সমকামি অধিকার: অবিলম্বে বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করা প্রয়োজন!

শাহানূর ইসলাম সৈকত
Published : 25 Jan 2013, 11:00 AM
Updated : 25 Jan 2013, 11:00 AM

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় বাংলাদেশে বসবাসরত সমকামী ব্যক্তিরা শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি (সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন) ও লিঙ্গ পরিচয় (জেন্ডার আইডেন্টিটি)'র কারনে সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হন। বাংলাদেশ সংবিধানের প্রস্তাবনায় সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন,মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া,সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হিসেবে স্পষ্টভাবে ঘোষনা করে সকল প্রকার বৈষম্য নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমসুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এতদ্বসত্ত্বেও বাংলাদেশে সমকামী ব্যক্তিরা শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারনে হত্যা,ধর্ষন,শারীরিকভাবে আহত,নির্যাতন,স্বেচ্ছাচারী আটক এবং চাকুরী,স্বাস্থ্য,শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যসহ বিভিন্নরকম সহিংসতার শিকার হন।

সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ১ ধারায় সকল মানুষ স্বাধীন এবং সম মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে বলে ঘোষনা করা হয়েছে। ফলে লেসবিয়ান,গে,বাইসেক্সুয়াল,ট্রান্সজেন্ডার (এলজিবিটি)সহ সকল মানুষ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী জীবনের অধিকার;ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার;স্বেচ্ছাচারী আটক,গ্রেফতার ও নির্যাতিত না হওয়ার অধিকার;মত প্রকাশ,সংগঠন করা ও শান্তিপূর্ন সমাবেশের অধিকারসহ একজন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সহজাত সকল অধিকার পূর্ণরূপে উপভোগ করার অধিকারী।

পৃথিবীর অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সমকামিতা বা সমলিঙ্গীয় মিলন আইনে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন কি তা যদি দু'জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পূর্ণ সম্মতিতে হয় তবুও। বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারা সমকামিতাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক অপরাধ হিসেবে গন্য করছে। উক্ত ধারায় উল্লেখ করেছে,যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ,নারী বা জন্তুর সহিত,প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে–যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে-দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।

সমকামিতার অধিকারকে বৈধতা দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে গত ১৭ জুন ২০১১ ইং তারিখে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। উক্ত প্রস্তাবে যৌন প্রবৃত্তি বা লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে কোন ভেদাভেদ থাকবে না এবং লেসবিয়ান,গে,বাই-সেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডাররা অন্য লিঙ্গের মানুষের মতোই সমঅধিকার ভোগ করবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০০৯ সালের জুলাই মাসে এক আদেশের মাধ্যমে সমকামিতা অবৈধ নয় মর্মে ঘোষনা করেছে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তির কারণে দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পূর্ণ সম্মতিতে সম্পাদিত যৌন ক্রিয়া অপরাধ হিসেবে গন্য করা মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন বলে মন্তব্য করেছে।

আমাদের দেশে সমকামিতাকে পাপ বলে গন্য করা হয়। সমকামিতা যদিও প্রকৃতি প্রদত্ত স্বাভাবিক বিষয়,তবুও পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র সব জায়গায় সমকামী ব্যক্তিকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এমনকি আমাদের জাতীয় আইনেও সমকামিতাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে সম্পাদিত কাজ মর্মে অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়েছে। যা আমাদের পবিত্র সংবিধান এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন ও ঘোষনা প্রদত্ত অধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। সমকামী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সমাজে তাদের যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইন দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বিলোপ করা এখন সময়ের দাবী।