চোখের আলো নিভে গেলেও তোমার মনের আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে

মাহফুজশান্ত
Published : 7 July 2011, 05:00 AM
Updated : 7 July 2011, 05:00 AM

"চোখ যে মনের কথা বলে"-

বোন রুমানা, যে চোখ মনের কথা বলে- তোমার মনের সে আয়নাটি আজ কালো চশমায় ঢাকা। কিন্তু তোমার অন্তরের আলো নেভানোর সাধ্য করো নেই। তুমি তো একা নও। লক্ষ-কোটি নির্যাতিত নিপীড়িত নারীর চোখ তোমার পানে চেযে আছে। মহান স্রষ্টা যে তোমার জ্ঞানের চোখটিকে এই হতভাগীদের জন্য চয়ন করেছেন, তা নিশ্চয় তুমি বুঝতে পেরেছ। শহরের প্রাসাদোপম অট্টালিকা কিংবা গ্রামের নিভৃত কুটির অথবা বস্তিবাসী- যেখানে যত নির্যাতিত নারী আছে, তোমার বোধ ও বোধি দিয়ে তুমি তাদের অব্যক্ত বেদনার সাক্ষী হয়ে যাও। সমাজের সকল বোবা আত্মাগুলোর সাথে একাত্মা হয়ে তাদের চেপে রাখা কান্নাকে গণসঙ্গিত রূপে তোমার ভাষায় আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দাও। তুমি দেখতে না পেলেও তোমায় দেখে বাংলার মানুষের যে অনেক কিছু শেখার আছে, সে কথাই আজ আমি বলতে চাই।

একদিন দুদিন নয়, বেশ দীর্ঘ সময় তোমার চোখে অগনিত বার চোখ রেখেও যে অদ্ভুত লোকটি নিজ হাতে স্বজ্ঞানে সেই চোখের আলো নিভিয়ে দিতে পারে, তোমার মনের আলোর নাগাল পাওয়ার সামান্যতম যোগ্যতাও যে তার ছিলনা সেটা আজ স্পষ্ট। সেই অমানুষটি সম্পর্কে বাংলার সচেতন মানুষ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা নিশ্চয় তোমার অজানা নেই। এই পাপিষ্ঠের ক্ষমা নেই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই তার প্রাপ্য।

তোমার সন্তানের আলো মাখা প্রিয় মুখটি যেন আবারও তুমি প্রাণভরে দেখতে পার- সেই কামনাই করি।

পরুষ কিংবা নারী বিহীন কোন সমাজকে সুস্থ সমাজ বলা যায় না। আবার একটি সমাজের নারী এবং পুরুষেরা পরস্পরকে কতটুকু যোগ্য মর্যাদা দিচ্ছেন তার উপরে সেই সমাজের সুস্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। সমাজে নারী নির্যাতনের হারই যে বেশি তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে সব গৃহেই নারীরা নির্যাতিত হন না। আবার নারীরা যে শুধু পুরুষের দ্বারাই নির্যাতিত হন তা নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই নারী নির্যাতনের পিছনে অপর কোন নারীর মদদ ও ইশারা থাকে। অনেক সময় এ ব্যাপারে নারীদের সতর্ক করতে চাইলে দেখা যায় তারা নিজেরাই হেলা করেন এবং সময়মত সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করেন। প্রকৃত অর্থে নারীদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে তাদেরকেই আগে সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের ভাল-মন্দ বোঝার মত জ্ঞান ও মানসিকতা অর্জন জরুরী। পাশাপাশি সমাজের সবার সহযোগিতা তো লাগবেই।

মানুষ ঘর বাঁধে ও সংসার করে সুখের আশায় এবং এই সুখ-শান্তি রক্ষায় পুরুষ/নারী কারো ভূমিকাই কম নয়। পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা ছাড়া এই শান্তির নাগাল পাওয়া এবং তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু ঘরে যদি অশান্তিই সব সময়ের সঙ্গী হয়, তাহলে তো সংসার বাঁধার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে বাধ্য। আমাদের সমাজে যে এ ধরনের কত অশান্তির সংসার আছে তা অনেকেরই অজানা। হয়ত এমনও ঘর আছে, যেখানে শারীরিক নির্যাতন করা হয় না বটে, কিন্তু মানসিক নির্যাতন যাদের নিত্যসঙ্গি।

