এসো ভাই, এসো বোন- গড়ে তুলি আন্দোলন

শামীম আরা নীপা
Published : 7 Feb 2013, 09:03 AM
Updated : 7 Feb 2013, 09:03 AM

সকাল ৮ টা থেকে আমাদের অবস্থান আন্দোলন বিক্ষোভ আরো তড়িৎ গতিতে চলছে … দলে দলে চলে আসেন শাহবাগ চত্বরে তথা প্রজন্ম চত্বরে … আমাদের সংগ্রাম চলছে , চলবেই … আসো ভাই , আসো বোন – গড়ে তোল আন্দলন… আসো ভাই , আসো বোন – গড়ে তোল আন্দোলন… আসো ভাই , আসো বোন – গড়ে তোল আন্দোলন…

শুক্রবার ৮ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ চত্বরে মহা সমাবেশ সাধারন মানুষদের … দলে দলে ঢাকা ও ঢাকার বাহির থেকে বন্ধুরা চলে আসুন, আমাদের সাথে এক হয়ে আমাদের কে শক্তিশালী করুন যেন আমরা এবার আমাদের অস্তিত্বের লড়াই এ জয়ী হতে পারি , আমাদের চেতনার লড়াই এ জয়ী হতে পারি … আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তারা যেন আমাদের চলমান প্রতিবাদে সফল হয়ে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গেয়ে উঠতে পারি – জয় বাংলা, বাংলার জয় … জামাত শিবির এর রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে এবার আমরা উৎখাত করবোই করবো … জামাত শিবির এর রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়বো এবার ইনশাল্লাহ…

আইনী যত জটিলতা ই থাক , কাদের মোল্লার ফাঁসি আমাদের নিশ্চিত করতেই হবে এই আন্দোলনের মাধ্যমে … কোন আপোষ নয় … রাজাকারের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হতেই হবে এবং আমরা আমাদের আকাংক্ষিত বিচারের রায় আদায় করেই ছাড়বো- এই অঙ্গীকারবদ্ধ আমরা সবাই… আপনারা যে যেখানে আছেন প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, আন্দলোন গড়ে তুলে আমাদের সবাই কে সফল করুন এবং শাহবাগ চত্বরে শুক্রবারের মহাসমাবেশে দলে দলে যোগদান করে আমাদের প্রতিবাদ আন্দোলন আরো জোড়দার করে নিজেদের এবং সর্বোপরি সমস্ত বাংলাদেশীদের অস্তিত্ব এবং জাগ্রত চেতনা কে নিশ্চিত করেন…

গতকাল রাজাকার কসাই কাদের এর বিচারের রায় শুনে বিমর্ষ নির্বাক হয়ে ভাবছিলাম রাজপথ ছাড়া আর কোন গতি নাই … একটাই ইচ্ছা , বাসনা হলো এবার রাজপথে নামবো … শুরু করলাম ফোন করা আর আলোচনা … যখন রাজু চত্বরে যাওয়ার জন্য বের হলাম তখনো জানতাম না যে Online Bloggers association প্রতিবাদ ঘোষনা করেছে … শাহবাগ পৌঁছে জানলাম ব্যাপারটা … খুশীতে মন ভরে উঠেছে … মশাল মিছিল শেষ করে শাহবাগ পৌঁছাতেই দেখলাম আস্তে আস্তে মানুষের ভীড় বাড়ছে … আরো খুশী হলাম … নিরপেক্ষ সাধারন মানুষ গুলো জেগে উঠেছে … একটা সময় দেখি ছাত্রলীগ এসে যোগ দিয়েছে … ব্যাপার টা আমার কাছে পজিটিভ লাগেনি … কারণ যারা ক্ষমতার লোভে যে কোন হীণ পর্যায়ে নামতে পারে তাদের কে বিশ্বাস করা যায় না…

