বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভাল না হলেও খারাপ নয়। কেউ কেউ বলে খারাপ আবার কেউ কেউ বলে ভাল সম্পর্ক। যে যাই বলুক না কেন, আমি বলবো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ হিসেবে আমি বলতে চাই ভারতে যখন সরকার পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল আমাদের দেশের একটি দলের সে যে কি আনন্দ, কে দেখে কার আনন্দ । আনন্দে আত্মহারা হয়ে দলটি কখন কে কি বলে তাল-গোল হারিয়ে ফেলে। এমন আত্মহারা আর কখনো দেখিনি, যেন মনে হয় ওরাই নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করতে চলছে। দলটি যখন দেখলো দিল্লীতে সরকার পরিবর্তনের পরও বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি তখন ওরা হতাশ, কারণ ওরা চায় না বাংলাদেশের সাথে ভারতের ভাল সম্পর্ক থাকুক। তবে যাই হোক কথা গুলোর মানে হচ্ছে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সমুদ্র সীমা রায়ে যে সুন্দর সমাধান আসছে তা নিয়ে আমরা সবাই সন্তুষ্ট।
এই রায় নিয়ে আমাদের দেশের একটি দল এবং কথিত কিছু সুশীল ব্যক্তি নষ্ট রাজনীতি শুরু করলো। আমি তাঁদের কিছু বক্তব্য নিন্মে তুলে ধরছিঃ
– সমুদ্র বিজয় নিয়ে সঠিকভাবে না জেনে বিজয় মিছিল করা খুবই লজ্জার_ ড. এমাজউদ্দিনআহম্মেদ ( তথ্যঃ বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম )
– সমুদ্র বিজয় শুভঙ্করের ফাঁকি _ দুদু ( তথ্যঃসমকাল )
– 'শেখ হাসিনা সরকারের বিজয় হচ্ছে রূপকথার মতো। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তালপট্টি কেন এখন পুরো দেশই হারানোর পথে।' – দুদু ( তথ্যঃবাংলামেইল২৪ ডট কম)
– "এমন একটি সময় রায় এসেছে যখন দেশে গণতন্ত্র নেই, জনগণের সরকার নেই। জনগণের সরকার থাকলে সমুদ্রসীমার রায় এমনটা হতো না। আমরা ন্যায্য হিস্যা পেতাম।" – মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন ( তথ্যঃব্রেকিং নিউজ বিডি ডট নেট )
আরো এমন শত শত বক্তব্য আছে। আসলে কারা এমন বক্তব্য দেয়, যারা এই সরকারের কোন সফলতা দেখে ঈর্ষায় কাতর হয়। আমি এটি বলছি না যে, এ সরকার কোন খারাপ কাজই করেনি, অবশই কিছু খারাপ কাজ করেছে যেগুলোর সমালোচনা অবশ্যই করতে হবে। তাই বলে কি চোখে দেখা একটি সুন্দর রায় নিয়ে রাজনৈতিক হীন মন মানসিকতায় বিতর্ক সৃষ্টি করবো?
ভারতের প্রথম সারির দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকার এসেছে – জাতিসংঘের সালিশী আদালতের রায়ে ভারত বাংলাদেশের কাছে বিপুল পরিমাণ সমুদ্রসীমা হারিয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়, তা সত্ত্বেও এই আদালতের আইনী প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দুই দেশই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। (তথ্যঃ ভালো খবর ডট কম )
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে এবং এর পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত তাদের সমুদ্রসীমার বৈধতা নির্ধারণ করার জন্য ব্যাপক দর কষাকষি এবং আইনী লড়াই করে এসেছে। দীর্ঘ ৬৭ বছর আন্তর্জাতিক সালিশী আদালত বাংলাদেশকে উভয় দেশের সমুদ্রসীমার ১৭২,২২০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশকে ১০৬,৬১৩ বর্গকিলোমিটার ন্যায্যতা দিয়েছে। বিচারকদের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অর্থে ভারতকে বঞ্চিত করা হলো বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানায় দৈনিক টেলিগ্রাফ।(তথ্যঃ ভালো খবর ডট কম )
জাতিসংঘের সাবেক পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, জাপানের নাগোয়া এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এস আইখান রেডিও তেহরানের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন – ভারতের সঙ্গেসমুদ্রসীমার বিরোধ নিয়ে বাংলাদেশের দাবির শতকরা ৮০ ভাগ পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশেরবর্তমান সরকার অবশ্যই সে সাফল্যের দাবি করতে পারে। কারণ অতীতের কোনো সরকারসমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য উদ্যোগ নেয় নি। তবে একে বিজয় বলা যাবে না।
এস আই খান আরো বলেন, র্যাডক্লিপ রোয়েদার আঁকাম্যাপ অনুয়ায়ী সমুদ্রসীমারেখা নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক আদালত। তবে র্যাডক্লিপ রোয়েদারের সেই সার্ভে রেখাটা ভুল ছিল। আর সেই ভুল ঠিক করার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এক্সপার্টদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নেয় নি। যারফলে বাংলাদেশ যে ২৫ হাজার প্লাস বর্গকিলোমিটার জায়গা ছেয়েছিল সেটা পায় নি। সেখান থেকে আমাদের ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারজায়গা চলে গেছে। আর প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার পানিসীমা না পাওয়ার জন্য আমাদের ৬টি তেল ব্লকের কিছু পরিবর্তন করতে হতে পারে।(তথ্যঃ রেডিও তেহরান/জিএআর/১৬)
রেডিও তেহরানের পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলোঃ
রেডিও তেহরান: বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমাবিরোধ নিষ্পত্তি রায় হয়েছে। বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যেবাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার। রায় প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন-বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশইজয়লাভ করেছে। আসলে বাংলাদেশ কি তার সত্যিকার প্রাপ্তি পেয়েছে? এছাড়া, এক রায়ে দুইপক্ষ লাভবান হয় কিভাবে?
