অজস্র আমের মুকুলে পড়শির ছাত যে হাসে

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 7 Feb 2015, 07:06 AM
Updated : 7 Feb 2015, 07:06 AM

কাল বিকেলে পড়শির ছাতের দিকে নজর পড়তেই দেখেছি, এই মাঘের শেষে দারুণ আমের মুকুলে আম গাছের ডাল সবুজ পাতাসুদ্ধো নুয়েছে আমার জানলাতলে। দেখে সত্যিই মুগ্ধতা এবঙ ভালোলাগা – যেন বা অনেক দিনের পরে। সঙ্গেসঙ্গেই মোবাইলে করেছি ক্লিক। অনেক দিন আশপাশের প্রাকৃতিক সুন্দর পর্যন্ত নজর এড়িয়ে হাওয়া যেন। কারণ একটাই বাংলাদেশের প্রেট্রল বোমা কখন চোরাগোপ্তা কয়লা বানাতে কার না অকস্মাত মৃত্যুপরোয়া হয় – তেমন এক অজানা আতঙ্কের বিস্তার। মুখে যতই আমরা অমন রাজনীতি এবঙ তার পেছনে নেতানেত্রী ও দলের নির্দেশের নিকুচি করি – আদতে অসহায় হয়েই দেখছি আমরা প্রায় মাসখানেক ধরে পেট্রল বোমার তান্ডব চিত্র রোজই প্রায়। তো, বেঁচে থাকা অর্থাৎ আমাদের গায়ে যে বোমা পড়েনি – বিস্ময়ের বুঝি বা সেই খবরটাই।

এমতাবস্থায় হঠাৎ আজ আমার অই আমের মুকুল ছাওয়া পড়শির ছাতের ছবিটি দেখতে পাওয়াটা হঠাৎ আনন্দে বিহ্বল হওয়ার মতোন বার্তা বিধায় ছবি ক্লিক ও পোস্ট না করে কি পারি? করছি তা-ই। তখন মনে এমন এক হঠাৎ অনুভব – ছাতের হাসি ছুঁয়েছে বুঝি বেদনা আহাজারিময় শতেক বোমাপোড়া – শঙ্কানীল বাতাস ও !

তখন মন-ই বলছে যেন – দেখরে চেয়ে – ও মন, আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত হলেও প্রকৃতি ক্যামন করে হাসির ছোঁয়া ছুঁইয়ে দিয়ে খানিক হৃদয় জাগায়। বিধাতার প্রকৃতি তার নিয়মে চলে। মানুষ প্রকৃতির নিয়মে অন্যায় আগুন দিতে চাইলে তার ক্ষয়ক্ষতির খেসারত মানুষকেই বহন করে হারাতে হয় অনেক মূল্যবান জীবনেরই ধন। জগত জুড়েই হয়তো একদিকে চরম সর্বনাশ – অপরদিকে আবারও জন্মের আবাহন – ফুলে ও ফসলে ভাঙন-ভাঙচুর-মৃত্যু হতেও আবারও ঠিকই জেগে ওঠার ডাক। জীবনেরই ডাক। জীবন বিধাতার বিধান। এমনই হাসিকান্নায়, আনন্দ-বেদনাময়। বুঝি – অনেক আগুনে জারিত হয়ে তবেই হাসে, হাসায় সবহারাদের আবার।

যাহোক, প্রায় একযুগের মতো সময় চক্রে প্রতিবছরই দেখি এমন পড়শির ছাতের আমের মুকুলভর্তি ছবি – অতঃপর হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক খসে পড়ার পরেও ডালের ফাাঁকেফাঁকে সবুজ কাচা আমের ডাঁসা দারুণ হাতছানি – ইচ্ছে কি করে না কিশোরি বেলার মতোন – চুরি করেই আঁকশি লাগিয়ে কাচাআম ঝাঁকিয়ে কিছু ফেলি ও ভর্তা বানাই কাচা মরিচ, ধনেপাতা, লবণ, চিনি, কাসুন্দি মেখে – সবাই খাই মজাসে – আহ এখন কি আর তেমন পারি? এবঙ পড়শিও তেমন নেই এখন সেই আগের কালের মতোন। আজকের পড়শি প্রায় কাউকে না দিয়েই একলা খাওয়া পড়শি ! তো, কেবল ছবিই দেখি … পোড়াকপাল বলা যাবে না ঠিক। কারণ এখন বাজারে মেলে নতুন কাচাআম। বাজার হতে কিনেই আনি আমরা একশোটাকা / দেড়শো টাকা কেজির কাচাআম। এবঙ ভর্তাও বানিয়ে খাই।

মাঘ। ১৪২১ বঙ্গাব্দ।