যে সরকার এমন রায় দিতে পারে তারা কখনো আমাদের এই সোচ্চার আন্দোলন কে সমর্থন করতে পারে না … আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগ কখনো চাবে না আমাদের এই বিক্ষোভ- প্রতিবাদ সফল হোক — তারা আমাদের ভেতর ঢুকে আমাদের সাথে আবার রাজনীতি শুরু করবে – এতে কোন সন্দেহ নাই … সরকারের উপর বিশ্বের বহু দেশের চাপ আছে যুদ্ধাপরাধীদের যেন ফাঁসির রায় না দেয়-সেই ব্যাপারে কিন্তু সরকারের কাছে কারা বড়??? ১৬ কোটি মানুষের চেতনার কোন মুল্য নাই??? লাখো শহিদের, লাখো বীরাঙ্গনার ত্যাগের, লাখো মুক্তিযোদ্ধার অক্লান্ত শ্রম আর চেতনার কোন মুল্য নাই??? কোটি বাংলাদেশীর আকাঙ্ক্ষার কোন মুল্য নাই??? কোটি বাংলাদেশী রায়ের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে প্রচণ্ড ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা, বাসনা নিয়ে তাকিয়ে ছিলো প্রশাসনের দিকে আর তারা আমাদের চেতনা কে সেই একাত্তরের হায়েনার মতো ধর্ষণ আর খুন করলো !!! সরকারের কাছে কে বড়??? আমরা কি আসলেই স্বাধীন হতে পেরেছি??? আমার স্বল্প বোধ বলে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য … যুদ্ধ করতে ১০০% প্রস্তুত বীর বাঙ্গালী … প্রহসনের বিচার আর নির্বাচন জিতার রাজনীতি কে নির্মূল করতে প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ করবো আমরা …

বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় শুনে আমি খুশি হইনি কারণ ঐদিন আমার ক্ষুদ্র জ্ঞ্যান এবং বোধ যে শংকা টা করেছিলো তা কাদের মোল্লার বিচারের রায় হওয়ার পর একেবারে মজবুত হয়ে গেলো … যদিও অনলাইন ব্লগার দের কেউ কেউ আওয়ামীলীগ সমর্থক তারপর ও তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোন দ্বিধা ছিলো না, এখন পর্যন্ত নাই কিন্তু কথা হলো কতক্ষণ উনারা দলীয় চাপ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবেন??? যদি উনারা দলীয় চাপ থেকে নিজেদের কে বাঁচাতে না পারেন তাহলে উনারা কি করবেন??? দল ছাড়বেন নাকি সংগ্রামী জনতা কে ছাড়বেন – এটা একটা বড় প্রশ্ন সামনে আছে … দলীয় মানুষ নিরপেক্ষ হতে পারেন না , থাকতে পারেন না পরিস্থিতির কারণে তবে ব্যাতিক্রম ও আছে … সেই ব্যাতিক্রম ধারা কে বিশ্বাস করেই এখনো পথ চলছি …

আমাদের এই আন্দোলনের প্রথম কথা ই হচ্ছে এখানে কেউ দলীয় আচরন করতে পারবে না , দলীয় কোন ব্যানার ব্যাবহার করতে পারবে না, কোন দলীয়করন হবে না তারপর ও কেউ কেউ দলীয় অবস্থান নিতে চেষ্টা করেছে, ব্যানার – পতাকা নিয়ে এসেছে — পায়তারা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতি রাজনিতি খেলার … গাছে তুলে মই কেঁড়ে নেয়ার মত ঘটনার আশংকায় অনেকেই আতংকিত … এই আতঙ্কের প্রতিকার আমাদের ই করতে হবে … কড়া নজরদারীর ভেতর থাকতে হবে … এমন আচরণ দেখার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা ও নিতে হবে … কারা ব্যাবস্থা নিবে ??? আমরা ই ব্যাবস্থা নিবো কারণ এই আন্দোলন আমাদের সবার আন্দোলন …

প্রতিবাদ আমরা সবাই করছি …কোন একজন কিংবা কোন এক দল ই শুধু করছে না … হাজার হাজার নিরপেক্ষ মানুষ এই সোচ্চার প্রতিবাদ, অবস্থান করমসূচী, বিক্ষোভে অবতীর্ণ … সাধুবাদ কারো একার নয় এখানে , মাতব্বরী ও কারো একার নয় এখানে … ভয় হলো অতীত ইতিহাসের মত কেউ না আবার আপোষ করে বসে ক্ষমতার লোভে … পথভ্রষ্ট কেউ হলে তাকে যেন আমরা চেলে ছুঁড়ে ফেলতে পারি সেই ব্যাবস্থা ও আমরা করছি …

