স্বাধীনতা দিবসে দেশি ধানের স্বাধীনতা রক্ষায় আউশ বোনা উৎসব

নাহুয়াল মিথ
Published : 21 March 2017, 07:57 PM
Updated : 21 March 2017, 07:57 PM

আশ্বিন মাসে যে পিঠা খাওয়া হতো বাঙালী আজ ভুলতে বসেছে। অগ্রাহায়ণের নতুন ধানের পিঠা-পায়েস খাওয়ার সংস্কৃতি ক্ষীণকায় ধারা টিকে আছে কারণ আমনের আবাদ হারিয়ে যায়নি। কিন্তু আউশ হারিয়ে গেছে, ফলে আশ্বিন মাসে পিঠা খাওয়া হয় না। তাল পাকলে পুরান আমনের চাল দিয়ে পিঠা হয়। কিন্তু আউশ রুপকথার ধান হয়ে যাচ্ছে।

অধিক পুষ্টি আর গুনে ভরপুর এ সকল ধান আবাদে রাসায়নিক সার ও বিষ লাগে না ফলে শতভাগ নিরাপদ খাবার আউশ। আউশের আবাদ ফিরিয়ে আনতে "স্বাধীনতা দিবসে দেশী ধানের স্বাধীনতা রক্ষায় আউশ বোনা উৎসব" এর আয়োজন করা হয়েছে এখন পর্যন্ত উৎসবে যোগদান নিশ্চিত করেছে-

# সোনামটি– ইলাশপুর, পূর্বধলা, নেত্রকোনায় দুই জাতের আউশ বপন করবে।
#দেশজ বাজার – ক্যারিংচর, চরমজিদে স্থানীয় জাতের আউশ বপন করবে।
# কৃষক স্কুল– বাসাবাইদ, ঘাটাইল,টাংগাইলে স্থানীয় জাতের আউশ বপন করবে।
# শুদ্ধ কৃষি– দুই জাতের আউশ বপন করবে।
# সজীব সীড– কামারপুকুর, সৈয়দপুর, নীলফামারীতে আউশ বপন করবে।
# প্রাকৃতিক কৃষি– হাজীপুর, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জে ৪ জাতের আউশ বপন করবে।
# বয়াংসি পারমাকালচার- ঘাটাইল পৌর এলাকা, টাংগাইলে ২ জাতের আউশ বপন করবে।

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিপননে জড়িত সকলের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে…আসুন আউশের ভাত মুড়ি পিঠা খাওয়ার মতো স্বাধীনতা অর্জন করি।

আউশ শব্দের অর্থ আগাম। গ্রাম্য ভাষায় আউশ ধানকে কালাবরি ধান বলে। আউশ ধানের মৌসুম হচ্ছে- বাংলা মাস বৈশাখ থেকে শ্রাবণ। ইংরেজি মাস- মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য আগষ্ট পর্যন্ত 'আউশ মৌসুমে'। আউশ ধান সাধারণত উঁচু এবং মাঝারি উঁচু জমিতে আবাদ করা হয়ে থাকে। এ ধান আবাদ করতে তুলনামূলক ভাবে অনেক কম পানির প্রয়োজন হয়। আউশ ধান কৃষকরা বীজধান ছিটিয়ে বপন করেন।

আশি-পঁচাশি দিনের মধ্যে ধান পেকে যায়, তেমন জাতগুলো হলো- মুখী, পুসূর, দুলা, মরিচবটি, হাসিকলমী, হরিণমুদা, পটুয়াখালী এবং ধলা ষাইট্টা।

পঁচাশি থেকে নব্বই দিনের মধ্যে পাকে, তেমন জাতগুলো হলো- ধারিয়াল, কুমারী এবং দুলার। নব্বই থেকে একশ দিনের মধ্যে ধান তোলা যায়, তেমন জাতগুলো হলো- কটকতারা, সূর্যমুখী, চালক, আটলাই, খাসিয়াপাঞ্জা।

পানবিরা জাতটি একটু ব্যতিক্রম, যা পাকতে সময় লাগে প্রায় একশত পাঁচ দিন। গড়পড়তা এদের ফলন ছিল হেক্টর প্রতি ২.০০ টন থেকে ২.৩৫ টন পর্যন্ত। ব্যতিক্রম ছিল কেবল কটকতারা, যার এর হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ৩.৩৫ টন।

