এ কোন ট্রেনে চাপলেন আপনারা ?

মোঃ তানভীর সাজেদিন নির্ঝর
Published : 4 May 2014, 04:55 PM
Updated : 4 May 2014, 04:55 PM

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে নির্বাচন বৈতরণী ট্রেনে ওঠানামা নিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েট নেতাদের মূল বক্তব্যই ছিলো তৎকালীন প্রধান বিরোধী দলের নির্বাচনের ট্রেন মিস করা নিয়ে। তারপর থেকে কেন জানি আমিও সবকিছু এই ট্রেন তত্ত্ব দিয়ে মাপজোক করতে শুরু করে দিলাম। পুরো ব্যাপারটি আমার কাছে অন্যরকম লাগতো। যে উদাহরণটি তাঁরা ট্রেন দিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর তুলনা হয় না; একবাক্যে অসাধারণ একটি উপমা।

যাই হোক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসা ১৪ দল তাঁদের পুরো ক্ষমতার মেয়াদে প্রশংসার দ্বাবি রাখে,এমন অনেক কাজ করেছেন যা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের সাহায্যে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি না। পুরোপুরি না পারলেও কিছু ক্ষেত্রের কথা না বললেই নয়, যেমন- সরকারি চাকুরীজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, পুলিশ বিভাগের সকল স্তরে উন্নয়ন, প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যপুস্তক প্রদান, একজন অসাধারণ প্রতিভাবান যোগাযোগ মন্ত্রী উপহার, ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের গতি দ্রুত করন, তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ কে কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা সহ আরো অনেক কিছু। যে ট্রেনে চেপে তাঁদের এই কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে অর্জিত হয়েছিলো ঠিক সে ট্রেনে যাত্রাকালে অপরিচিত কারো দেয়া কিছু ভক্ষণ করে বেকায়দায়ও পরতে হয়েছিলো তাঁদের, যেমন- ছাত্রলীগের লাগামহীন ছুটে চলা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের উর্ধগতি, শেয়ার ব্যাবসায়িদের মাঠে মারা যাওয়া, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ গায়েব হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ কেলেংকারি, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের আজব আজব তত্ত্ব প্রদান এবং সর্বোপরি জলজ্যান্ত আশরাফুল মাখলুকাতগণের এক একদিন আচমকা হারিয়ে যাওয়া।

ভেবেছিলাম দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিশ্চয়ই তাঁরা আরো উন্নত ও মানসম্মত ট্রেনেই চেপেছিলেন, যে ট্রেনে অন্তত অপরিচিত কারো দেয়া কিছু ভক্ষণ করে নতুন বেকায়দার মোক্ষম অবস্থায় পরবেন না; কিন্তু সে আশার সুমিষ্ট গুঁড় ক্রমেই নোংরা,অপরিচ্ছন্ন বালিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি কেও নিয়ে নিয়েছেন তাঁদের ট্রেনে, তাঁদের ব্যাবস্থাপনায়! অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে মানুষ যতটা না ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ঠিক তাঁর চেয়ে অনেক বেশী মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় রাষ্ট্র। মানুষের পাকস্থলীতে অনেক সময় অপরিচিত কারো দেয়া কুখাদ্যও হজম হয়ে যায় কিন্তু একটি রাষ্ট্রের বেলায় তা সম্পূর্ণ বিপরীত। রাষ্ট্রকে যে কোন মূল্যে অপরিচিতদের দেয়া কিছু থেকে রক্ষা করা ট্রেন পরিচালক ও যাত্রীদের জন্যে ফরয সমতুল্যে দ্বায়িত্ব।

নিজেদের সাথে যখন রাষ্ট্র তথা ১৬ কোটি জনতাকেও যাত্রী করে তুলে নিলেন তখন এই যাত্রীদের ব্যাপারে দ্বায়-দ্বায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাদের। সে ব্যাপারে আদৌ আপনাদের সুবিবেচক দৃষ্টি আছে কি না, তা নিয়ে বেশ সন্দিহান এই ১৬ কোটির মধ্যে আমি একজনা। আচমকা এক একজন যাত্রী যেভাবে আলিমুল গায়েব হয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সাধারণ জনতা চেপেছে এক ট্রেনে আর আপনারা মানে ভিভিআইপি,ভিআইপি,সেমি ভিআইপিগণ চেপেছেন বোরাকে। না হলে আচমকা সহযাত্রীগণ কিছুক্ষণ পর পর আলিমুল গায়েব হয়ে যাওয়া স্বত্বেও আপনারা উদাসীন দৃষ্টিতে উর্ধাকাশে তাকাইয়া কোন উন্নত গ্রহে পৌঁছনোর কল্পনায় বিভোর হতে পারতেন না।

এই ট্রেন যাত্রা পথে কিছু কথা না বললেই নয়। এদেশের মানুষ সবাই সবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়,স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়,দু-বেলা কটা ডাল-ভাত খেতে চায়,প্রিয়জনের একটি সুখী মুখ দেখতে চায়,এখনো পিতা-মাতা সন্তানের পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকে, অপেক্ষায় থাকে নিষ্পাপ সন্তানেরা তাঁদের বাবা-মা ফিরে আসার অপেক্ষায়,মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা চায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও এটাই প্রকৃত সত্য যে, আপনারা আমাদের নিয়ে যে ট্রেনে উঠেছেন সে ট্রেনে এই পরিবেশ বিন্দুমাত্র আর নেই। পরিবেশ না থাকলে এই বাহনেও নিশ্চয়ই বেশিক্ষণ ভ্রমণ সহনীয় নয় আমাদের জন্যে।

তাই আপনারা মানে ক্ষমতাসীন দল এবার একটু ভাবুন, এ কোন ট্রেনে চাপলেন আপনারা ?