ড. এস আই খান: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশেরসমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের বিরোধপূর্ণসমুদ্রসীমার একটা সমাধান হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে। সেখানে আমাদের দাবিকৃতপ্রায় সবটুকুই আমরা পেয়েছিলাম কিন্তু ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে অমীমাংসিত যেজায়গাটা ছিল সেখানে আমরা ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার দাবি করেছিলাম। কিন্তুজাতিসংঘের পারমানেন্ট 'কোর্ট অব আরবিট্রেশন' বাংলাদেশকে দিয়েছে ১৯ হাজার ৪৬৭বর্গকিলোমিটার এবং ভারতকে দিয়েছে ৬ হাজারের কিছু বেশি বর্গকিলোমিটার জায়গা
তবে এখানে হিসাবের ব্যাপারটাতে একটা বিষয়রয়েছে। আপনারা জানেন যে, সুন্দরবনের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে তালপট্টি নামক একটি দ্বীপজেগে উঠেছিল অনেক বছর আগে। তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সে দ্বীপটির প্রায় অস্তিত্ব নেই। অনেকে মনে করেন ভারতের একটা যুদ্ধজাহাজ দীর্ঘসময় ধরে তালপট্টিতে নোঙর করেছিল। সে সময় হয়তো ভারত ড্রেজিং করে তালপট্টি দ্বীপের তলদেশটা কেটে দেন। যে কারণে এইতালপট্টি দ্বীপটি ধীরে ধীরে সাগারগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যদি তালপট্টি দ্বীপটির ওপর আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকত এবং দ্বীপটিকে আমরা রক্ষা করতে পারতাম তাহলে সমুদ্র থেকেআরো কিছুটা জায়গা আমরা পেতাম। তালপট্টির চারদিকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত আমাদেরটেরিটোরিয়াল ওয়াটার হিসেবে দাবি করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু তালপট্টি দ্বীপকে আমরারক্ষা করতে পারি নি সেজন্য বর্তমান জাতিসংঘ কোট অব আরবিট্রেশনের মাধ্যমে যে ফয়সালা হয়েছে সেটা আমার মনে হয় একটা ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। এতে ভালো-মন্দ, ভুল-শুদ্ধেরচেয়ে বড় কথা হলো বহুদিন ধরে অমীমাংসিত সমুদ্রসীমার একটা সম্মানজনক ফয়সালা হয়েছে।এটাকে বাংলাদেশের বিজয় বলব না। তবে আমাদের ন্যায্য দাবি থেকে কিছুটা কম পেলেও এইবিচারের রায়কে আমাদের মেনে নিতে হবে
রেডিও তেহরান: সমুদ্রসীমা মামলার রায়ে ১৯হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশ পেলেও হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার কাছেই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ হারাতে হয়েছে। দ্বীপটি হারানোর বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখবেন?ড. এস আই খান: দেখুন সমুদ্রের যে এলাকাটিতে তালপট্টি দ্বীপটি জেগে উঠেছিল সেটি খুব দূর্গম এলাকা। দ্বীপটি যখন ওঠে তখন ভারত ওবাংলাদেশ কেউই আগে বুঝতে পারে নি। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমেরিকা প্রথম এটি জানতেপারে। তারপর যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি বাংলাদেশকে জানায় এবং বাংলাদেশ তখন সজাগ হয়।তবেবাংলাদেশ দ্বীপটি দখলে নিতে পারে নি। কারণ বাংলাদেশ সেখানে পৌঁছানোর আগেই ভারতের যুদ্ধজাহাজ সেখানে পৌঁছে যায়। পরে সিদ্ধান্ত হয় আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এবিষয়টির সমাধান হবে। তো দ্বীপটি যদি থাকতো তাহলে আমার মনে হয় বাংলাদেশ আরো কিছু টেরিটোরিয়াল ওয়াটার পেত। কিন্তু আমি আগেও যেকথা বললাম জনশ্রুতি যেটা আছে সেটা হচ্ছেভারত ড্রেজিং করে দ্বীপটিকে ধসে দিয়েছে। যে কারণে দ্বীপটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েগেছে। বাংলাদেশ দ্বীপটিকে রক্ষা করতে পারে নি।
রেডিও তেহরান: দেখুন তারপরও কিন্তু একটাকথা থেকে যায়। আমাদের দাবিকৃত অংশের অনেকটাই আমরা পেলেও যেটুকু হারিয়েছি তার মধ্যেইকিন্তু তালপট্টি দ্বীপ পড়েছে। তো এরমধ্যে কি কোনো কারণ আছে বলে আপনি মনে করেন?