আউশ ধানের জাতের নামগুলো জানতে পারা যায়, তা হলো আগলি, আদাগতিয়া, আটলাই, আটবেইল, আল্লাবক্সি, আশাকুমড়া, আশাবোয়ালি, আয়নামহল, ওল্লামুল, উত্তরা, কইয়াজুরি, কচমাদানা, কতুকমণি, কদমফুল, কটকি, কটকতারা, কবিরমণি, কসমল, করচামুড়ি, কয়রাপরাঙ্গী, কসমেদং,
কসমিদানা, কসখড়দল, কচৈর, কাইলাবড়ি, কাজলতারা, কাজলা, কাঁচাননি, কাদমইন, কাদোমণি, কামিনী, কালাবকরি, কালাগোরাই, কালাবোয়ালি,
কালাবোয়ালিয়া, কালামানিক, কালাসোনা, কালাহইলনেমুর, কালিয়াবড়ি, কালিসাইটা, কালিয়াসোনা, কাহুয়া, কুমচারাল, কুমরাইল, কুমারী, কুমড়াগইড়, কুমড়োল, কুলমণি, কালোপাহাড়, কেদারচক ,কৈজুরি, খাড়াজামড়ি, খুপনি, খৈরা, গরফা, গয়া, গয়াল, গজলগাড়িয়া, গজলগৈরা, গাগড়া, গোজারগইরা, গোপালভোগ, গোবেশ্বর, গোরেশ্বর, গোরিসাইটা, গোয়ালঝুড়ি, চকললেমা, চন্দ্রহার, চাকুইল্যা, চারনক, চেঙ্গাই, চেনা টেংরি, চিনাডিঙ্গি, চৌদ্দমুগুর, ছিটকিসাইটা, ছোট মলি্লকা, জংলি, জবাফুল, জামরস, জামাইনাড়ু, জামির, জিরাশাইল, টেপিসাইটা, টোকমরদানা, ঠাকুর ভোগ, দত্তরভোগ, দাপা, দুধবোয়ালিয়া, দুধসর, দুধসাগর, দুধশাইল, দুলাল, ধলাহইলনেমুর, ধলাষাইট/ধলা ষাইট্টা, ধারাইল, ধারিরাতইল, ধারিয়াল, ধোলাম, নড়ই, নড়ইসাইটা, নয়নতারা, নানাসরঅতুল, নারিকেলজুরি, নোলজ, পঘাডাঙ্গা, পঙ্খীরাজ, পটুয়াখালী, পরাঙ্গী, পরেশ্বর, পড়খীরাজ, পশুর, পাখি, পাঁজরা, পানবর, পানবিড়া, পাহাড়ি আউশ, পাশপাই, পুইকা, পুখি, পুসূর, প্রামাণিক, ফাইরাপরাঙ্গী, ফুলবাগ, ফুলবাদাম, ফুলমতি, বইন্যাঝুড়ি, বরষা, বলিয়ান, বটেশ্বর, বর্ণলতা, বধুমনি, বাইশমুগুর, বাইশমুশুর, বাগতুলসী, বাছা, বাজরা, বারমালকা, বাদশা, বাদলা, বাদেশ্বর, বালাইলোম, বাহই, বাঁশগইর, বিন্যাছুপি, বিন্যাঝড়, বিন্যামুড়ি, বীরকোনা, বেগুনবিচি, বেনাজারা, বোরাকি, বোয়ালজুড়ি, বোয়ালিয়া, বৌপাগল, বৌসোহাগী, বৌপালানি, বৌলাম, ভইরা, ভাতুরি, ভাগচাপরি, ভাগবকতুলসী, ভাঙ্গাপরাঙ্গী, মতিচক, মতিপরাঙ্গী, মধুমতি, মরিচবেটি/মরিচবটি, মস্তামন, মশইল, মহিষগড়, মহিষদল, ময়নামতি, মাতচাল, মাটিচাক, মানিকমন্ডিল, মানিক মোড়ল, মেঘরাজ, মুইফল, মুলকে আউশ, মুরিচপাল, মুড়কিমালা, মুড়িগরচা, রঙেরগুড়া, রাজবংশী, রাজভোগশাহী, রাজমন্ডল, রান্ধুনী পাগল, লক্ষ্মীকাজল, লক্ষ্মীতারা, লক্ষ্মীবিলাস, লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুরা, লক্ষ্মীপোতা, লক্ষ্মীলতা, লামা, লেদামুগরা, লোহাগৌড়, শনি, শঙ্খপটি, শমনপট্টি, শ্রীবেলান, শ্রীবইলাম, সন্ধ্যামণি, সদাইমালি, সবরিভোগ, সরিষাকুটি, সরিষাফুল, সরুধান, সয়ারগাড়ি, সাইলপরাঙ্গী, সাত্তাভোগ, সান্তো, সাঁদো, সাদৈমলি্লক, সাধু, সিঁদুরকোটা, সেচিমোলকি, সুলতানভোগ, সোনামূখী, সোনালেতা, সোনারগড়, সোনারগাড়ি, সোনার গায়ে, সোপনেতা, সূর্যমনি, সূর্যমুখ, সূর্যমুখী, সাইটা, সৌদামণি, ষাইট্টা, হন্নেমুগ, হরিণমুদা, হল্লামুড়ি, হাতিয়া, হানাকুমড়া, হাসাধান, হাসাসাইটা, হাসিকলমি, হাসিকুমড়া, হোদাইমলি্লক, ইত্যাদি।

তবে এসব জাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থানে আবাদ করা হতো পরাঙ্গী, কালামানিক, সূর্যমুখী, ষাইট্টা, মাটিচাক, পড়খীরাজ, লক্ষ্মীলতা, নরই, বটেশ্বর, কটকি, কইয়াজুরি ইত্যাদি।

দেশ থেকে সুস্বাদু আর পুষ্টিতে ভরপুর ধানের মুড়ি, পিঠা-পায়েসের স্বাদ হারিয়ে দিতে না চাইলে আউশ রক্ষায় এগিয়ে আসুন।