তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক সমাবেশে রেল ও নৌ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার প্রদান-সড়ক নির্ভরতা কমানোর দাবী

বাংলার ছায়া
Published : 17 August 2011, 12:29 PM
Updated : 17 August 2011, 12:29 PM

রেল ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে সড়ক পরিবহনের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি ও সড়ক নির্ভরতা বৃদ্ধি, নির্বিচারে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন চলাচলে আইন বাস্তবায়নের শিথিলতা, ক্রটিপূর্ণ সড়ক নির্মাণ, অপরিকল্পিত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি না হওয়া, বিদ্যমান আইন ও নীতি না মেনে গাড়ি চালনা, আইন সংস্কারের মাধ্যমে যুগপোযোগী না করা ইত্যাদি নানা কারণে সড়ক দূর্ঘটনা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। যাতায়াত হয়ে উঠছে অনিরাপদ ও বিপজ্জনক। ফলে মানুষের অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের সংখ্যা বাড়ছে। গত দশ বছরে সড়কের উপর প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধ লক্ষ নিরিহ মানুষ! এজন্য সড়ক নির্ভরতা কমিয়ে রেল ও নৌ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি নতুন কোন সড়ক নির্মান নয়, বরং সারাদেশের বিধ্বস্ত সড়ক অবিলম্বে মেরামত ও উন্নয়ন করা এবং দূর্ঘটনা প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। আজ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে ২৭টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত শোক সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। সমাবেশে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকেই সংহতি জ্ঞাপন করেন।

বক্তারা বলেন, যে কোন মৃত্যুই বেদনাদায়ক। কিন্তু তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর এর মত মেধাবী, সৃজনশীল, কর্মমুখর মানুষের মৃত্যু দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি। এ ক্ষতি পূরণযোগ্য নয়। আমরা চাই না আর কোন স্বজন এরকম সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাক। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলে পুরো পরিবার সঙ্কটে পড়ে। এছাড়া দূর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তার চিকিৎসার জন্য ঐ পরিবারের বড় অঙ্কের অর্থ চিকিৎসা খাতে ব্যয় হয়। রাষ্ট্রের ব্যয়ও হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের উৎপাদন খাত তিগ্রস্ত হচ্ছে। এতকিছুর পরও ঘুম ভাঙছে না সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের! যোগাযোগ মন্ত্রী বৃহদাকার সড়কস্থাপনায় যতটা ব্যস্ত, পরিবহন সন্ত্রাসে নাগরিক মৃত্যুরোধে ঠিক ততটাই নির্বিকার! আমরা জানি, সরকার ইচ্ছে করলেই পরিবহন সন্ত্রাসের এই মহামারী পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে পারেন, সরকারের পরিকল্পিত পদক্ষেপই এজন্য যথেষ্ঠ। জনমনে প্রশ্ন: আর কত মানুষ লাশ হলে সরকার এ কাজটি করবেন ?

শোক সমাবেশ থেকে পরিবহনের নামে সড়কে মানুষ খুন বন্ধ করা; নিরাপদে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্ভরতা কমানো, যাতায়াত ব্যবস্থায় রেল ও নৌ পরিবহনকে অগ্রাধিকার প্রদান, ভূয়া লাইসেন্সধারী চালকদের নিষিদ্ধ ও শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা; আনফিট গাড়ি বাতিল করা; গাড়ি চালকদের ট্রিপ এর পরিবর্তে মাসিক বেতনে নিয়োগের ব্যবস্থা করা; নতুন কোন সড়ক নির্মান নয়, সারাদেশের ভাঙ্গাচোরা বিধ্বস্ত সড়ক অবিলম্বে মেরামত ও উন্নয়ন করা, রোড সেপ্টি সেলকে কার্যকর করা; একসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃক সারাদেশে সড়ক পথে চিহ্নিত দুইশত বিপজ্জনক স্থানকে নিরাপদ করা; সংস্কারের মাধ্যমে প্রচলিত আইনকে যুগপোযোগী করা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন করা; নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত কর ও বিআরটিএ' কে স্বচ্ছ ও কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়।

শোক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, ফোয়ারার আহ্বায়ক একরাম আহমেদ, পরিবেশ সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান মৃধা বেনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা, সেবা'র নির্বাহী প্রধান ডা. নুরুদ্দীন, নাগরিক উদ্যোগ এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান ময়না, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা এর রোকেয়া বেগম, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, সিটিজেন রাইটস্ মূভমেন্ট এর মহাসচিব তুষার রেহমান, সিরাক-বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী দীপংকর গৌতম, পুরাতন ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মো: আশরাফ আমিরুল্লাহ, মানুষ এর অরগানাইজিং সেক্রেটারি ফরিদ আহমেদ। শোক সমাবেশ পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান।