বিধ্বংসী নাগরিক ভাবনা।

সত্য কথক
Published : 28 May 2012, 05:13 PM
Updated : 28 May 2012, 05:13 PM

জয় বাংলা দিয়ে কি কি হয় তার একটা ফিরিস্তি দেবেন কেউ?
জয় বাংলা দিয়ে কি নিয়মিত পানি পাওয়া যাবে?
জয় বাংলা দিয়ে কি নিয়মিত বিদ্যুত পাওয়া যাবে?
জয় বাংলা দিয়ে কি নিয়মিত গ্যাস পাওয়া যাবে?
জয় বাংলা দিয়ে কি সাধ্যের মধ্যে দ্রব্যমূল্য ক্রয় করা যাবে?
জয় বাংলা দিয়ে কি ন্যায্যমূল্যে যাতায়াত করা যাবে?
জয় বাংলা দিয়ে কি ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাবে?
জয় বাংলা দিয়ে কি মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা যাবে?

যদি যায় তাহলে আমিও জয় বাংলা'র অন্তর্ভূক্ত হব। এই জয় বাংলার জন্য আমার জীবন বাজি রাখব প্রতিজ্ঞা করলাম। যদি না যায় আমিও ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ব্যাক্তিদের দলে শীঘ্রই যোগ দেব বলে রাখলাম।
আর সহ্য হয় না। অভিশপ্ত নাগরিক জীবন আর সহ্য হয় না।

আত্মহত্যা না করে তথাকথিত আরেকটি ইতিহাসের ঘৃণ্য কাজ করে গেলে নিজের কাছেই আত্মতুষ্টি থাকবে মিথ্যাবাদী কোন এক বা একাধিক রাজনীতিবিদের ভয়াল জিহ্বা থেকে জাতির অন্তত মুক্তি পাবে ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এবং সরকারদলীয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলছি, জনতা বিধ্বংসী হয়ে উঠছে। জনতার ক্রুদ্ধ মূর্তি, ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া কত ভয়ংকর তা নিশ্চয় আপনারা জানেন। জনতার সেই রুদ্ররোষেই স্বাধীন হয়েছে প্রিয় স্বদেশ।আপনার সৌভাগ্য, জনতার রুদ্ররোষের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে হয়নি আপনাকে প্রিয় নেত্রী।

নেত্রী আপনার আর আপনার নেতাদের গালভরা বুলিতে এখন আর পেট ভরছে না। নগরজীবনের কোন এক পিতা ঘর্মাক্ত শরীরে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে এসে তার একমাত্র প্রিয় মেয়ের হাতে বানানো একগ্লাস লেবুর শরবত খেতে পারছে না। প্রিয়তমা স্ত্রীর মলিন মুখের দিখে তাকিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে পুরূষের পাশবিক সত্ত্বা। প্রিয় সন্তানের অর্ধাহার দেখে অভুক্ত মায়ের মন বিদ্রোহী হয়ে উঠছে।

আমরা সাধারণ জনতা আপনাদের কাছে কি খুব বেশী দাবী করেছিলাম? শুধুমাত্র মৌলিক অধিকার শুধুই ন্যূনতম নাগরিক অধিকার চেয়েছিলাম প্রিয় নেত্রী। যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রতিটি মুহূর্তে কর দিয়ে যাচ্ছি – মূল্য সংযোজন কর কি ধনী, কি গরীব প্রত্যেকটি মানুষ যে করাভারে জর্জরিত, আয়কর দিচ্ছে আমার নিম্নমধ্যবিত্ত পিতা,ভাই (চরম বিস্মিত হয়ে দেখি পিতা/ ভাইয়ের এক মাসের সমুদয় আয় চলে যাচ্ছে এই কর পরিশোধ করতে, অথচ এই কর্তার মাসের খরচ চালাতে গলদঘর্ম হতে হয়), তার উপর আছে সিটি কর্পোরেশন কর, উন্নয়ন কর, আরো হেন তেন। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হল কয়েক দফা, পানির বিল বৃদ্ধি করা হলো, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো। তার বিনিময়ে নাগরিক কি পাচ্ছে? তার কোন হিসেব কি আপনি রেখেছেন নেত্রী?

প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছেন পিতা তার পূত্রের অভাবক্লিষ্ট মুখের কাছে, মলিন বদনের প্রেয়সী জননীর কাছে, বড় স্নেহের দুলালীর কাছে। এ বড় যন্ত্রণাময় প্রিয় সরকার। নিম্নমধ্যবিত্ত কর্তার লাঞ্ছনা দেখে তার দশ বছরের অবোধ প্রিয় পুত্র মাসের শেষের দিন পিতাকে একমূটো পয়সা ধরিয়ে দিয়ে বলে "বাবা এই পয়সা কয়টা দিয়ে কি কিছু পাওয়া যায়?" আমার এক পিতাকে তার এই অবোধ শিশুর কাছে পরাজিত করে আপনার কি লাভটা হলো প্রিয় সরকার?

আমি আরেক জননীকে দেখেছি পুত্রের হাতে কিছু টাকা সমর্পণ করে বলে, বাবা এই মাসটা কি একটু ভালোভাবে চলা যায় এই কয়টা টাকা দিয়ে? অশ্রুসিক্ত নয়নে পুত্র বলে, মাগো আমি এমন কি অপরাধ করেছি, এমন কি পাপ করেছি তোমার স্বর্ণের বালা বেচা টাকায় আমার সংসার খরচ চালাতে তুমি টাকা দিচ্ছ? এমন অভিশাপ কেন দিলে মা? বলো কেন জন্ম দিলে মা?

আমার পাশবিকতা জেগে উঠে। চিৎকার করে বলে উঠে-

ভীষণ ক্ষুধার্ত আছি, উদরে শারীর বৃত্ত ব্যেপে
অনুভূত হতে থাকে – প্রতিপলে – সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
অনাবৃষ্টি – যেমন চৈত্রের শষ্যক্ষেত্রে – জ্বেলে দ্যায়
প্রভূত দাহন – তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ
দুবেলা দুমুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোন দাবি
অনেকে অনেক কিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়
বাড়ি, গাড়ি, টাকা কড়ি – কারো বা খ্যাতির লোভ আছে
আমার সামান্য দাবী পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর
ভাত চাই – এই চাওয়া সরাসরি – ঠান্ডা গরম
সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হলে
কোনো ক্ষতি নেই – মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাই
দুবেলা দুমুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য সব দাবী
অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা
চাইনি তো ; নাভি নিম্নে – পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক
যে চায় সে নিয়ে যাক – যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও
জেনে রাখো : আমার ওসবের কোনো প্রয়োজন নেই।

যদি না মেটাতে পারো আমার সামান্য এই দাবী
তোমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘটে যাবে
ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট আইন কানুন
সম্মুখে যা কিছু পাব খেয়ে যাবো অবলীলাক্রমে ;
থাকবে না কিছু বাকি – চলে যাবে হা ভাতের গ্রাসে।
যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে তোমাকে ধরো পেয়ে যাই
রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে
সর্বপরিবেশগ্রাসী হলে সামান্য ভাতের ক্ষুধা
ভয়াবহ পরিনতি নিয়ে আসে নিমন্ত্রণ করে।
দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদীনালা
গ্রামগঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ি
আমার ক্ষুধার কাছেই কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা
তা না হলে মানচিত্র খাবো।

(প্রত্যেকটি চরিত্রের সাথে বাস্তবের মিল আছে)
(খানিক আগে জানলাম, বিডিনিউজ অফিসে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। সরকার এই ক্ষেত্রেও জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ। এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যার যার অবস্থান থেকে এই সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানাচ্ছি। )