আমাদের মাঝে স্বার্থ সন্ধানী মানুষ গুলো ও ঢুকে পড়েছে … তারা আসছেন , মিডিয়ার সামনে নিজেদের চেহারা দেখাচ্ছেন তারপর আবার ফিরে যাচ্ছেন … এই নাটকের জন্য আমরা পথে নামিনি … যারা অন্যের ভন্ডামী নিয়ে কথা বলছেন তাদের অনেকের নিজের মনেই ভন্ডামীর কোন শেষ নাই … তাদের সেই ভন্ডামী ধরা ও খেয়ে যাচ্ছে … কিন্তু কতক্ষণ???গতরাত থেকে শুরু হয়েছে ভন্ডদের ভন্ডামী … আজ ও নতুন নতুন ভন্ড এসে যোগ দিয়েছে … আর এসব ভন্ড বাবা রা জানেন কোন পথে এগুলে নিজেরা ফোকাসড হতে পারবেন এবং তারা ভাবেন তাদের কে কেউ ধরতে পারবে না … তাদের মুখোশ খুলে দিতেও সোচ্চার হন সবাই …।

আমাদের এই আন্দলোন যদি কোনভাবে রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তা ভেস্তে যেতে সময় লাগবে না … তাই আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ নিরপেক্ষ জনতার দাবী কে কেউ যেন রাজনীতির নোংড়া খেলায় পরিণত করতে না পারে সেই লক্ষ্যে অনড় হন … আপনাদের সবার সমর্থন আমাদের শক্তি, আমাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এবং জনমত ই পারে so called রাজনীতির হাত থেকে আমাদের চেতনা ও অস্তিত্ব কে রক্ষা করতে … আমার আকুল অনুরোধ নিরপেক্ষ জনতা সবাই এক হন এবং এক দফা , এক দাবী তে সোচ্চার হন- জামাত শিবির এর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক এবং বাংলাদেশের রাজাকারদের একটা ই শাস্তি- ফাঁসি হোক … রাজাকার এবং দেশদ্রোহীদের জন্য কোন ক্ষমা নাই … বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেই ভুল করে গেছেন ক্ষমার মাধ্যমে আমরা যেন দ্বিতীয়বার সেই এক ই ভুল না করি …

বিভিন্ন গণ মাধ্যম গুজব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন যে আমাদের আন্দোলনে বিভাজন হতে শুরু করেছে- ডাহা মিথ্যা কথা … এটা ও আন্দোলন কে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র … সাজেদা চৌধুরী সংসদে কিছু করতে পারে না আর ময়দানে এসে বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বক্তব্য – দাবি পৌঁছে দিবেন — ঊনার তো এত বিতর্কিত হবার পর আসার ই প্রয়োজন ছিল না ময়দানে আর এসে পরে ঐসব লেকচার দেয়ার ও প্রয়োজন ছিলো না … আর প্রধানমন্ত্রী কি বোবা , কালা, অন্ধ??? ঊনি দেখেন নাই আমাদের কর্মসূচী? জানেন না আমাদের দাবি কি??? সাজেদা চৌধুড়ি কি আমাদের মাঝে এসব গুজব তৈরীর কাজেই এসেছিলেন??? সরকারের নোংড়া রাজনীতি আসলেই নিরালা … আমরা কেউ ই বিভাজিত হইনি , কেউ ই ভয় পাইনি … কেউ ই সশস্ত্র প্রস্তুতি নেয়নি , কেউ ই একান্তে সাজেদা চৌধুরীর সাথে কথা বলতে যায়নি … আমাদের অবস্থান গতকাল থেকে আজ আরো তিনগুন বেশী জোড়দার ছিলো… এখনো শাহবাগে আমাদের বন্ধুরা অবস্থান্রত … কোন গুজব ই ধোপে টিকবে না … ঐ মহিলা আসার পর জনতা ক্ষেপে উঠেছিলো এবং সাজেদা চৌধুরী নিজেই দল্বল নিয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন … আমাদের আন্দোলনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি , কোথাও কেউ ভয় পায়নি , শান্তিপূর্ণ অবশ্তহান চলছে , চলবে …।

আমাদের এই আন্দোলন কে আমরা কোনভাবেই রাজনীতির মুখাপেক্ষী করবো না এবং আমাদের এই আন্দোলন নিয়ে কাওকেই রাজনীতি , ভন্ডামী , দলাদলি, মাতব্বরি করতে দিবো না… শাহবাগ চত্বরে আমাদের এই আন্দোলন সমগ্র বাংলাদেশের আপামর জনতার আন্দোলন … আপনারা সবাই আমাদের এবং নিজেদের শক্তি হন Please … বারবার একটা অনুরোধ ই করছি এই নিরপেক্ষ আন্দোলন কে নিরপেক্ষ ভাবে সমর্থন করে আমাদের শক্তি হন … আমাদের সাথে যোগদান করে আমাদেরকে শক্তিশালী করেন … জয় বাংলা … মানবতার জয় হোক …