সংসার শারীরিক কিংবা মানসিক- কোন ধরনের নির্যাতনের কারাগার নয়। কোনরূপ নির্যাতন সমর্থন যোগ্য নয়, তবে একসাথে বসবাস করতে গেলে ঝগড়াঝাটি ও মান-অভিমান হতেই পারে। সাময়িক মনোমালিন্য হলে পরস্পর বোঝাপড়ার মাধ্যমে তা মেটানোর প্রয়াশ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে মিথ্যে মোহে ভর করে সারাটা জীবন একতরফাভাবে কোনরূপ নির্যাতন ও অশান্তি বয়ে বেড়ানোর মাধ্যমে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। কাজেই স্বামী- স্ত্রীর মাঝে একে অপরের প্রতি সামান্যতম প্রেম বা সহানুভূতি বা শ্রদ্ধাবোধও যদি অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে শুধুমাত্র চক্ষু-লজ্জার ভয়ে সেই সংসার টিকিয়ে রেখার কোন অর্থই হয় না। আপন অন্তরের সাথে এরূপ ছলনার মধ্যে কোন সুখ তো নেই-ই, বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শেষে চরম দুর্গতিই মেলে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বোন রুমানার করুণ পরিণতি এই কথাটি স্মরণ করিযে দেবার জন্য যথেষ্ট।

বিভিন্ন পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির ব্যপারে অন্তত রুমানার যে কোন দোষ ছিলনা তা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু তারপরও স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে- তাহলে তার এই পরিণতি হলো কেন? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অপর ব্যক্তি অর্থাৎ যার সাথে তিনি এতটা সময় একই ছাদের নিচে কাটিয়েছেন তার সম্পর্কে জানাটা জরুরী।

এবার প্রশ্ন উঠতে পারে- রুমানার স্বামী সাইদ কি হঠাৎ করেই এমন আচরন করেছে? নাকি এরূপ অস্বাভাবিক আচরণ করা তার অনেক দিনের বদভ্যাস ছিল্? এই ঘটনার মূল অপরাধী যে সাইদ এবং তার কারনে যে সংসারে অনেক আগে থেকেই অশান্তি চলছিল সে ব্যপারে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

অপারগতা বলব, নাকি ভুল বললে ঠিক হবে?- জানি না। তবে নিজে একজন উচ্চ শিক্ষিত নারী এবং সেই সাথে শিক্ষিত পরিবারের সদস্য হিসেবে রুমানা এবং তার পরিবার সঠিক সময়ে যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তাতে কোনই সন্দেহ নেই। রুমানা তার মূল্যবান চোখ হারালেও সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে অনেক কিছুই জানিয়ে দিয়েছেন। কথায় কথায় সংসার ভেঙ্গে দেয়া খুবই ঘৃণার কাজ। আমাদের সমাজে রুমানার মত অনেকেই হয়ত সেই ঘৃণ্য পথে পা বাড়ানোর আগে হাজার বার ভাবতেই পারেন। আগুন লেগে গেলে সব জ্বলে-পুড়ে ছারখার হবার আগেই যত দ্রুত সম্ভব আগুন নেভানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়াই তো উত্তম। পাছে লোকে কিছু বলে- এরূপ ভেবে ভেবে অন্যায় ও অশান্তির আগুনে ভরা সংসার আঁকড়ে থেকে অঙ্গার হবার কোন মানেই হয় না। বরং চরম পরিস্থিতি সৃস্টি হওয়ার আগেই সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়াছাড়ির সিদ্ধান্ত নেয়াই যে উত্তম, যারা বুদ্ধিমান তারা ঠিকই তা বুঝতে পেরেছেন। এ কারনেই তো মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রেরিত ঐশী কিতাব আল-কোরআনে শান্তিপ্রিয় বান্দা-বান্দির শান্তির জন্য তালাক বা খোলার বিধান রেখেছেন।