সৌদি আরবে নতুন ডিজিটাল পাসপোর্ট বিড়ম্বনা

প্রবাসী
Published : 10 March 2014, 06:10 AM
Updated : 10 March 2014, 06:10 AM

শুরুতেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিডিব্লগ কর্তৃপক্ষকে। প্রান প্রিয় বিডিব্লগ নতুন নতুন ফিচার নিয়ে হাজির হয়েছে (যদিও প্রথম প্রথম বেশ বেগ পেতে হয়েছিল) যা প্রশংসার দাবী রাখে। সকল ব্লগার বন্ধুদেরকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছে, শুভকামনা।

আমি আজ যে বিষয়টির অবতারনা করতে চাচ্ছি তা একটি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকগনের কাছে নিতান্তই গুরুত্বহীন! রাষ্ট্রের কর্তাগনের এ দিকটাতে সুনজর দূরে থাক একটু নজর দেওয়ারও বুঝি ফুসরত নেই। যদি সে সময়টুকুই থাকত তাহলে এতদিন বিষয়টির সুহারা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

শিরোনামে যেমনটি বলেছি "সৌদি আরবে নতুন ডিজিটাল পাসপোর্ট বিড়ম্বনা" আমরা যারা প্রবাস যাপনকারী তাদের অন্তরে দেশের প্রতি আকর্ষণ কতটুকু তা প্রবাস যাপনকারী প্রত্যেকেই অনুধাবন করতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ননা আমার এই পোষ্টের উদ্দেশ্য নয়।

দেশের মাটিতে ব্যাক্তির পরিচয়ের প্রথমেই মা-বাবার নাম যতটা গুরুত্ববহ, প্রবাসে একজন মানুষের পরিচয়ে ততটুকুই গুরুত্বপূর্ণ হল তার পাসপোর্ট। একটা দেশের পাসপোর্ট সে দেশের পরিচয় বহন করে। অনেক সময় দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিচয়ও ফুটে উঠে সে দেশের পাসপোর্টের মাধ্যমে। বাংলাদেশের নতুন ডিজিটাল পাসপোর্টে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিচয় হয়তো ফুটিয়ে তুলার প্রচেষ্টা ছিল পাসপোর্টে বিভিন্ন প্রকার ইমেজ সংযোজন করে। যারা এই পাসপোর্টের ডিজাইন করেছেন তাদের প্রসংসা করতেই হয়।


(পাসপোর্টের ইমেজগুলো সেটাই ইংগিত করে)। 

কর্তৃপক্ষ হয়ত দেশের কথা ভাবতে গিয়ে পারিপার্শ্বিকতারর দিকটি বেমালুম ভূলে ছিলেন। বিশেষ করে এই পাস্পোর্ট বহন করে দেশের মানুষ যে সব দেশে ভ্রমন করবেন তা সেসব দেশের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সে দিকটি তাদের বিবেচনায় একেবারেই ছিল না বলে মনে হচ্ছে। যার খেসারত দিচ্ছেন নতুন ডিজিটাল পাসপোর্ট প্রাপ্ত সৌদি আরব প্রবাসীরা। 

আপনারা জানেন বহু প্রতিক্ষার পর সৌদি আরবে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ অবৈধ বাংলাদেশী বৈধ হয়েছেন। বৈধ হয়ে এসব প্রবাসীর অনেকেই দেশে ফেলে আসা তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা পূষন করছেন। যাদের অনেকেই তিন থেকে আট-দশ বছর যাবত দেশে যেতে পারেননি এ দেশে অবৈধ ছিলেন বলে। বৈধ হওয়ার পর তাদের প্রথম আকাংখা ছিল দেশের আর পরিজনদের জন্য তাদের হৃদয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশমিত করতে দেশে যাওয়া। এর জন্য তারা মেয়াদ উত্তীর্ন পাস্পোর্ট জমা দিয়ে নতুন ডিজিটাল পাসপোর্ট হাতে পায়। নতুন প্রাপ্ত পাসপোর্টটি কোম্পানীতে জমা দেয় তাদের ডাটা নতূন পাসপোর্টে স্থানান্তর করার ও রি-এন্ট্রি ভিষা পাওয়ার জন্য। এর পর তারা বুঝতে পারছেন এ পাসপোর্টে তাদের ভিষা ইনফরমেশন সৌদি সরকার ট্রান্সফার করছে না, ফলে রি-এন্ট্রি ভিষাও পাচ্ছেন না। সৌদি সরকার কেন এমন করছেন না তার কোন সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলঃ
১। বাংলাদেশ সরকার নাকি নতুন এই পাস্পোর্ট সম্পর্কে সৌদি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি।(বিশ্বাস যোগ্য কারন হতে পারে না)
২। পাসপোর্টে অত্যাধিক ইমেজ সংযোজন করা হয়েছে যার কিছু ইমেজ সৌদিআরবের ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমার মত শত শত প্রবাসীর এ কারনটাকেই মূখ্য কারন বলে মনে হচ্ছে।
কারনঃ
১। পাসপোর্টটা দেশের সমগ্র এলাকার জন্য প্রযোজ্য, পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনাতে বসবাসকারী লক্ষাধিক বাংলাদেশিও এ পাসপোর্ট নিয়েই সেখানে অবস্থান করবেন।
২। আপনারা যারা পবিত্র নগরী দু'টিতে গিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন এর প্রবেশ পথে স্পষ্ট করে লেখা "NON MUSLIM NOT ALLOWED".
২। যেখানে অমুসলিমদের প্রবেশে নিশেদাজ্ঞা রয়েছে সেখানে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী সেখানে এই পাসপোর্ট যাতে রয়েছে দেবদেবীর মূর্তি আর মন্ধিরের ছবি। আমার মনে হচ্ছে এটাই প্রধান কারন যার জন্য নতুন পাসপোর্টে ভিষা ট্রান্সফার হচ্ছে না।

বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে এ ব্যাপারে এখনো যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না যা দুঃখজনক।

খুবই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে দেশের সংবাদ পত্রে এ সম্পর্কে কোন রিপোর্ট দেখিনি আজ অব্ধি। দেশের অশিক্ষিত প্রবাসী জনগোষ্টির বিরাট একটা অংশ সৌদিআরবে আছেন। তাই এসকল ভোক্তভোগী প্রবাসীদের এ সমস্যার সমাধানে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।