ছাতকের কমলা, মধুপুরের আনারস, সিলেটের সাতকরার মত বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে একটা বিশেষ জিনিস পাওয়া যায়, যার নাম "চুইঝাল"।
চুইঝাল একধরনের মসলা। গাছটি দেখতে অনেকটা পান গাছের মত তবে কান্ড অনেক মোটা হয়। কান্ড থেকে আকর্ষি বের হয়, সেই আকর্ষি মাটিতে বিশেষভাবে রোপন করলে আবার সেটা গাছ হয়। গাছটি বড় হতে শুরু করলে সেটা কোন সুপারি, তাল অথবা নারিকেল গাছে বাইয়ে দিলে চুইঝাল সেই বড় গাছকে আশ্রয় করে বড় হতে থাকে। পূর্নাংগ হতে ৭-৮ বৎসর সময় লাগে।
বড় হলে গাছের কান্ড কেটে পানিতে ধুয়ে মাছ, মাংস, সবজি কিংবা নিরামিশে ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে কান্ডটিকে ২-৩ ইঞ্চি লম্বা করে কেটে তারপর আবার ছোট ছোট ফালি করে মাংস-তরকারীতে দেয়া হয়। ১ কেজি গরুর মাংসে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম যথেষ্ট। মাংসে ব্যবহার করলে অসাধারন একটা গন্ধ এবং হালকা ঝাল স্বাদের সৃষ্টি হয়।
সাতক্ষীরার চুকনগরের চুইঝাল সবচেয়ে বিখ্যাত বলে প্রচলিত থাকলেও যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুরেও ভাল মানের চুই ঝাল পাওয়া যায়। যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনার অএক হোটেল রেষ্টুরেন্টে আজকাল চুইঝালের মাংস রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হয়। অনেকে শখ করে, অনেকে বিক্রির আশায় গাছটি লাগান, পরিচর্যা করেন। খুলনার বড় বাজারে এক কেজি ভাল মানের চুইঝালের দাম ৮ ০০ টাকা! কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে বেড়াতে গিয়ে বেশ ভাল মানের চুইঝাল পেলাম যার দাম ৪০০ টাকা প্রতি কেজি। ঢাকার কাপ্তান বাজারেও নাকি আজকাল চুইঝাল পাওয়া যায় বলে শুনেছি। ফ্রিজে ভাল করে সংরক্ষন করলে ১৫-২০ দিন ভাল থাকে। সাধারণ ভাবে ৭-৮ দিন রাখা যায় তবে কান্ড শুকিয়ে গেলে বা ভিজে পচে গেলে আর ব্যবহার করা যায় না।
এর আগে এতবার যশোর-খুলনা গেলেও চুইঝালের সাথে পরিচিত হইনি কখনো। মাস তিনেক আগে আরো একবার খুলনা গিয়ে প্রথম পরিচয় এই মসলাদার গাছের সাথে। এরপর থেকে খুঁজতে থাকি এই মসলার উৎসস্থল। দেখতে চেয়েছিলাম কেমন করে জন্মায় এই চুইঝাল? সাগরদাঁড়িতে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক বাড়ী দেখতে গিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত ব্যপার হয়ে গেল।
সামনে কোরবানীর ঈদ। নিজের জন্য আর আত্মীয় স্বজনের জন্য এক কেজি পরিমান কিনে নিয়েছি। চেখে দেখতে পারেন অসাধারণ স্বাদের চুইঝাল।