হজ্বব্রত – আল্লাহ প্রদত্ত অনন্য উপহার অর্জন

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 10 Oct 2012, 04:10 PM
Updated : 10 Oct 2012, 04:10 PM

সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা এই হজ্বের জন্য জীবনে একবার হলেও আল্লাহ-র পবিত্র তীর্থগৃহ মক্কায় যেতে ইচ্ছেপোষণ করেন এবঙ যাঁরা পারেন তাঁরা নিশ্চয় অনেক সৌভাগ্যবান। আল্লাহ-র নৈকট্যলাভের একটি পরম সুযোগপ্রাপ্ত যাঁরা, তাঁরা তো –

"লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক – লাব্বায়েক লা শারিকালাকা লাব্বায়েক – ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিয়মাতা – লাকাওয়াল মুলক – লা শারিকালাক" (অর্থ – আমি হাজির ! হে আল্লাহ ! আমি হাজির ! কোনও শরিক নাই তোমার – আমি হাজির ! নিশ্চয়-ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার-ই। আর সকল সাম্রাজ্যও তোমার। কোনও শরিক নাই তোমার।) –

এই মহতি উচ্চচারণ অন্তর হতে উচ্চারণের মধ্য দিয়েই আল্লাহ-র নিকট নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পিত করেন। এই বিশ্বসাম্রাজ্য যাঁর তাঁর-ই তীর্থগৃহ তাওয়াফের মাধ্যমে অর্জিত হয় আল্লাহ-র তরফ হতে অসীম রহমত। অর্থাৎ শান্তি-র পরম উপহার আল্লাহ হজ্ব-এর মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে দান করেন। যাঁরা সে দান হৃদয়ে ধারণ করেন এবঙ বয়ে আনেন নিজ দেশের অগণিত সামর্থহীন মানুষের তরেই বিলানোর নিয়তে, নিশ্চয় তাঁর-ই হজ্বব্রত পালন সার্থক শুধু না, তিনি প্রকৃত ধার্মিক-শান্তির অনুসারী মানুষ। কেননা আল্লাহ তখন-ই সন্তুষ্ট হন যখন দেখেন সামর্থবান অর্জনকারী নিজের অর্জিত অন্তর্গত পরম উপহার অন্যকে বিতরন করছে। আল্লাহ যেমন সর্বময় পরম দয়াবান, তেমন তাঁর দয়ার দান যখন অন্যদের দেয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেন না তাঁর-ই অনুসারী মানু্‌ষ, তখন-ই আরও দয়া অর্থাৎ রহমত-এর অপার বারিধারা বর্ষিত করেন সেই মানুষটির কৃতকর্মে সন্তুষ্ট হয়ে মানব সমাজের উপর, এমন নজির এই জগতে বহু রয়েছে। তাই হজ্বের রহমত অন্তর ভর্তি করেই নিয়ে আসতে না পারলে, নিশ্চয় হজ্বব্রত সার্থক হতে পারেনা। শয়তান বিতাড়িত করতে যে সাতটি কঙ্কর ছোঁড়ার প্রথা অবশ্য পালনীয় – অর্থাৎ এক জীবনে চিরতরে শয়তানের অন্তরে অনুপ্রবেশ বিতাড়ন করতে হবে – এমন শিক্ষা গ্রহণ-এর নির্দেশ দিচ্ছেন আল্লাহ। এই শিক্ষাটি হজ্ব হতে অন্তরে ধারণ করতে হবে। কুরবাণী-র সঠিক অর্থটি বয়ে আনতে হবে – অর্থাৎ নিজের অর্জিত প্রিয় সম্পদ কুরবাণী-র মানসিকতা – আল্লাহ-র ওয়াস্তে নিজের সম্পদ বিতরন করবার মানসিকতা। লক্ষ-লক্ষ মানুষ পরম শান্তি-র সঙ্গে, পরম ধৈর্যে, কারও প্রতি কণা পরিমাণও অসহিষ্ণু / বিদ্বেষ ভাবাপন্ন না হয়ে অভিন্ন পবিত্র প্রার্থনায় একাগ্রচিত্তে নিবেদিতপ্রাণ যে শিক্ষায় শিক্ষিত হতে তাওয়াফের পরে সিজদাবনত হয়েই জীবনের সকল গুনাহ মাফের জন্য আরাফাতের ময়দানপানে রওয়ানা দেয় ও কুরবাণী সম্পন্ন করে -এমন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান-সহধর্ম জগতে আর দ্বিতীয় নেই। তাইতো আল্লাহ-র ঘরটি হতে নিজের ঘরে ফিরেও সেই সহাবস্থান-সহধর্ম-শান্তির শিক্ষা যদি না অন্যদের দেওয়া যায়, তবেতো হজ্বের আসল কাজটি-ই করা হয়না। অর্থাৎ অর্জন তবে বৃথা-ই বলা যায়, যা একজন পবিত্র হজ্ব পালনকারীর নিকট কাঙ্ক্ষিত না। আল্লাহতায়ালা সকল হজ্ব পালনকারীর অন্তরে হজ্ব-এর প্রকৃত অর্থটি জাগ্রত থাকবার তৌফিক দিন। আমার আজকের চাওয়া এবঙ প্রার্থনা এই। আমীন।

সবশেষে, আরও একটি কথাও বলি, আল্লাহ-র নির্দেশ কিন্তু এই যে – অক্ষমকে তোমার অর্জনের অংশীদার করতে না পারলে, তোমার প্রতিবেশি অভুক্ত কি না, তা না জানা ধর্মের শিক্ষা না। একজন ধার্মিক বিশেষতঃ প্রকৃত মুসলিম এমন হতে পারেনা। মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা কখনও অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে পারেনা, যেহেতু নবীজী (সাঃ) ছিলেন একজন সাচ্চা ঈমানদার পরম সহিষ্ণু নবী। আজ যে আমাদের চারপাশের অসহিষ্ণু-অমানবিক-উগ্র-ধর্মের অনুসারীদের প্রবল আক্রমণাত্মক কর্মকান্ডের জের ধরেই জ্বলন্ত জগতের অশান্ত পদচারণায় শান্তির ধর্ম পদদলিত …তাতে যে আল্লাহ-র গজব প্রতিনিয়ত বাড়ার সম্ভাবনা …এমন সত্যটি অনুধাবন করবার জন্যই আবেদন জানাই আগামীর মানুষদের। নইলে মানুষ নামধারী অমানুষের উল্লম্ফনে কেয়ামতের শিঙ্গাধ্বনিও হয়তো শুনবেনা কেউ-ই …এমন দৃশ্যপট ভাসছে চোখের সমুখে … আর মনে আসছে আমার ধর্ম-শিক্ষক-এর নিকট হতে ছোটবেলায় শেখা সুরার অংশ –

"রাব্বিন সুরনী আলাল কাওমেল মুফসেদীন"

অর্থ – হে আমার প্রতিপালক ! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন।

আমীন ! আমীন !

সেইসঙ্গে আরও প্রার্থনা – হে আল্লাহ ! মানব জাতিকে আপনার অপার রহমতের বারিধারায় সিক্ত করুন ! আমীন !