সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও প্রতিযোগিতা

নাহুয়াল মিথ
Published : 30 March 2011, 02:22 PM
Updated : 30 March 2011, 02:22 PM

"এসো গণসঙ্গীতের আয়নায় দেখি স্বদেশের মুখ" শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে ২৭ ও ২৮ মার্চ দু'দিন ব্যাপি সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী-সংগ্রামী সত্যেন সেন এর ১০৩ তম জন্মদিন (২৮ মার্চ ) উপলক্ষে ৩য় বারের মতো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে এ প্রতিযোগিতার। গতকাল ২৭ মার্চ উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কামাল লোহানী।

সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কৃষকনেতা, শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেন তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থেকেই গণসংস্কৃতি চর্চার পথ বেছে নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মত বিপ্লবী ও গণ মানুষের সাংস্কৃতিক সংগঠন। গণসংস্কৃতির মূল উপাদান হলো গণসঙ্গীত। উদীচীর প্রাণও তাই গণসঙ্গীত। যে গণসঙ্গীত এ ভূখন্ডে গণমানুষের অধিকার অন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার-সা¤প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রেরণার উৎস হিসেবে ভূমিকা রেখেছে, সে গণসঙ্গীত আজো এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের আশা-আকাক্সা-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কথা বলে, তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়। গণসঙ্গীতের এই ধারার আরো বিস্তার ঘটানো এবং গণসঙ্গীত যাতে আরো বেশি শ্রমজীবী মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারে, তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শিল্পীরা যাতে বঞ্চিত-নিপীড়িত-শোষিত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে । শিল্পীসংগ্রামী সত্যেন সেন-এর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে উদীচী ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে 'সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা'। দেশব্যাপী প্রতিযোগিতা আয়োজনের পেছনে উদীচী'র লক্ষ্য হচ্ছে গণসঙ্গীতকে গণমানুষের আরো কাছে নিয়ে যাওয়া, নতুন প্রজন্মকে গণসঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং প্রতিভাবান গণসঙ্গীত শিল্পী অন্বেষণ।

প্রতি বছরের মত এবারো সারা দেশে জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাঁছাইকৃত গণসঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে আজ ২৮ মার্চ সকাল ৯.৩০ টা থেকে শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। সারা দেশ থেকে ৪৫ জন প্রতিযোগী একক গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুর্ধ্ব ১৫ বছর ও ১৫ বছরের অধিক বয়সী প্রতিযোগীদের নিয়ে দুটি পৃথক বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ০৭ টি বিভাগে দলীয় ও এককভাবে গণসঙ্গীত প্রতিয়োগিতা হয়। বিভাগীয় জয়ীরা জাতীয় প্রতিয়োগিতা অংশগ্রহণ করে । জাতীয় পর্যায়ে অনুর্ধ ১৫ বছরের প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে খুলনার প্রতিযোগী দ্যুতি বিশ্বাস, দ্বিতীয় চাঁদপুরের প্রতিযোগী তাহরিমা বিনতে ইয়াহিয়া পলিন এবং তৃতীয় হয়েছে ঢাকার প্রতিযোগী সাদিয়া হাসান মোনা। ১৫ বছরের অধিক বয়সীদের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন ঢাকার প্রতিযোগী স্বর্ণময়ী মণ্ডল, ময়মনসিংহের প্রতিযোগী নুসরাত ইমাম বুলটি ও বরিশালের প্রতিযোগী মো: ইমরান হোসেন টারজান এবং তৃতীয় হয়েছেন ঢাকার প্রতিযোগী এম এ মোমিন। দলীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট-দিনাজপুর, দ্বিতীয় উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ এবং তৃতীয় উদীচী মাগুরা জেলা সংসদ।
বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম, বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাওজাল এবং গণসঙ্গীত শিল্পী মাহমুদ সেলিম।

২৮ মার্চ বিকেল ৫টায় উৎসব মঞ্চে উদীচীর গণসঙ্গীতের অ্যালবাম 'গণমানুষের গান'-এর মোড়ক উন্মোচন করবেন নাট্যাঙ্গনের মঞ্চকুসুম খ্যাত ও গণসঙ্গীত শিল্পী শিমূল ইউসুফ। এই এ্যালবামে সত্যেন সেন-এর গানসহ ১২ গণসঙ্গীত রয়েছে।

এ মঞ্চেই বিজয়ী প্রতিযোগীদের মধ্যে সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। আলোচনা পর্বে উদীচীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সুজেয় শ্যাম, মাহমুদ সেলিম, প্রবীর সরদার এবং এবারের বিশেষ অতিথি মৌসুমী ভৌমিক। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিজয়ী প্রতিযোগীরা এবং কলকাতার সঙ্গীত ও নৃতাত্ত্বিক গবেষক, বাংলা জীবনবাদী গানের শিল্পী মৌসুমী ভৌমিক ও শিল্পী সাত্যকী ব্যানার্জী।