ড. এস আই খান: দেখুন এব্যাপারে একটুব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হয় তখন পূর্বপাকিস্তানএবং ভারতের মধ্যেকার সীমানাটা ব্রিটিশ সার্ভেয়ার র্যাডক্লিপ রোয়েদার নির্ধারণকরেছিলেন। তার সেই ম্যাপে যে সীমারেখাটা ছিলা সেটা যখন বঙ্গোপসাগরে গিয়ে শেষ হয় তখনযে কোনো কারণে কিছুটা বাঁকা করে বঙ্গোপাগরের দিকে দেখানো হয়। ভারত সেই ম্যাপঅনুযায়ী নতুন সীমারেখা টানার জন্য জোর দিয়ে আসছিল এবং তালপট্টি দ্বীপটি না থাকায়শেষ পর্যন্ত র্যাডক্লিপ রোয়েদার যে ম্যাপটি এঁকেছিলেন সেই সীমারোখাটা ধরেই পরে এইবাউন্ডারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বহুবার বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিভিন্ন এক্সপার্টদের বলেছি র্যাডক্লিপ রোয়েদারযে সীমারেখাটা এঁকেছিল এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে সেটা ভুল। আর এ ভুলটা ঠিক করার জন্য যথাযথ কার্যক্রম ও উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছি। আর এটা যদি ঠিক করা নাহয় এবং রোয়েদারের দেয়া সীমানাটা যদি থেকে যায় তাহলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর আমাদের বিরোধপূর্ণ পানি সীমার রায়ের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় র্যাডক্লিপ রোয়েদারেরদেয়া সেই সার্ভে রিপোর্টটাই আন্তর্জাতিক আদালত গ্রহণ করেছে। যারফলে বাংলাদেশ যে ২৫হাজার প্লাস বর্গকিলোমিটার জায়গা ছেয়েছিল সেটা পায় নি। সেখান থেকে আমাদের ৬ হাজারবর্গকিলোমিটার জায়গা চলে গেছে।
রেডিও তেহরান: এ রায়ের পর সমুদ্রেরএক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষেবিতর্ক দেখা দিয়েছে। আপনার মতে আসলে কি হয়েছে?
ড. এস আই খান: দেখুন সমুদ্রসীমা রেখার মধ্যে দুটো বিষয় রয়েছে একটা হচ্ছে টেরিটোরিয়াল ওয়াটার। টেরিটোরিয়াল ওয়াটারের মধ্যেসেই দেশের সার্বভৌমত্ব সব দিক দিয়েই থাকবে। এটা তার নিজস্ব সীমানা হিসেবে চিহ্নিত হবে। দু'শ নটিক্যাল মাইল বলে আরেকটি বিষয় রয়েছে। এটাকে বলা এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিকজোন। এই এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোনের মধ্যে খনিজ সম্পদ যেমন তেল আহরণ এবং মৎস আহরণএসব কেবল বাংলাদেশই করতে পারবে। অন্য কোনো দেশ এই এক্সক্লুসিভ জোনে এসব কোনো কাজকরতে পারবে না। তবে এই এক্সক্লুসিভ জোন দিয়ে সব দেশেরই অবাধ জাহাজ চলাচল থাকবে।কিন্তু টেরিটোরিয়াল ওয়াটারএলাকায় ঢুকতে গেলে সেই দেশের অনুমতি লাগবে।
তবে বর্তমানের সীমানাটা যেহেতু পানির ওপরপাওয়া গেছে। আর সেটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্ধারণ করতে হবে। আর সেই নির্ধারণের পর আমরাসঠিকভাবে বুঝতে পারবো কোন এলাকাটা বাংলাদেশের টেরিটোরিয়াল ওয়াটার আর কোন এলাকাটাআমাদের এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন। যেহেতু ব্যাপারটা পানির মধ্যে ফলে এটা নিয়েগোলমাল থেকেই যাবে। তবে আপনারা জানেন যে পৃথিবীটা গোল আর এই গোল হওয়ার কারণে একটাকার্ভেচার আছে। আর কার্ভেচারের কারণে জলসীমা যখন নির্ধারণ করা হয় তখনও কিছুটা বিরোধদেখা দিতে পারে।
রেডিও তেহরান: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ওসাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন সালিশ আদালতের রায়ে কিছু অসংগতি রয়েছে। বাংলাদেশের দাবি ছিল ১৮০ ডিগ্রি সেখানে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭৭ দশমিক ৩ডিগ্রি। ফলে এটা ন্যায় বিচার হয় নি। আপনি কি বলবেন?
