আমরা আর কোনদিন বড় হবো না!!!!

শামীম আরা নীপা
Published : 16 July 2014, 02:57 AM
Updated : 16 July 2014, 02:57 AM

প্রতিদিন আমার দেশে কত মানুষ খুন হয়, দুর্ঘটনায় নিহত হয়, কত নারী- শিশু ধর্ষিত হয়, কত মানুষ হাজার অন্যায়- অত্যাচার- দুর্নীতির শিকার হয়, হাজার মানুষ প্রতিদিন নিষ্পেষণ এর শিকার হয়- আমরা কি সব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করি? সব বিষয় নিয়ে কি কথা বলি? এসব বিষয় এর কারণ, উৎস মুখ জানতে চাই? আমরা কি আদিবাসী বাঙালির খবর রাখি? এসবের কিছুই করি না আমরা। তার কারণ টা কি? খবর ই তো রাখি না যে দেশের কোন কোণায় কি হচ্ছে। আমরা কিছু নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে কথা বলি, দৌড়াই, বিক্ষোভ – প্রতিবাদ করি। আসলে কি এসব আমরা করি নাকি নষ্ট রাজনীতি , নষ্ট স্বার্থ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে আমাদের কে দিয়ে ওসব করায়? তাহলে কি বাকী হত্যা- খুন- দুর্ঘটনা- মৃত্যু- ধর্ষণ- অন্যায়- অত্যাচার- নিষ্পেষণ- দুর্নীতি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না? সেসব কি তাহলে খুব সাধারণ স্বাভাবিক ঘটনা? সেসব কি আমাদের মেনে নেয়ার মত ই সব পরিস্থিতি? আমরা কি আসলেই আহাম্মক? হয়তো তাই ই… নইলে আমরা বারবার হাল ছেড়ে দিতাম না কিংবা ক্ষণে ক্ষণে মুহূর্তের জন্য ছুড়ে দেয়া বল টা ক্যাচ করেই ক্ষ্যান্ত দিতাম না। আমরা আসলেই কি কোন সু-পরিবর্তনের জন্য কিছু করছি নাকি অন্যের হাতের পুতুল হয়েই নেচে যাচ্ছি? কেউ কেউ নিজ স্বার্থেই নেচে চলে কিন্তু বাকীরা? এই দেশের তো হাজার টা সমস্যা তাহলে সেই সমস্যা গুলো সমাধানে আমরা কি নিজেদের গুছিয়ে তৈরী করছি? আমরা কি একেক টি টীম করে দায়িত্ব ভাগ করে দেশের সমস্যা টির সমাধান এর পথে এগুচ্ছি? আমরা কি আদৌ বিশ্বাস করি যে, আমরা পারবো/ আমরা সু- পরিবর্তন আনতে পারবো? যদি আত্মবিশ্বাস ই থেকে থাকে আমাদের তাহলে আমাদের সেই কর্ম কোথায়? কোথায় সেই অবদান? ছোটবেলায় পড়ায় ফাঁকি দেয়ার সময় বুঝতেই পারতাম না যে, আসলে নিজেকেই ফাঁকি দিচ্ছি, নিজের ই ক্ষতি করছি। আজ ও আমরা সেই ছোট ই আছি! বড় হইনি একটু ও। আজ ও আমরা নিজেকে ফাঁকি দিয়ে, পালিয়ে পালিয়ে নিজের ই ক্ষতি করছি এবং সমূহ ক্ষতির দিকে ধাবমান হচ্ছি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না!!! আমরা সেই ছোট টি ই রয়ে গেছি। আমরা পণ করেছি, আমরা আর কোনদিন বড় হবো না!!!!

