ভালোবাসলে সমাজ বিপথে যায়?

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 14 Feb 2016, 08:44 PM
Updated : 14 Feb 2016, 08:44 PM

বাংলার প্রাচীন কাল হতেই ফাল্গুন মাসের বসন্ত কালের লিলুয়া বাতাসে মন ক্যামন করে। হৃদয় জাগে। কোনও ধর্মমতেই ভালোবাসলে পাপ হয় না। ভালোবাসা অনেক রকমের। কেবল তরুণ-তরুণীদের নয়। বয়সী, শিশু সবার মনেই ভালোবাসার বীজ রোপিত হয় প্রথম মাতৃক্রোড়ে। অতঃপর সে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বয়স যত বাড়তে থাকে ততই। সে প্রেম মায়ের সনে। বাবার সনে। ভাইবোনের সনে। এবঙ পাড়াপড়শি, স্বজন, বন্ধুদের সনেও। ধর্ম সেথায় ব্যারিকেড হওয়া উচিত না। যদি তা হয়, তবেই সমাজে বিদ্বেষবিষ ছড়ায়। প্রেম যুগেযুগেই মানব মনের চিরন্তন ভালোবাসার বন্ধন। তাতে যুবসমাজ বিপথে যাবার ভয় ছড়ানো নিতান্তই বালখিল্যতার নামান্তর। যুবসমাজ বরং বিপথে যায় সমাজ ভালোবাসাহীনতার নমুনা হলে। সমাজে পারস্পরিক ভালোবাসার সম্পর্ক রচিত না হলে হানাহানিতে ডোবে। তখন অন্ধকারের দাপটে তলিয়ে যায় ভালোবাসার অমল আকাশ। ভালোবাসা বলতে বেলেল্লাপনা এমন ধারণা ভালোবাসাকে কলুষিত করার কুটিল খেয়াল। ভালেবাসা মানে বেহায়াপনা নয়। ব্যাভিচারও নয়। ভালোবাসার মানে অশ্লীলতা নয়। প্রকাশ্যে যে ভালোবাসার সহজ স্বাভাবিক আবাহনীতে মানব মনের অন্ধকার ঘুচিয়ে অন্যতর আলোর বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হাজার মনে – সেখানে পাপ পালিয়ে যায়। তখন মন কঠিন নয়, নরম হয়। মায়ের প্রতি, বাবার প্রতি, পরিবারের প্রতি, মাটির প্রতি, দেশের প্রতি, দশের প্রতি, প্রেমিক প্রেমিকার প্রতি ও প্রেমিকা প্রেমিকের প্রতি ভালোবাসার টানে একটি দিন বিশেষভাবে বিশ্বময় ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে পালন করলে কি কারণে দোষের হবে? জগতে অন্যায়, পাপের বোঝা বেড়েই চলেছে – সেখানে ভালোবাসা একটি মাত্র উপায় মানুষকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে পাপাচার রহিত করবার। আদতে আজ ভালোবাসার পরিচর্যা জরুরী হয়ে পড়েছে। ভালোবাসা আদতে পবিত্র একটি বন্ধন। যে ভালোবাসা অবৈধ কোনও উস্কানিময় বিপথে ঠেলে দেবার কথা বলে না – বরং বলে – এসোগো অমল ভালোবাসার সম্পর্ক গড়তে / নীড় রচতে তাতে সমাজ রসাতলে না গিয়ে সুষ্ঠভাবে বাঁচার কথা।

এটাও মিছে নয় যে আজকাল ভালোবাসার মানে অনেকে আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক মলিনতায় শালীন সৌন্দর্যহানি ঘটিয়ে দিয়ে ভালোবাসাকে সস্তা পসরা করে ফেলছে। বাণিজ্য চলছে। বহুজনের পকেট ফাঁকা হবার অন্যতর ভালোবাসার বেচাকেনা ভালোবাসাকে খেলো করছে। তবু, সমাজে ড্রাগ, নারীর মর্যাদাহানি অথবা নির্মমতার চাইতে ভালোবাসা দিবসে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করাটি মন্দ না। পকেটে পয়সা থাকলে ফুল কিনলে / উপহার / খাওয়া ভালোবাসা দিবসে নিশ্চয় পাপ না।

এই যে আজ আমিও স্বজনের বিশেষ আমন্ত্রণে ভালোবাসার গানের আসর হতে হৃদয় ভরে ফুলেল সুরে নতুন করে হোলাম উজ্জীবিত – তাতে কি বিপথগামী হোলাম আমি? মোটেও নয়। ভালোবাসা কে ছড়িয়ে দেওয়া মানে প্রাণিত হবার নতুন প্রণোদনা।

তাহলে ফাল্গুনের ফুলেল বাতাসে ভালোবাসার আবাহনী ছড়িয়ে পড়ুক হৃদয় হতে হৃদয়ে আরও অধিক হারে। "মধুর বসন্ত এসেছে" বলে গানের সুরে মানুষ ভালোবাসার প্রতীক হতে শিখুক।

ফাল্গুন। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা। বাংলাদেশ।