জাত গেল জাত গেল……….গানটি প্রখ্যাত গীতিগুরু লালন শাহ্ সমাজে যাদের প্রতি বৈষম্য দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আজ থেকে বহু বছর আগে বিবেকের তাড়নায় লিখেছিলেন, সমাজের সেই অস্পৃশ্য দলিত শ্রেনীর মানুষ আজ এই একাবিংশ শতাব্দীতে এসেও তার প্রতিবেশী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ সকল জায়গায় বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছে। সরকারের অনেক অর্জন ও ভাল অনুশীলনের মধ্যেও দলিতদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ এবং সংবিধান সংরক্ষিত মানবাধিকারসমূহের নিশ্চয়তা প্রদানে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি। বেশ কিছু বাঁধা ও চ্যালেঞ্জ দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার উপভোগের সমসুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারা প্রধানত শিা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানে বৈষম্য; দারিদ্র, বাঁধা শ্রম ও শিশু শ্রমের শিকার হয়ে থাকে।
অধিকাংশ দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। একটি স্টাডিতে দেখা যায় যে, ৬৪ শতাংশ হিন্দু ধর্মালম্বী দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য এবং ৬১ শতাংশ ইসলাম ধর্মাম্বলী দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য নিরর। ৮০ শতাংশেরও বেশী দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় বৈষম্যের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে। কিছু দলিত সম্প্রদায়ের শিশুর অভিবাবক শিশুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে শিক কর্তৃক অনুৎসাহিত করার অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে। উচ্চ বিদ্যালয় বা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পরও সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে তারা কোন চাকুরী পায় না, এমন কি নিম্নস্তরের কাজও পায় না, যা তাদেরকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে প্রায়শঃ অনুৎসাহিত করে। নিম্ন শিক্ষার হার দলিত সম্প্রদায়ের উন্নয়নে প্রধান বাঁধা এবং তাদের গতানুগতিক পেশা পরিবর্তন করে নতুন পেশা গ্রহনে বাঁধার সৃষ্টি করে।
অধিকাংশ দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য নিম্ন বেতনে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সুইপার বা কিনার হিসেবে নিয়োজিত। কোন দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য যদি তাদের গতানুগতিক পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশা গ্রহন করে বা আন্ত: জাত বিয়ে করে বা তাদের সম্প্রদায়ের প্রচলিত নিয়ম কানুন পরিবর্তনে সোচ্চার হয় তবে তারা নিজ সমপ্রদায়ের মধ্যেও বৈষম্যের শিকার হন। যদি তারা কোন ভুলের কারনে দুর্ভোগের শিকার হন, তবে তবে তারা সাধারনত আইনের দৃষ্টিতে সমআচরণ পায় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়, যা অনেক সময় স্বেচ্ছাচারী অথবা বৈষম্যের ভিত্তিতেও হয়ে থাকে।
দলিত সমপ্রদায়ের সদস্যদের সাধারনত তাদের কলোনীর বাইরে বাড়ী ভারা দেওয়া হয় না। তাদেরকে নিয়মিতভাবে ধর্মীয় উপাসনালয়, চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট, বাড়ী, খেলার মাঠ, নাটক, সিনেমা, সামাজিক সভা সমাবেশ ইত্যাদিতে প্রবেশে বাঁধা প্রদান করে। তা অনেক সময় অপহরন , ধর্ষন, নির্যাতন, বসতবাড়ী ভাংচুর, লুটপাট, বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ, ভুমি গ্রাস, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মত চরম মানবাধিকার লংঘনের শিকার হয়।
তাই দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্যসহ সকল মানবাধিকার লংঘনকে সরকার কর্তৃক এখনি চিহ্ণিত করে তা দূরীকরণে তরিৎ ব্যবস্থা গ্রহন করে দলিত সমপ্রদায়ের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট আইন প্রনয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের সুরা প্রদান করতে হবে।