ত্যাগের শিক্ষা ঈদুল আযহা: ফিরে যেতে হবে ধর্মে

সালেহ নোমান
Published : 27 Oct 2012, 11:23 AM
Updated : 27 Oct 2012, 11:23 AM

ঈদুল আযহার ঠিক তিনদিন আগে গত মঙ্গল বার চট্টগ্রামের মোহাম্মদপুরে এক গৃহ শিকের নৃশংসতার শিকার হয়ে প্রান দিয়েছেন ডলি আক্তার ও তার দুই সন্তান পায়েল ও আলভি। পুলিশ তারেক নামের খুনী এই গৃহশিককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ এবং খুনী নিজেই নৃশংস এই খুনের ঘটনার বিস্তারিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঈদের ঠিক আগের দিন। খুনী তারেক একজন টিনএজার, একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী।

ঈদের আগের রাতে এই নিয়ে কথা বলছিলাম অগ্রজ প্রতিম এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে। দুইজনেই এই ধরনের ঘটনার কারন অনুসন্ধানের চেষ্টা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত এই সাংবাদিক বন্ধুর উপলব্ধি হচ্ছে, সমাজের কোন স্তরেই নৈতিকতার শিক্ষা নেই। কোথাও কোন ধরনের অনুকরনীয় ব্যক্তিত্ব খুজে পাওয়া খুবই কঠিন। যার ফলে আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠছে নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের কাছে যে কোন কিছুর বিনিময়ে, আবারো বলছি যে কোন কিছুর বিনিময়ে টিকে থাকায় শেষ কথা।

কিন্তু যে কোন কিছুর বিনিময়ে যে টিকে থাকা যায়না এবং যাবেনা এর লক্ষ কোটি উদাহরন আমাদের সামনে আছে। প্রকৃতির নিজস্ব কিছু নীতি রীতি রয়েছে। আর এই রীতিনীতির মধ্যেই সবাইকে থাকতে হবে এবং এর কোন বিকল্পও নেই । প্রকৃতির রীতিনীতি ভঙ্গের শেষ পরিমান ভোগান্তি।

মূলত ধর্মই হচ্ছে প্রকৃতির রীতিনীতি । সৃষ্টিকর্তা এই দুনিয়া এবং দুনিয়ার সেরা জীব মানুষ যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি এই সব কিছুর জন্য গাইড লাইনও দিয়েছেন । যুগে যুগে ধর্মের আকারে বিশেষ মানুষ অর্থাৎ নবী ও রাসুলদের মাধ্যমে এইসব গাইড লাইনের শিক্ষাও মানুষকে দিয়ে দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার এইসব গাইড লাইন হচ্ছে ঐশি গ্রন্থসমূহ। আর বর্তমান সময়ের জন্য প্রযোজ্য ঐশিগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে মানুষের ব্যক্তি সমাজ, পরিবার এবং রাষ্ট্রিয় সবকিছুর জন্য পবিত্র কোরআনে সূস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে।

পৃথিবীতে মানুষের মূলকাজ সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনই মানুষের চূড়ান্ত সফলতা। মানুষ কিভাবে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে তার নির্দেশনাও দেয়া আছে কোরআন শরীফে। এই রকম একটি নির্দেশনা হচ্ছে ত্যাগ ও কোরবানির মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল উল আযহা পালন।

ভোগে সুখ নেই ত্যাগে সূখ। এই রকম কিছু বিষয় আমাদেরকে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকরা আমাদের পড়াতেন। শুধু পরীক্ষায় পাস করার জন্য সেসব বিষয় মুখস্থ করাতে তার র্মমার্থ তখন বুঝতে পারেনি। হয়তো শিক্ষকরা আমাদের বুঝাতে সক্ষম হননি।

তবে জীবনের এই পর্যায়ে এসে উপলব্ধি করতে পারছি কোন কিছুর কোরবানির মাধ্যমে, উৎসর্গের মাধ্যমে যে অনাবিল প্রশান্তি লাভ করা যায় তা আর অন্য কোন কিছুর বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব নয়। কারো জন্য কোন কিছু ত্যাগ করলে তিনি যেমন সন্তুষ্ট হন-খুশি হন তেমনি তার খুশি দেখে যিনি ত্যাগ করেন তিনি ও খুশী হন।

যার ভোগের অভ্যাস যত বেশি তার দ্বারা সমাজে, পরিবারে এবং রাষ্ট্রে অনাসৃষ্টি তত বেশি । তাইতো সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বারবার ত্যাগের শিক্ষায় দিয়েছেন আমাদেরকে। সর্বশেষ নবী হয়রত মুহাম্মদ (সঃ) এর অনুসারিদের প্রধান দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ত্যাগ ও সংযমের মাধ্যমে।

শুধু ত্যাগ আর সংযম নয়, সবকিছুই ধর্মে অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে আমাদের জন্য পথ নির্দেশ রয়েছে। ধর্মের নির্দেশ মেনে চললে একদিকে যেমন সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হবে তেমনি সম্ভব হবে একটি ব্যালেন্সড জীবন যাপনের । আর এই ব্যালেন্স জীবন যাপনের সবচেয়ে বড় উদাহরন হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।