২ জন মানুষ কাবাব হয়ে গেলো ,বাংলাদেশের পুলিশ একটার তদন্ত শুরুই করলোনা কারা আগুন দিয়ে দিনে দুপুরে মানুষগুলো পুড়ে মেরে ফেলছে । একই দেশে একজন বিশেষ মানুষকে মেরে ফেললো ঐ একই ঘরানার হত্যাকারিরা , বাংলাদেশের পুলিশ লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সাথে সাথে এফবিআই এর চেয়ে নেওয়া দাওয়াত মঞ্জুর করে দিল ।বাংলাদেশের পুলিশ কি তাহলে শুধু সাংবাদিক আর ক্যমেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের চেহারা দেখানোর আর নিজেদের প্রসংসা নিজেরাই করার চাকুরী করেন ? লজ্জা হওয়া উচিত পুলিশ বিভাগের , আমার দেশে ঘটনা ঘটবে আর আরেক দেশের পুলিশ বলবে ,তদন্ত আমরা করবো , আর এরুপ লজ্জাজনক প্রস্তাব মুহূর্ত বিলম্ব না করে মাথা পেতে নিবো ? লজ্জা ছাড়া আর কি ?
পুলিশ বিভাগে যদি কোন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন বাপের ব্যাটা থেকে থাকেন , বুক ফুলিয়ে এফবিআই এর এই চার সদস্যকে বলুন, অভিজিতের হত্যার তদন্ত শেষ করে ১০২ জন আগুনে পোড়া মানুষদের সবার দরকার নেই , শুধু , শুধুমাত্র ৭ টি নিস্পাপ শিশুর পুড়ে মরার ঘটনা তদন্ত করে দয়া করে রিপোর্ট দিয়ে যান ।
এফবিআইয়ের জন্য ক্লু ১ )– প্রত্যেক শুক্রবার এবং বুধবার সংবাদ পত্রে নিজ স্বাক্ষর সহ বিবৃতি পাঠিয়ে সালাউদ্দিন নামে বিএনপির একজন নেতা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারার হরতাল ডেকে দিব্বি চালিয়ে যাচ্ছেন মানুষ পুড়ে মারা । আমাদের পুলিশ এতো "ইফিশিয়েন্ট " যে দুই মাসে সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে পাকড়াও করতে পারেনা , যার স্বাক্ষরে-নির্দেশে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মারা হচ্ছে ।
ক্লু ২) সাদেক হোসেন খোকা , যিনি চোরাগুপ্তা হামলা শুরু করার কথা বলে মার্কিন দেশে গিয়ে খোদ এফবিআই সাহেবদের হেড অফিসের কাছে বসেই রাজনৈতিক সভা চালিয়ে যাচ্ছেন ।বাংলাদেশের টিভি রিপোর্টারদের কাছে সাদেক হোসেন খোকার চোরাগুপ্তা হামলার নির্দেশ দেওয়া সংক্রান্ত ফুটেজ আছে , এফবিআই সাহেবদের দেখিয়ে দিন । অভিজিতকে কুপিয়ে মারার দুই দিন আগের "মান্না-খোকা ফোনালাপ" ইংরেজিতে তরজমা করে এফবিআই কে শুনিয়ে দিন পুলিশ ভাইয়েরা , এতে আপনাদের "ইফিসিয়েন্সি" বেড়ে যাবে ।
এফ বি আই এর সদস্যদের কাছে আকুল আবেদন , অন্তত একটি জীবন্ত মানুষ, যার নাম সালাউদ্দিন , যার নির্দেশে দুই মাস ধরে দিনের আলোতে মানুষ মারা হচ্ছে রাজপথে , তার হদিস আমাদের পুলিশকে জানিয়ে যাবেন , অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত করে !! এইটুকু দয়া করুন আমাদের "ইফিশিয়েন্ট" পুলিশ বাহিনীর জন্য !!
দুইজন মানুষকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলছে পুলিশের চোখের স্যামনে , পুলিশ মনে করছে দাম্পত্য কলহ !! আহহ , পুলিশদের দাম্পত্য কলহ বুঝি এমন ??
জাতীয় লজ্জা !!!