প্রস্তাবনাঃ অপরাধ বিজ্ঞান ও ফৌজদারি বিচার ব্যাবস্থার ইতিহাস বলে, স্থান, কাল, পাত্র, সমাজ ও রাষ্ট্রভেদে আইন ও বিধি তৈরি করার মহান দায়িত্ব ক্ষমতাশালীদের উপর বর্তায়। আমাদের ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালারা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাশালীদের কাতারে পড়েন। তাই তারাও আইন তৈরির মতো মহান দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেন।
বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক ও লেনদেনের আইন রয়েছে। এই আইন সংসদ কর্তৃক পাশকৃত আইন থেকে পৃথক। সংসদের আইনের চেয়েও এই সব আইন অনেক বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর। এটা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। এর কারণ সম্ভবত যারা আইন তৈরি করেন, এই সব আইন তারাই প্রয়োগ করেন। এমনকি এই সব আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেওয়ার ভারও আইন তৈরিকারকদের উপর ন্যাস্ত। সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংসদ, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মতো বাড়িওয়ালের রাজ্যে কোন বিভাজন নেই।
বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বিশেষ ধরণের সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সমর্পক জমিদার ও প্রজা সম্পর্ক। মার্ক্সীয় ভাষা এটা হল বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত বা মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্কের অনুরূপ।
ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ঐতিহাসিক ক্রমধারাটি হল, যারা ক্ষমতাবান তারা আইন তৈরি করেন। যারা ক্ষমতাহীন তারা আইন মেনে চলেন। যারা আইন মানেন না তারা শাস্তির সম্মুখিন হন। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া সম্পর্ক এই নীতির উত্তম প্রতিফলন।
বাড়িওয়ালার নিজস্ব আইনগুলো হল-
১. ভাড়াটিয়া সব সময় বাড়িওয়ালার কাছে অবনত থাকবেন।
২. বাড়িওয়ালা যে কোন সময় বাড়ির ভাড়া বাড়াতে পারবেন।
৩. ভাড়াটিয়া বিনা প্রতিবাদে বর্ধিত বাড়িভাড়া পরিশোধ করবেন।
৪. বাড়িওয়ালা যে কোন সময় বাড়ির পানি, গ্যাস, বিদ্যুত বা অন্য কোন সুবিধা বন্ধ করে দিতে বা সীমীত করতে পারবেন।
৫. বাড়িওয়ালা আয় করবেন, কিন্তু ব্যয় করবেন না। তারা আপনার সামনে পৌরকর, পানির দাম, বিদ্যুতের বিল সব কিছুই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারি-কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মেরে দিবেন। এই বিষয়টি আপনার জানা মহাপাপ।
৬. বাড়ির ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন, পানির কল, বিদ্যুতের সুইচ, রান্না ঘরের সিংক সবকিছুই অবিনশ্বর থাকবে। এ গুলো আল্লাহর অস্তিত্বের সমপর্যায়ের (নাউজুবিল্লাহ)। এদের কোন কিছু নষ্ট হলে তার দাম পরিশোধ করবেন।
৭. মাসের সাত তারিখের মধ্যে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ না করলে বাড়িওয়ালা আপনার বাপ-মা তুলে গালি দিতে পারবেন। তবে বাড়িওয়ালাকে ভাড়াটিয়া গালি দিতে পারবেন না।
৮. চুক্তির মধ্যে কোন অংসংগতি বা অসামঞ্জস্য দেখা দিলে তাহা বাড়িওয়ার পক্ষে ব্যাখ্যা করতে হবে।
অনুসিদ্ধান্তঃ ভাড়াটিয়া জাতে উঠে বাড়িওয়ালা হতে পারবেন; কিন্তু কোন বাড়িওলা কখনো ভাড়াটিয়া বা গৃহহীন হবেন না।
—————
১৭/১০/২০১২