জীবন্ত একজন কিংবদন্তীতুল্য কলামিস্ট-সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 12 Dec 2012, 12:53 PM
Updated : 12 Dec 2012, 12:53 PM

আজ ১২-১২-১২ ইং বাংলা ভাষাদিবস একুশ-এর অমর প্রভাতফেরীর গীতিকার শ্রদ্ধেয় কলামিস্ট-সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী-র ৭৮তম জন্মদিন। ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের উলানিয়া-র বিখ্যাত জমিদার বাড়িতে জন্মেছেন বরেণ্য মানুষটি। তরুণ বয়সেই অমর একটি গানের জন্য বাংলা ভাষার অবিস্মরণীয়-প্রাতঃস্মরণীয় ব্যাক্তিত্বের আসনে আসীন হওয়া একজন মানুষ। বিশ্বের বাঙালী চিরদিন অমর গানটির জন্যই তাঁকে স্মরণ করবে। এবঙ যতবার গানটি গীত হবে যখন যেথায় – তিনিও ততবার তাঁরই গানের ভাষায় স্মরণীয়-বরণীয় হবেন। এই জন্যই তিনি জীবন্ত কিংবদন্তীতুল্য মানুষ।

তিনি একাধারেই রচেছেন অনেক কবিতা ও গান সহ উপন্যাসও। বর্তমান প্রজন্ম তাঁকে হয়তো একজন কলামিস্ট ও সাংবাদিক হিসেবে জানে, অথচ, তিনি নন্দিত একজন কথাশিল্পীও। মাত্র চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়েই আব্দুল গাফফার চৌধুরী লিখতে থাকেন। অবশেষে তারুণ্যদীপ্ত বয়সেই খ্যাতিমানের তালিকায় তাঁরই নাম লিখিত হয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তাঁর স্মৃতিচারণাধর্মী কলাম ও পরবর্তীতে বই – "নিরুদ্দিষ্ট নয়মাস" একটি দলিলসম রচনা। তিনখানা ছোটগল্পের বই – "কৃষ্ণপক্ষ", "সুন্দররাই সুন্দর", এবঙ "সম্রাটের ছবি"। "সম্রাটের ছবি"-র জন্য অর্জন করেছেন ইউনেস্কো-র পুরষ্কার। "চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান", "নাম না জানা ভোর", "শেষ রজনীর চাঁদ" এবঙ "নীল যমুনা" তাঁর প্রখর চেতনাধর্মী তিনটি উপন্যাস।

প্রবাসে থেকেও পাঠকপ্রিয় নিরলস লেখক তিনি। দেশি-বিদেশি অসংখ্য দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিতই লিখছেন দুহাতে অনেক কলাম। তাঁর লেখার অন্যতম আকর্ষণীয় দিক এই যে তিনি অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় তুলে আনেন সমসাময়িক বিষয়বস্তু। তীক্ষ্ণ অথচ দারুণ সহজ লেখনীতে পাঠক হৃদয়জয়ী বক্তব্য উঠে আসে আব্দুল গাফফার চৌধুরী-র সকল কলামেই। কোনওরকম বিচ্যূতি ছাড়া জীবন্ত ইতিহাস বর্ণনা ঝর্ণাধারার মতোই তাঁর মেধাবী হাতে লিখিত হয়ে আসছে এ যাবতকাল ধরেই। যে কারণে বাংলা একাডেমী পুরষ্কারেও ভূষিত হয়েছেন। একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরষ্কারও পেয়েছেন শ্রদ্ধেয় এই সাংবাদিক-কলামিস্ট-লেখক।

বায়ান্নতে যেমন অমর সঙ্গীতের বাণীর জন্ম দিয়েছেন, একাত্তুরেও তেমনই ভূমিকা রেখেছেন "মুজিবনগর সরকার"-এর প্রধান মুখপত্র "জয়বাংলা"-র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপূর্ণ প্রকাশনার মধ্য দিয়েই। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে কলম সৈনিকের দায়িত্ব যথাযথ পালন-এর সঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে "মোটিভেটর"-এর দায়িত্ব পালন করেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে।

বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট নিয়েই তাঁর গভীর চিন্তা প্রসূত লেখালিখি আজও অব্যাহত গতিতে সচল। এবঙ সময় পেলেই ছুটে আসেন প্রিয় বাংলাদেশে। এই প্রবীণ বর্ষীয়ান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বরেণ্য লেখকের ৭৮তম জন্মদিনের জন্য গভীর শ্রদ্ধা সমেত লাল গোলাপ শুভেচ্ছা ও লাল সালাম। তিনি শতায়ু হোন। সুস্বাস্থ্যে বেঁচে থাকুন আরও অনেক কাল। এবঙ দুহাতে লিখুন তাঁর মেধাবী-ক্ষুরধার-সহজ-সাবলীল ভাষায়। তাঁরই হাজার ভক্ত পাঠকদের একজন হিসেবে তাঁকে স্মরণ করছি – তাঁরই গানের ভাষায় –

"আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি ।।
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি ।।"

না, পারিনা। আমরা আমাদের ভায়ের স্মৃতি – আমার সোনার দেশের রক্তস্মৃতি কোনদিনও ভুলিতে পারিনা। প্রিয় লেখক-কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী, বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রমণে আপনি মহান সৈনিকের মতোই আমাদের মাথার 'পরে পথ-প্রদর্শকের ভূমিকায় থাকুন অপ্রতিরোধ্য ও নমস্য মানুষ হয়ে।

১২-১২-২০১২ ইং