সর্বজনীন শিশু অধিকার ও আঞ্জুমান মুফিদুল-এ ক্যামন আছে ইয়াতিমরা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 20 Nov 2012, 11:15 AM
Updated : 20 Nov 2012, 11:15 AM

আজ সর্বজনীন বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস। যে দিবস কেবল জাতিসঙ্ঘ এবঙ জাতিসঙ্ঘের অন্তর্ভুক্ত উন্নত-উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক পালিত হয় ঠিকই, কিন্তু শিশুরা, সেইসব শিশুরা, যারা সমগ্র বিশ্বের একটি বিশাল অংশ – অধিকার বঞ্চিত শিশু, তারা কি জানে তারা কতটা অধিকার বঞ্চিত ? পত্রপত্রিকায়-মিডিয়া জুড়ে কত না বড়-বড় আয়োজনমালার সংবাদ পাই – দেখিও। এই একটি দিবসের কারণে কতিপয় বঞ্চিত শিশুদের ছবিসমেত বড়-বড় ব্যাক্তিত্বের, নেতানেত্রীর আলোচনার সচিত্র মুখ। অথচ তারপর তাদের জন্য যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেসব করা হয় কি হয় না কে আর খোঁজ রাখতে যায় !

আবার এও সত্য যে আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থার কল্যাণে এইসব বঞ্চিত শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগ-সাপোর্টে তারা অনেক ভাবে লালিত হবার সুযোগ পাচ্ছে। এবঙ আজকাল অনেক স্বেচ্ছাসেবী দলও এগিয়ে আসছে। কাজ করছে অধিকার বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে। কিন্তু তা ততোটা পর্যাপ্ত নয়। যতোটা হলে শিশুরা আর "অধিকার বঞ্চিত" নামে চিহ্নিত না হয়ে সমানাধিকার পেয়ে সুখের হাত ধরেই স্কুলে যাবে। একটি সুখী পারিবারিক পরিবেশে বাড়ার নিশ্চয়তা পেয়েই নিশ্চিন্তে স্বপ্ন-র দিকে হাঁটবে। এ বিশ্ব আজও সব শিশুর জন্য –

"একই আকাশ একই বাতাস
এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস" –
নেবার কিংবা পাবার অধিকার দেয়নি। সেই অবস্থানটি গড়ে দেবার ক্ষমতা যাদের হাতে তাদের হাতটি অতটা প্রসারিত হবার ক্ষমতা হয়তো ধরেও না। কারণ বিষয়টি আদতে একক কোনও সমস্যাও নয়, যে – বিশ্বের বৃহত রাষ্ট্র সমূহ একক ভাবেই উন্নয়নশীল / গরীব রাষ্ট্রের বঞ্চিত শিশুদের দায়িত্বভার বহনের অঙ্গীকারটি করে ফেলবে। এমনটি আশাও বাতুলতা।

কেবল আমাদের মতোন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের নেতা-নেত্রীর মুখনিঃসৃত বিশাল অঙ্গীকার-এর বাগাড়ম্বর শুনে অবাঙ-হতবাক হওয়া ছাড়া কার্যতঃ বিশাল শূণ্যতাই সম্বল আমাদের। ভাবছি – আদতেই আমরা হতভাগা জাতি-ই। নইলে যে দেশে অধিকার বঞ্চিত শিশুর হাহাকারেই কাটে রোজের দিনরাত্রি – সে দেশেরই নেত্রী-র জনসভার জন্য এককোটির অধিক খরচ করতেও বিন্দুমাত্র লজ্জিত হয়না বিবেক ! কাকে ধিক্কার জানাই – তারাতো চোখ থাকিতে অন্ধ। এবঙ বধিরের দলের নেতা-নেত্রী-সমর্থকের-জোটবদ্ধ "বিবেকহীন" এবঙ "হৃদয়হীন" – যাদের আমরা ভুলেও অধিকার বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করতে দেখিনি এদেশে। তারা যখন তাদেরই নেত্রীর মুখনিঃসৃত অঙ্গীকারের বাণী শুনতে কোটি টাকার আয়োজনমত্ত – তখন এদেশের বঞ্চিত শিশুদের অধিকারের বাণী বিচার চেয়ে কাঁদছে – বাংলার হাওয়ায়-হাওয়ায় ! তাদের তাতে কি এসে যায় ! শিশুরা কেঁদে মরুক ! তারা তো ভোটার নয় ! তাদের কথা ভাবার কি প্রয়োজন ! কি প্রয়োজন – অধিকার বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কোনও অঙ্গীকারের !

