দলিতদের প্রতি বৈষম্য: জাতির জন্য অশনি সংকেত

শাহানূর ইসলাম সৈকত
Published : 15 July 2012, 08:15 AM
Updated : 15 July 2012, 08:15 AM

অধিকাংশ মানবশিশু অসীম সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। এমন কি গড়ীব পরিবারে যে শিশু জন্ম গ্রহন করে সেও তার পিতা মাতার আর্থিক অবস্থার চেয়ে উন্নতর অবস্থা অথবা অন্তত তা থেকে অন্য অবস্থায় জীবন ধারনের স্বপ্ন দেখার অধিকার রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের দলিত পরিবারের সন্তানের ক্ষেত্রে সে স্বপ্ন আকাশ কুসুম কল্পনা বলে মনে হয়। যদি কোন শিশুর পিতা ঝাড়ুদার হয় তবে সে শিশুটিও যে বড় হয়ে ঝাড়ুদার হবে এটাই যেন কার চরম নিয়তি। তেমনি নাপিতের ছেলেকে বড় হয়ে নাপিত এবং মুচির ছেলেকে বড় হয়ে মুচি হিসেবে দেখতে পাবেন।

কিন্তু দলিতদের কাজের নিরাপত্তা ও জন্মগত দক্ষতার কারনে আমাদের দেশের মত এই গড়ীর দেশে তাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমিত প্রবেশাধিকারের কারন কি বা কি ভুলের কারনে তাদের কাজের নিরাপত্তা নেই বা জন্মগত দক্ষতার বাহিরে বেরিয়ে আসতে পারছে না? সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের চোখে তারা "অচ্ছুত" এই মনোভাবই প্রধান কারন বলে প্রতিয়মান হয়। একজন দলিত হিসেবে তারা প্রতিনিয়ত তাদের দৈনন্দিন জীবনে সমাজের মানুষের নিকট থেকে তাচ্ছিল্লের শিকার হয়।

স্বাভাবিত ভাবে বেঁচে থাকা ও বেড়ে উঠার জন্য সমাজের তথাকথিত বাসস্থান, খেলার মাঠ, চায়ের দোকান অথবা কবরস্থান বা শশান যেখানে সবায় প্রবেশ করতে পারে কিন্তু সেখানে দলিতরা প্রবেশ করতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। যে বাড়ীতে নতুন শিশু জন্ম গ্রহন করে অথবা বিয়ে বাড়ীতে সকলের সহজ প্রবেশাধিকার থাকলেও দলিতরা পারে না। এমন কি দলিতদের অনেক টয়লেট ব্যবহার এবং তাদের শিশুদের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকার করা হয়। সমাজের সংখ্যাগড়িষ্ট জনঅংশের কেউ বাজার বা মার্কেটে যদি কোন দলিত সদস্যের দেখা পায় তবে সাধারনত তাকে বাজারের ব্যাগ তার বাড়ী পর্যন্ত বহনের নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশে বসবাসরত মুসলিম এবং হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে জাত বৈশম্য, নিম্ন সম্প্রদায়ের প্রতি অষ্পৃশ্যতা ও তাদের বর্জনের মত সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। এই তথাকথিত নিম্ম জাতের দলিত সম্প্রদায়ের সংখ্যা অনুমানিক ৩.৫ থেকে ৫.৫ মিলিয়ন। দলিতদের নিষ্পেশনের বিষয়টি এতটাই সহজাত যে নিষ্পেষনকারী ও নিষ্পেষনের শিকার উভয়েই তার গভীরতা জানেন, কিন্তু তা কখনো সঠিকভাবে নথিবদ্ধ হয় না বা জনসম্মূখে প্রকাশের আড়ালেই থেকে যায়।

বাংলাদেশে জাত-পাত, অস্পৃশ্যতা ও কর্মভিত্তিক বৈশম্য এত ব্যপক হওয়া সত্বেও যারা এ বিষয়ে চর্চা করে বা রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে এ বিষয়ে খুব কমই প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে সকল প্রকার বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবে তার কার্যকরন নেই বললেই চলে। এমন কি সরকার পরিচালিত বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানেও বৈশম্য বিদ্যমান রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ যখন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংগনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সদা সচেষ্ঠ, তখন দেশে আন্তর্জতিকভাবে উদ্বেগিত শিশুশ্রমের অনুশীলন সম্প্রশারনশীল এবং জাতিগত বৈশম্য অনুশিলনে রাষ্ট্র পরোভাবে ইন্ধন দিয়ে চলেছে। যা শুধু বর্তমানে দারিদ্রতার জন্য নয় ভবিষ্যতে পুরো জাতির জন্য অশনি সংকেত।