স্টিফেন ডান-এর দুটি কবিতা

শামস আল মমীন
Published : 3 July 2009, 05:20 PM
Updated : 3 July 2009, 05:20 PM

[স্টিফেন ডান কবিতার বই ডিফারেন্ট আওয়ারস (২০০০)-এর জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পান ২০০১ সালে। বিশ বৎসর বয়সে কর্পোরেট চাকুরিতে ক্রমাগত ভালো করতে থাকায় ভয় পেয়ে চাকুরি ছেড়ে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন তিনি। এরপর কবি সস্ত্রীক এক


……..
স্টিফেন ডান (Stephen Dunn, জন্ম. কুইনস, নিউ ইয়র্ক, ১৯৩৯)
……..
বৎসরের জন্য স্পেনযাত্রা করেন। সেখানে উপন্যাস লিখবার চেষ্টা কবিতা রচনায় মোড় নেয়। এ সময়ে কবির সে সময়কার একমাত্র সাহিত্যিক বন্ধু স্যাম টোপারফ তাঁর কাছে বেড়াতে আসেন। তিনি পরামর্শ দেন কবিতা ঠিক পথে এগুচ্ছে। স্টিফেন ডান এরপর পুরোপুরি কবিতায় মন দেন। বিভিন্ন কলেজে কবিতা এবং ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর শিক্ষক, সম্পাদক তিনি। পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন।

কীভাবে কবিতা লেখেন সে ব্যাপারে বলতে গিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কবিতা যখন শুরু করেন তখন কোনো নির্দিষ্ট ডিজাইন থাকে না তাঁর। কখনো কোনো ছবি থেকে কখনো কোনো আইডিয়া দিয়ে অগ্রসর হন তিনি। এবং তাঁর স্বভাব হলো যা তিনি বলতে চান তা বলা থেকে বিরত থাকেন। ফলে তাঁর কবিতার আগানোটি এক অর্থে নানান বাদ দেওয়ার সমাহার যেখানে তিনি হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলেন।]

অনুবাদ: শামস আল মমীন

বাড়িতে নিয়মিত যা যা করি

মা যখন মারা গেল
ভেবেছিলাম: এবার একটা মৃত্যুর কবিতা লেখা হবে।
ওটা ক্ষমার অযোগ্য

তবুও নিজেকে ক্ষমা চোখে দেখি
মায়েদের ভালবাসা পেয়ে
ছেলেরা যেমন করতে পারে।

তাঁর কফিনে স্থির চেয়ে থাকি
যদিও জানি কতকাল এই শুয়ে থাকা,
কত জীবনের সুখ স্মৃতি

মগজের কোষে।
ঠিক বলা মুশকিল
কী ভাবে আমরা বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠি,

কিন্তু মনে আছে আমার, মাত্র
বারো আমি, ১৯৫১, পৃথিবী তখনো
আমার কাছে অপরিচিত।

আমি মার কাছে (ভয়ে ভয়ে)
তার স্তন দেখার আবদার করি
কোনো দ্বিধা কিম্বা লজ্জা ছাড়াই
মা আমাকে তার কামরায় নিয়ে যায়
আমি স্থির তাকাই ওদের দিকে,
সাহস হয়নি আর কিছু জিগ্যেস করি।

আজ, এতদিন পর, একজন বলে
কর্কট রাশির জাতকেরা মায়ের আশির্বাদ না পেলে
অভিশপ্ত হয়, কিন্তু আমি, কর্কটরাশি হয়েও,

নিজেকে আবার ভাগ্যবান মনে করি। ভাগ্যবান আমি
মা আমাকে তার
স্তন দেখিয়েছিলো

যখন আমার বয়সী
বালিকারা নারী হয়ে উঠছিলো,
কপাল আমার

সে আমাকে কমবেশি শাস্তি
দিতে পারতো। যদি আমি তার
স্তন ছুঁতে কিম্বা
চুষতে চাইতাম,
তাহলে সে কী করতো?
মা স্বর্গ বাসিনী