ড. এস আই খান: দেখুন বাংলাদেশ ২৫ হাজারের কিছু বর্গকিলোমিটার যে পানিসীমান দাবি করেছিল তার একটা যুক্তি তারা দেখিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে তারা একটা যুক্তি তুলে ধরেছিল। বিষয়টা বিচারের- আমরা যেটা দাবিকরেছি সেটা ঠিক মনে করেই দাবি করেছি। কিন্তু বিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে। সেখানে ৫ জন বিজ্ঞ বিচারক থাকেন। এ ব্যাপারে তারা যে রায় দিয়েছেন তা শতভাগ বাংলাদেশের পক্ষে না এলেও প্রায় ৮০ ভাগ বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। তাছাড়া সবচেয়ে বড়কথা আন্তর্জাতিক এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করার সুযোগ নেই।
রায়ের ফলে বিদেশি কোম্পানীগুলোকে দেয়ার জন্য তেলের যে ব্লকগুলো আমরা করেছিলাম তাতে একেবারে পশ্চিমের যে ৬ টি ব্লক ছিলসেগুলো আমরা করেছিলাম দাবিকৃত ২৫ হাজার প্লাস বর্গকিলোমিটারের পরিমাপ ধরে। কিন্তুপ্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার পানিসীমা না পাওয়ার জন্য ৬ টি তেল ব্লকের কিছুপরিবর্তন করতে হতে পারে।
রেডিও তেহরান: সামগ্রিক বিবেচনায় এ রায়কেআপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. এস আই খান: সামগ্রিক মূল্যায়নে আমি বলবোবাংলাদেশের দাবির শতকরা ৮০ ভাগ পূরণ হয়েছে। আর বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই সে সাফল্যের দাবি করতে পারে। কারণ অতীতের কোনো সরকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য উদ্যোগ নেয় নি।বর্তমান সরকারের উদ্যোগেই শক্তিশালী একটা প্রতিবেশীর সঙ্গে একটা সম্মানজনক সমাধানহয়েছে। তবে আমি আবারও বলছি যদি আমরা দক্ষিণ তালিপট্টি দ্বীপটি রক্ষা করতে পারতামতালে আমাদের সীমা আরো অনেকটা বেড়ে যেত।
মোট কথা হলো রাইট – রং, গুড অর ব্যাড একটা সমাধান হয়েছে। আর একটা স্থায়ী সমাধান হওয়ার কারণে এর ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে আমরা সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের সমুদ্রের খনিজ-তেল এবং মৎসের উন্নয়নে কাজ করতে পারব। আগের মতোএকটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আর আমাদের যেতে হবে না। নিশ্চিত একটা সীমানা নির্ধারণহওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবো।(তথ্যঃ রেডিও তেহরান/জিএআর/১৬)
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে কোনো বিষয়ে একমত না হওয়া যেন একটা ব্যধি হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটি প্রমাণ হলো সম্প্রতি সমুদ্রসীমা নিয়ে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে দেওয়া রায়ের বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ায়। এই রায়কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বিরাট বিজয় বলে অভিহিত করলেও বিএনপি বলেছে, ব্যাপক পরাজয়।
বিএনপির নেতারা বলতে চাইছেন যে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারএলাকার মধ্যে বাংলাদেশ ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার পেলেও বাকি ছয় হাজার ১৩৫বর্গকিলোমিটার এলাকা ভারতকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যতই একমত মত না হোক। আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক ভাল থাকুক। আমরাপরপর দুটি বিজয় অর্জন করেছি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকত্ব বজায় রাখতে হলে সব দেশকে সংবেদনশীল হতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলথাকতে হবে। যেখানে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ বলেছেন, বাংলাদেশের দাবির শতকরা ৮০ ভাগ পূরণ হয়েছে, বাংলাদেশেরবর্তমান সরকার অবশ্যই সে সাফল্যের দাবি করতে পারে, সেখানে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করে ওরাই প্রমাণ করছে, সমুদ্র জয় ছিল সরকারের বিরাট একটি জয়।
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
লেখক-অন্যধারা প্রকাশন
Sahidul_77@yahoo.com