তারচেয়ে অনেক লাভ এখন এই সুযোগে চাকুরীর-উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারই যথেষ্ট ভোটের দাবী করার জন্য। গতবারতো জনগণ তাদের চারদলীয় জোটকে ক্ষমতায় বসায় নাই – তাইতো চারবছর ধরেই সংসদ বর্জনের আপোষহীন নীতি পালন করে আপোষহীন নেত্রী-র ইমেজ ধরে রেখেই এইবার জনগণের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা চাইবার দাবীতে এতো অঙ্গীকারের জোয়ারে ভাসানো ! তাতে বঞ্চিত শিশুরা বাঁচুক কি মরুক কি ভাসুক-ডুবুক ভেবে কি কাজ ! এখনতো কেবল ক্ষমতাই চাই ! রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতা ! যাতে শরিক দলের প্রধান চাওয়াটি সর্বাগ্রে পূর্ণ করাই চাই ! বছর ধরে শরিক দলের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীগণ হাজত ভোগ করছে – কি অন্যায় ! তাদের হাতে হাসিনা-সরকার হাতকড়া পরিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া চালাবার ধৃষ্টতা চালিয়েই যায় ! এবঙ বিএনপির মানসপুত্র তারেক জিয়া ও কোকো-র বিরুদ্ধেও মামলা দেয় ! এবার ক্ষমতাটি পেলেই আগে সুপুত্রদের মামলা খারিজ করে হাসিনাপুত্র জয়-কে চুরির দায়ে ফাঁসানো চাই ! নইলে জনগণ আবার কখন কি করে বসে – জনগণকে কোনও বিশ্বাস নাই ! এবঙ যদি রাষ্ট্রক্ষমতা এইবার আবার পাই – এবার আর ভুলের প্রশ্নই আসেনা – অন্তত টার্গেট মিসের ক্ষেত্রে – গ্রেনেড-বোমা-র বেলায় মিস করলে ক্ষমা করাই হবেনা কাউকে ! এমন কি তেমন ক্ষেত্রে শিশুমেলাও যদি টার্গেট হয় – তো, তাতে কি ! শত্রু মারতে ভুলের মাশুল দিতে চাইনা আর ! এই-ই হোক জনসভার মূল অন্তর্নিহিত অঙ্গীকার !

এসব ভাবতে গিয়েই মনে পড়ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিন্তু নিজের জন্মদিন অনেক বছর ধরেই শিশুদের সঙ্গেই উদযাপন করেন – বেশ লাগে তখন। একজন নেত্রীর এইটুকু শিশুপ্রীতিও নিশ্চয় অনেক। যেন –

"আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
নইলে মোরা রাজার সনে মিলবো কি স্বত্ত্বে" –

এমনই একটি দৃশ্যপট / আবহ তৈরী হয়ই অইসব শিশুহৃদয়ে – আমার ভাবতে ভালো লাগে।

অথচ, সকালের কাগজ খুলে বিরোধী নেত্রীর বিশাল জনসভা এবঙ ভাষণ-এর বিবরণ পড়েই অন্যতর সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবনাগুলোও লেখায় এসেই গেলো। মনটা ভারাক্রান্ত হবার কারণেই বিরোধী নেত্রীর ভাষণ-এর অন্তর্নিহিত রূপটিও ধরার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেক ভয়ঙ্করের সচিত্র রূপরেখা / চিত্রকলা মাথায় মারণাস্ত্রসম তাক করলো যেন। অতঃপর আবার সংবাদপত্রে মনোনিবেশ। এবঙ একটি পাতার এককোণেই পাই –

"সর্বজনীন শিশু অধিকার দিবস আজ" –

আমার সবসময়-ই সকল শিশু বিষয়ে সংবাদপাঠে সুবিধা বঞ্চিত শিশুর মুখ হৃদয়ে উঠে আসে। তখন আমার ঢাকার গেন্ডারিয়াস্থ আঞ্জুমান মুফিদুল-এর ইয়াতিম বালিকাদের কথা বিষম মনে পড়লো। আমি বছর চারেক ধরেই আঞ্জুমান মুফিদুল-এর ইয়াতিম বালিকাদের জন্য কিঞ্চিত খাওয়াদাওয়া নিই – নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে পাঠাই। এইতো গেলো রোজায় আমি ও আমার বড় ছেলে ওদের জন্য ইফতারের আয়োজন নিয়েই গেছি – দুইশো প্রায় শিশু – ওদের সেই সহাস্য খুশিমুখ প্রায়ই মনে পড়ে ও ভাবি – আহারে, অই ইয়াতিমরা কত অল্পেই কত আনন্দ পায় ! রাজ্যের বিলাসিতায় নিমগ্ন মানুষরা তা অনুভবও করতে পারবেনা কোনওদিন । আহ, আমরা যদি রোজই পারতাম ওদের নিরানন্দময় জীবন আনন্দনে ভরে দিতে ! নিশ্চয় আমাদের সবার ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র চেষ্টায় সেটি সম্ভব। স্বপ্ন দেখতে আর দেখাতে ভালোবাসি বলেই সেই লক্ষ্যেই আমার সকল লেখালেখি ধাবিত –
সেই দিনের দিকেই – যেদিন বাংলার সকল শিশুমুখ ভরবে আনন্দনে –

"আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে
বিরাজ সত্য সুন্দর"

– সুন্দরের হাতটি যেন ধরতে পায় আমার দেশের বঞ্চিত সব শিশুরা – আজকের –

"সর্বজনীন শিশু অধিকার দিবস"

নিয়ে চাওয়া এই।

২০ নভেম্বর ২০১২ ইং