যে আমাকে নারীদের মাঝে
স্বাভাবিক দেখতে চেয়েছিল,
এই কবিতাটি

সেখানে নিবেদিত
যেখানে আমরা থেমে গেছি, অসম্পূর্ণতার কাছে
যা ছিল চাওয়ার অধিক
এবং
আমরা আবার বাড়ির নিয়মিত কাজে
ফিরে যাই ।

স্মিথভিল মেথডিস্ট চার্চে

পুরা সপ্তাহ আর্টস এ্যান্ড ক্রাফটস হওয়ার কথা,
কিন্তু "জিসাস সেভস" বোতাম নিয়ে
মেয়েটি যখন ঘরে ফিরে, বুঝলাম কী চাল
চলছে, সেই পুরানা কৌশল।

ছোট্ট বন্ধুদের ভালই লেগেছে তার।
কাগজ ভাঁজ করে কিম্বা মুচড়ে মুচড়ে পুতুল বানানো
বন্ধ করে যখন ওরা গান গাইছিলো, সেও বেশ আমোদে ছিল।
কী এমন খারাপ হতো।

জিসাস ভালো মানুষ, ভালো মানুষকে ভক্তি
আর অপকর্মে তাল মিলিয়ে চলা
এও করতে হয়,
ওটাও আবার দুঃখজনক।

আমরা বলি, ঠিক আছে। শুধু এক সপ্তাহ। কিন্তু যখন
সে "জিসাস আমায় ভালোবাসে, বাইবেল বলে তাই,"
গাইতে গাইতে বাড়ি ফেরে, ভাবলাম ব্যাপারটা নিয়ে
কথা বলা দরকার। আমরা কি বলতে পারি

জিসাস তোমাকে ভালোবাসে না? তোমাকে কষ্ট দিতে
বাইবেলের মতো পূন্য-গ্রন্থের কথা কেউ কেউ বলে,
এ কথা কি তাকে বলা যায়? কিছু না বলেই
আমাদের কথা শেষ হয়।

সেও তো বহুদিন আগে যখন জিসাসকে আমরা নিয়তি
অথবা বন্ধুর মতো করে চেয়েছিলাম,
ভক্তিও করেছিলাম আর ভাবতাম তিনি
যথার্থই মৃত:,

আমাদের ছেলেমেয়েরা তাঁকে লিংকন
অথবা থমাস জেফারসনের মতই একজন ভাবতো।
অল্পদিনেই আমরা বুঝে ফেলি: কোনো শিশুকেই
তার মনের বিরুদ্ধে বোঝানো কঠিন।

শুধু মন ভোলানো গল্পই তা পারে, কিন্তু
এর চেয়ে ভালো গল্পও আমাদের জানা নেই।
প্যারেন্টস নাইটে আর্টস এ্যান্ড ক্রাফটস
অ্যাপেটাইজারের মতই

ছড়ানো ছিটানো ছিল। আমরা চার্চের
ভেতরে গিয়ে বসি
ছেলেমেয়েরা পবিত্র নৌকা আর ঈশ্বরের জ্বয়ধ্বনি
করে গান গায়

এবং জিসাসের জন্য লম্প-ঝম্পও করে। কোনটা
তামাসা আর
কোনটা প্রার্থনা এই জীবনে প্রথম বুঝে
উঠতে পারিনি।

ইভ্যলুশন ঐন্দ্রজালিক কিন্তু এতে বীরদের কপাল পোড়ে।
"ইভ্যলুশন লাভস ইউ'"
সন্তানকে এ কথা বলা যায়!
ধ্বংস নিয়ে যত্তোসব ফালতু গল্প এবং

কয়েক শতাব্দী চমকে দেওয়ার মতো কিছুই ঘটেনি।
আমার মেয়ের জন্য একটা ভালো গল্পও আমার
জানা ছিল না অথচ সে আজ উদ্ভাসিত। গাড়ি করে বাড়ি
যেতে যেতে সেই গানগুলো সে গাইছিলো

মাঝে মাঝে জিসুর জন্য উঠেও দাঁড়ায়।
গাড়ি চালানো, দোল খাওয়া কিম্বা
মনে মনে সুর মেলানো ছাড়া আমাদের
কিছুই করার ছিল না।