আমি বা আপনি কেন চাই যে আমাদের পরিবারের প্রতি টা মানুষ ভালো থাকুক, সুস্থ- নিরাপদ থাকুক, প্রতিষ্ঠিত থাকুক সমাজে কিংবা দেশে, স্বচ্ছল থাকুক??? এই উত্তর টা বোধ করি আমাদের সবার ই জানা। এমন চাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম খুব কম মানুষ আছে, নাই বললেই চলে। যেই কারণে আপনি বা আমি চাই নিজ পরিবারের মানুষ গুলো যেন থাকে দুধে – ভাতে, ঠিক এক ই কারণে আমি চাই, সবসময় আমার মাতৃভূমি ও যেন থাকে দুধে- ভাতে। ঠিক সেই কারণেই চাই আমি, এই বিশ্ব যেন সবসময় থাকে দুধে-ভাতে। ঠিক সেই এক ই কারণে আপনার ও এবং সকলের ই চাওয়া উচিত যেন আমাদের মাতৃভূমি এবং এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড যেন সবসময় দুধে- ভাতে থাকে এবং সেই যোগ্য করে দেশ ও বিশ্ব কে গড়ে তোলাও আমাদের দায়িত্ব। নিজে পরিবর্তিত হয়ে অন্যকে পরিবর্তিত করে সকলের মঙ্গলে নিজ অবদান এবং ভূমিকা রাখা প্রয়োজন তবেই আপনি, আমি – আমাদের পরিবার গুলো ভাল থাকবে, নিরাপদ থাকবে, স্বচ্ছল থাকবে, প্রতিষ্ঠা পাবে সর্বত্র, সত্য- সুন্দর- মঙ্গলের পথে থাকবে। একবার ভেবে দেখা প্রয়োজন যে, আমরা কি আদৌ রাইট ট্র্যাকে আছি নাকি একেবারেই ভেস্তে গেছি। খুব খিয়াল কইরা ভাবতে হবে কিন্তু… খুব খিয়াল কইরা…

আমার কন্যা কয়েকদিন পর পর ই জিজ্ঞেস করে,
"মা রাজাকারের ফাঁসি হয়ে গেছে? সব রাজাকারের ফাঁসি শেষ?" ,
আমি বলি, "না"।
সে বলে, "শেখ হাসিনা এত দেরী করে ক্যান? সব রাজাকার কে একবারে ফাঁসি দিতে পারে না? শুধু দেরী করে!"।
আমি বলি, "সব রাজাকারের ফাঁসি হবে , বাবা। একটু অপেক্ষা করতে হবে।"
তখন সে গান গাওয়া শুরু করে, "আমি দেখেছি ২০১৩, দেখিনি ৭১… আমি দেখেছি শাহবাগ জন সমুদ্দুর। আমাকে এখনো মিছিল টানে, জয় বাংলা স্লোগানে…"
আমি অদ্ভুত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি, তার সাথে গান ধরি…
আমার এত টুকু বাচ্চা বুঝে রাজাকারের ফাঁসি টা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে হবে অথচ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্র এই সহজ সত্য টা বুঝে না! ফাঁসির রায়, ফাঁসি কার্যকর করা, ট্রাইব্যুনাল – সব লটকায়ে আছে!!! তাও দাবী ছাড়ি নাই— সকল যুদ্ধাপরাধী – রাজাকারের বিচার কাজ অবিলম্বে শেষ করে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হোক…

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী- রাজাকার গুলার ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেলে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি'র দুটো অসুবিধা- এক, যুদ্ধাপরাধী দের বিচার কাজ কে মূলার মত ঝুলিয়ে নির্বাচন এ আর যাওয়া হবে না- সাধারণ মানুষ এর সেই আবেগ নিয়ে আর তারা খেলতে পারবে না। রাজনীতির মোক্ষম হাতিয়ার টা ই খোয়াবেন উনারা। দুই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ হওয়া মানেই চেতনাবাজি বন্ধ এবং দেশের স্বার্থে দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে, সার্বিক কাঠামো ও প্রশাসন নিয়ে মানুষ বেশী মনোযোগী হবে এবং তাদের কে আর রাজাকার বিচার এর আফিম খাইয়ে তাদের মনোযোগ অন্যদিকে ব্যাস্ত রাখা যাবে না। যার ফলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা অতি মানব দের জারী জুরি সব ওপেন সিক্রেট থেকে রাস্তায় রাস্তায়, ঘরে ঘরে, বাসে ট্রেইনে আরো বেশী ওপেন হইতে থাকবে এবং তাতে করে তারা নিজেদের অস্তিত্ব কতটা টিকিয়ে রাখতে পারবে তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ থাকলেও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি নিশ্চিত নিজেদের অস্তিত্বহীণতা নিয়ে। তাই আজীবন আমার আপনার সামনে ঐ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী- রাজাকার গুলার ফাঁসির ইস্যু (পড়েন মূলা) ঝুলতেই থাকবে আর তারা তাদের কুৎসিত – নোঙড়া রাজনীতি ও করে যাবে…!