অভ্যাসগত অভিযোগকারীগণ যেমন

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 6 July 2015, 05:18 PM
Updated : 6 July 2015, 05:18 PM

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপরাধ শাখার কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হল মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে জনগণ কর্তৃক আনিত অভিযোগগুলোর অনুসন্ধান করে সেগুলোর উপর আইনানুগ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সারা দেশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই বেশ কিছু অভিযোগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে জমা পড়ে। এই সব দরখাস্ত বা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ক্রাইম জোনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। বলাবাহুল্য, পুলিশের বিরুদ্ধে দরখাস্তকারীদের মধ্যে একটি বড় অংশ অভ্যসগত। কারণে, অকারণে; নিজের পক্ষে, অন্যের পক্ষে তারা ব্যক্গিত আক্রশে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে একখানা দরখাস্ত মেরে বসেন।

ক্রাইম-ইস্টে কাজ শুরুর প্রথম দিনেই এমন এক অভ্যসাগত দরখাস্তকারীর দেখা পেলাম। ভদ্র লোকের নাম দিদারুল হক। তার বাড়ি কক্স বাজার জেলার চকোরিয়া থানায়। ২০০৫ সালে দিদারুল এক ভদ্রলোকের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। বিরোধের বিষয়টি অতি সাধারণ। জমিজমা নিয়ে। এতে দিদারুল শারীরিকভাবে নির্যাতিত হন। সেই সময় এই নিয়ে তিনি থানায় একটি জিডি করেন। কিন্তু কোন মামলা করেননি।

২০০৮ সালে ঘটনার প্রায় ২বছর ৪ মাস পরে দিদারুল তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চরোরিয়া থানায় একটি ফৌজদারি মামলা করেন। মামলার অভিযোগ তার প্রতিপক্ষ তাকে পথে আটক করে পকেটের টাকা-পয়সা , হাতের ঘড়ি কেড়ে নিয়েছেন, ঘুসি দিয়ে তার দুইটি দাঁত ফেলে দিয়েছেন। তিনি নাকি এ জন্য চিকিৎসাও করিয়েছেন। তবে কোন ডাক্তানি সনদ নেই। কিন্তু ২০০৫ সালে ডাক্তারের কাছ থেকে কোন সনদ নিতে নাপারলেও দিদারুল ২০০৮ সালে এক ডাক্তারের কাছ থেকে একখানা ডাক্তারি সনদপত্র যোগাড় করেছেন। কিন্তু সমস্যা হল, ডাক্তার তার সনদে দিদারুলের ভাঙ্গা সম্পর্কে কিছুই লিখেন নাই। তিনি দুইটি আঘাতের কথা লিখেছেন। সেগুলো আবার সাধারণ মাত্রার আঘাত।

দিদারুল বড়ই করিৎকর্মা লোক। তিনি তার মালাটির তদন্তভার দরখাস্ত করে দ্রুত থানা থেকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগে নিয়ে যান। কিন্তু মামলার ঘটনার সাথে সময়, কথিত আঘাত এবং মৌখিক, বস্তুগত ও অবস্থাগত সাক্ষ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায়, মানে প্রমাণিত না হওয়ায়, মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ঘটনা শুধু অপ্রমাণিতই হয়নি, বরং তা উদ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ছিল।

আদালতে দিদারুল না-রাজি দরখাস্ত দেন। কিন্তু আদালতে তার না-রাজি টিকেনি। আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি ঘটে।তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে কোন ত্রুটি ছিল না। নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন।

কিন্তু দিদারুল দমবার পাত্র নন। তিনি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন,বিশেষ করে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানীর অভিযোগ নিয়ে আসেন। এই জন্য তিনি পুলিশ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ে দরখাস্ত করা শুরু করেন। কম্পিউটারের সুবাদে দরখাস্তকারীদের পোয়াবারো! একটি ক্লিকে যেমন হাজার স্থানে দরখাস্ত পাঠানো যায়, তেমনি একই দরখাস্তের শতশত কপি করে তা শত শত কর্তপক্ষের কাছে সশরীর্যেও দাখিল করা যায়।

দিদারুল হক পুলিশ সুপারের কাছে, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির কাছে, র্যাবের ডিজির কাছে, পুলিশের আইজিপির কাছে, স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে, এমনকি, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছেও দরখাস্ত করেন। সকল দরখাস্তে তার আবেদন হল, তার মামলাটি পূনরুজ্জীবীত করা হোক। কিন্তু পুলিশের সকল স্তর থেকে মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মামলাটি পূনরুজ্জীবীত করার মতো কোন নতুন তথ্য প্রমাণ বা গুরুত্ব নেই। কিন্তু ধারাবাহিক অনুসন্ধান ও নথিপত্র পর্যালোচনার ফলাফল যাই হোক না কেন, দিদারুল হক দরখাস্ত করা থেকে বিরত থাকেননি। তিনি নিয়মিতভাবে দরখাস্ত দাখিল করতেই থাকেন।

তিনি কিছুদিন আগে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলেন। থানা থেকে শুরু করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স পর্যন্ত সবাই যেখানে দিদরুলের অযৌক্তিক দরখাস্তের ঠেলায় অতিষ্ঠ, তখন পুলিশ সুপার মহোদয়ের মেজাজ ঠিক থাকবে বলে মনে হয় না। পুলিশ সুপার তাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন বলে তার অভিযোগ। তিনি এখন পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে দরখাস্ত নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এসেছেন।

বর্তমানে কক্সবাজার জেলার এসপি সাহেবের বড় সুনাম রয়েছে। তার ব্যবহার, সততা, ন্যায় নিষ্ঠা ও কর্তব্য পরায়নাত অনুসরণীয়। কিন্তু দিদারুল হকের ক্ষোভ থেকে তাকে রক্ষা করবে কে?

যাহোক, আমার বসের পেশাদার কৌশলে দিদারুল হক শান্ত হলেন। তিনি আপাতত সন্তুষ্ট হয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফেরত গেলেন। কিন্তু অভ্যাসগত অভিযোগকারী দিদারুল হক যে ভবিষ্যতে পুলিশের বিরুদ্ধে ভূয়া দরখাস্ত করা থেকে বিরত থাকবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই।September 26, 2013