আবহমানকালের অসাম্প্রদায়িক এদেশে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বালায় যারা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 2 Oct 2012, 11:43 AM
Updated : 2 Oct 2012, 11:43 AM

সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো সবার মনেই অল্পবিস্তর লজ্জা-ঘৃণা-ধিক্কার উঠিয়েছে তা নিয়ে না লিখলে নিজের বিবেকের কাছেই অপরাধী সাব্যস্ত হবো বলেই লিখছি। এইদেশে অহিংসা দিবস সামনে রেখে একটি হিংস্র-সহিংস-জিঘাংসাময় লজ্জাস্কর ও জনধিকৃত ঘটনার জন্মদাতারা নিশ্চয় দেশের শত্রু। এবঙ এমন শত্রুতা যারা আগেও অনেকবার-ই অনেকভাবে ঘটানোর অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, আজও যে তারাই জড়িত এর সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাচ্ছে তদন্ত টিম। স্থানীয় মানুষের প্রত্যক্ষ বর্ণনা ও ভিকটিম সংখ্যালঘুদের বর্ণনা হতেই প্রমাণ পাওয়ার ফলেই অনেককে এ্যারেস্ট করা হয়েছে। মামলাও দায়ের হয়েছে। দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীও জানে, বিভিন্ন সময়ে কাদের দ্বারা এমনতর হামলার শিকার বানানো হয়েছে নিরীহ মানুষদের। এদেশের মানুষ কিন্তু কোনও কালেই সাম্প্রদায়িক নয়। বরঞ্চ সকল ধর্মের জনগোষ্ঠী পারস্পরিক সৌহার্দ-সম্প্রীতি বজায় রেখেই যার-যার ধর্মীয় পালা-পার্বন উদযাপন করে আসছে। অথচ ধর্মের নামসর্বস্ব কিছু রাজনৈতিক দলবাজ-ধর্মবাজের উস্কানিমূলক অপকর্মে ইন্ধনদাতা-মদতদাতার যোগসাজশেই শান্তির সহাবস্থানটি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করার হীন-উদ্যেশ্য সঙ্ঘটিত হয়েই চলেছে । একের পর একেক অমানবিক হামলা শিকার বানাচ্ছে নিরীহ মানুষদের। এই অমানবিক অপকর্ম সাধনকারীরা মানবতার শত্রু। এদের একটাই অসত উদ্যেশ্য এই যে, যে করেই হউক শান্তিবিঘ্নিত একটি জ্বলন্ত পরিবেশের উত্থান ঘটানো। যাতে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ-এর ইমেজ আবারও জঙ্গীবাদের ইমেজ-এ পৌঁছায়। এই অপকর্মেই ভয়ঙ্করভাবে নিযুক্ত তারা। নিশ্চয় তাদেরকে সমূলে চিহ্নিত করার এখন-ই সময়। নইলে আমরা আমাদের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় ব্যার্থতার দায়ভারেই লজ্জিত অধোবদন হয়ে থাকবো। এইদেশে আগেও যারা এমন ঘটনার জন্মদাতা তাদের ক্ষমাহীন অপকর্মের দায়ে তাদের চরমতম শাস্তির দাবী জানাই। তারা বিবেকহীন-ধর্মব্যাবসায়ী-উগ্রপন্থীর অনুসারী শয়তানের দল। তাদের অন্তর বিদ্বেষবিষে সিলমোহরকৃত বলেই লজ্জাবোধও নেই। অমানুষিক আচরণ তাদের। ছুরি-দা-ছেনি-কুঠার-বোমা-পিস্তল-এর অঢেল যোগান তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড সংঘে। তারা প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে আমাদের শান্তির সহাবস্থান জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করতে।

প্রিয় বাংলাদেশ তার আবহমান কালের অসাম্প্রদায়িক চেতনা রক্ষায় ব্যার্থ হউক এ নিশ্চয় কোনও সচেতন নাগরিকের কাম্য না। আমাদের এখন একযোগে এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার-সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবেই। সরকারেরও বিশেষ জরুরী পদক্ষেপ নিতেই হবে। সংখ্যালঘুরা যেন বিশেষ নিরাপত্তা সমেত জাতিগত অধিকারের নিশ্চয়তা পেয়েই এই অমানবিক-অপূরণীয় ভস্মীভূত বেদনাভার সইতে পারার মতোন শক্তি অর্জন করে। যতক্ষণ না তা সম্ভব হয়, ততক্ষণ-ই বিবেকবান-এর বিবেক লজ্জিত-অধোবদন হয়ে থাকবে।

সর্বশেষ খবরপাঠে জেনেছি যে কক্সবাজার-পটিয়ায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা পোড়া ভিটায় ফিরে আসছে। প্রমাণ সাপেক্ষে জড়িতদের অনেককে এ্যারেস্ট করে মামলা করা হয়েছে। তবুও আমরা জানি মামলা-এ্যারেস্টের পরেও অপরাধীরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের সহযোগে আইন-এর ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে আসে। বা জামিন পেয়ে আবার দিব্যি এক-ই অপকর্মে নিযুক্ত হয়। এইটি চিরতরের জন্যই বন্ধ হওয়া চাই। নচেত এইসব অপরাধীরা আরও অনেক বড় সর্বনাশা ক্ষতিসাধন করে ফেলার সম্ভাবনাটি প্রকট মনে হচ্ছে – কক্সবাজার-এর রামু-উখিয়া সহ পটিয়া জাহাজ নির্মান প্রতিষ্ঠানে ঘটানো ঘটনার জ্বলন্ত দৃশ্যে। মন্দির-মসজিদ-বাড়িতে আগুন জ্বালানো আর ভাঙচুরের মতো জঘন্যতম কাজ যাদের দ্বারা সঙ্ঘটিত হওয়া সম্ভব, তাদের কমবেশি সকলে চিনি, যে তারা-ই বিশ্বময় অশান্তি সৃষ্টিকারী উগ্রপন্থীর অনুসারী। তাদের হাতেই যেন বা জিম্মি হবার পথে ভবিষ্য অসাম্প্রদায়িক চেতনার নিরীহ জনগোষ্ঠী, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা কিছুতেই। অথচ আমরা সেজন্য কোনওরকম সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিচ্ছিনা। একজন লিখিয়ে হিসেবেই আমার মনে আসছে সেই মন্ত্রণা –

"জাগো বাহে কোনঠে সবাই …"

আমাদের সবার সন্মিলিতভাবে জেগে ওঠার জন্য এমন ডাকের বিষম প্রয়োজন …সবাই জেগে ঊঠলে শয়তান নিশ্চয় পালিয়েও বাঁচতে পারবেনা …আসুন শয়তানের বিরুদ্ধে একযোগে জাগি সবাই …কঙ্কর নিক্ষেপে চিরতরে শয়তানকে বিতাড়িত করি।

আজ আমার সরকার সমীপে সবিশেষ একটি আবেদন এই যে, অবিলম্বে জড়িতদের শাস্তিবিধান নিশ্চিত করা এবঙ এদেশের সকল সংক্ষ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার জন্য জরুরী যা-যা করণীয় তা করবার যথার্থ উদ্যোগ গৃহিত হোক। একইসঙ্গে এদেশের আন্ডারগ্রাউন্ড অপরাধচক্রের কার্যক্রম বন্ধের জন্যও যথার্থ আইন জারি হউক। আজ এরচে' অধিক চাওয়া নেই।

***
ফিচার ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম