রুশ সিরিয়াল কিলার চিকাটিলোর অপরাধ জগৎ (১ম কিস্তি-খুনির বেড়ে ওঠা)

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 15 Dec 2014, 02:42 PM
Updated : 15 Dec 2014, 02:42 PM

পৃথিবীর অপরাধ জগতে যে সব জঘন্যপ্রকৃতির খুনির জন্ম হয়েছিল ইউক্রেনের আন্দ্রে চিকাটিলো ছিলেন তাদের যে কারো চেয়ে ভয়ংকর। একজন অতি সাধারণ মানুষের আড়ালে চিকাটিলো অল্প বয়সী বালক-বালিকা ও কোন কোন ক্ষেত্রে বয়স্ক মহিলাদেরও হত্যা করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে নয় বছর বয়সী একজন স্কুল ছাত্রীকে হত্যার মাধ্যমে তার খুনি জীবন শুরু হয় এবং ১৯৯০ সালে একজন ১৬ বছর বয়সী যুবতীকে হত্যার মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। সোভিয়েত রাশিয়ার ইতিহাসে চিকাটিলোকে শনাক্তকরণ অভিযানটি ছিল এ যাবত কালের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী,  ব্যয়বহুল ও  জটিল প্রকৃতির।

চিকাটিলোর কৃত অপরাধ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ হাজার হাজার অপরাধী, সমকামী, মানসিক রোগী ও নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল। রুশ পুলিশের নির্যাতনে তিনজন সমকামী সন্দেহভাজন ও একজন সাজাপ্রাপ্ত যৌন অপরাধী আত্মহত্যা করেছিল। অপরাধ না করেও অপরাধের দায় স্বীকার করে মিথ্যা দোষ স্বীকারমূলক জবানবন্দী দিয়েছিল প্রায় পাঁচজন সন্দেহভাজন। এক যুগে প্রায় পাঁচ লাখ লোককে মামলার তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এ খুন সিরিজের হত্যা মামলাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে রুশ পুলিশ প্রায় এক হাজরেরও বেশি অন্যান্য অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হয়েছিল যাদের মধ্যে ৯৫টি খুন ও ২৪৫ টি ধর্ষণের অপরাধ ছিল।

চিকাটিলোকে শনাক্ত করতে গিয়ে রুশ পুলিশ একজন মনোচিকিৎস্যকেরও সাহায্য প্রার্থনা করেছিল যিনি রাশিয়ার ফৌজদারি মামলার তদন্ত-ইতিহাসে সর্বপ্রথম অপরাধ-প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন। শুধু তাই নয়, চিকাটিলোর প্রোফাইল প্রস্তুতকারক আলেকজান্ডার বুখানোভস্কিই এক মাত্র মনোবিজ্ঞানী যিনি কোন ধারাবাহিক খুনির স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশকে সহায়তার জন্য নিজেও জিজ্ঞাসাবাদের অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এবার আসুন আমরা চিকাটিলোর জীবন, অপরাধ,  গ্রেফতার, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।

চিকাটিলোর বেড়ে ওঠা

আন্দ্রে রোমানভ চিকাটিলো সাবেক সোভিয়েট রাশিয়ার ইউক্রেন রাষ্ট্রের সুমি অবলাস্টের ইয়া ব্লুশনে গ্রামে  ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা- মা উভয়েই ছিলেন যৌথ খামারের চাষী। স্টালিনের নির্মম কমিউনিস্ট শাসন  আমলে বালক চিকাটিলোর জীবন অতিকষ্টে কেটেছিল। জোসেফ স্টলিনের কমিউনিজমের প্রথম দিকে যখন কৃষকদের নিজ জমি সমর্পণ করে যৌথ কৃষিতে বাধ্য করা হয়েছিল, তখন শুরু হয়েছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াভহতম ফসল বিপর্যয়। এর করুণ পরিণতি ছিল সর্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ। এ দুর্ভিক্ষ এতটাই ব্যাপক ছিল যে  ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ নাকি মানুষের মাংস পর্যন্ত খেত । প্রতিবেশিগণ প্রতিবেশিদের নাবালাক ছেলেমেয়েদের অপহরণ করে তাদের হত্যা করে মাংশ খেত। চিকাটিলোর ময়ের ভাষ্য মতে  চিকাটিলোর  দশ বছর বয়সী এক বড় ভাইও নাকি  প্রতিবেশিদের খাদ্যে পরিণত হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চিকাটিলোর বাবাকে বাধ্যতামূলকভাবে  সোভিয়েত সেনাবাহিনী 'রেড আর্মিতে' যোগ দিতে হয়। কিন্তু জার্মানদের সাথে যুদ্ধে তার বাবা আহত ও বন্দী হন। এ সময় চিকাটিলো তার নিজ গ্রামেই জার্মান নাৎসি বাহিনীর অমানবিক বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেন। এদিকে যুদ্ধে জার্মানদের হাতে বন্দী হলেও চিকাটিলোর বাবাকে দেশদ্রোহী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ জন্য চিকাটিলোর পরিবার মুক্ত সোভিয়েতেও কাঙ্খিত সম্মান ও মর্যাদা পাননি।

যুদ্ধ চলাকালীন চিকাটিলোর পরিবারকে কঠিন দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একদিকে খাদ্যের অভাব, অন্যদিকে নাৎসি বাহিনীর বর্বর নির্যাতন। এ সময় তার মা একটি কন্যা সন্তানেরও জন্ম দেন। কিন্তু ১৯৪১ সালে বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধে যোগদান ও যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জার্মান বাহিনীর হাতে বন্দী থাকায় চিকাটিলোর বাবার পক্ষে স্ত্রী সহবাস সম্ভব ছিল না। চিকাটিলোর মা জার্মান সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েই ১৯৪৩ সালে চিকাটিলোর ছোট বোন তাতিয়ানার জন্ম দেন।

শিক্ষা জীবন

আট বছর বয়সে চিকাটিলোর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিকেই সে লাজুক ও পডুয়া ছাত্র হিসেবে পরিচিত হয়। নিরীহ হওয়ায় চিকাটিলো সমবয়সী ও সহপাঠিদের দ্বারা প্রায়  হাসি-ঠাট্টা ও নির্যাতনের শিকার হত। তবে তার কিশোর বয়সেই সে কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।  আদর্শ ছাত্র ও কঠোর কমিউনিস্ট হওয়ার জন্যই মাত্র ১৪ বছর বয়সেই চিকাটিলো তার স্কুল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও দুই বছর পরে কমিউনিস্ট পার্টির স্থানীয় ছাত্র পরিষদের সভাপতির পদে আসীন হন।

যদিও তার সারাক্ষণ মাথা ব্যথা ও আর্থিক টানাপোড়েন ছিল, তবুও তার বাবার যৌথ খামারের চাষী সন্তানদের মধ্যে সেই প্রথম স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে স্নাতোক ডিগ্রি লাভ করে। এর পর চিকাটিলো মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির আবেদন করে। কিন্তু ভর্তি হতে পারেনি। চিকাটিলো মনে করতেন, তার বাবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের হাতে ধরা পড়ে দেশদ্রোহিতার দুর্নামের জন্যই তাকে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়ে চিকাটিলো কুর্শ নগরে তিন মাসের জন্য দিন মজুরের কাজ করেন। এর পর সেখানে তিনি একটি ভকেশনাল স্কুলে ভর্তি হন এবং কমিউনিকেশন টেকনিশিয়ান ট্রেডে পড়াশাশুনা শুরু করেন। ভকেশনাল পাশ করার পর চিকাটিলোকে উরাল অঞ্চলের নিঝনি তাগিল শহরে একটি নির্মাণ প্রকল্পের কাজে নিয়োগ করা হয়।

যৌন বিক্রিতির প্রকাশ

১৯৫৭ সালে চিকাটিলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে হয় এবং ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি বার্লিনের কেজিবির কমিউনিকেশন ইউনিটে কাজ করেন। সেনাবাহিনীতে তিনি স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন । এ সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন।

চিকাটিলোর যৌন জীবন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। জন্মকালীন তার মস্তিকে গর্ভের তরল প্রবেশ করায় তিনি যে যৌন বিকৃতিতে পড়েন । তারই ফলস্বরূপ তিনি স্থায়ী অপরাধ ও গণখুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। তার যৌনাঙ্খা থাকলেও তার পুরুষাঙ্গ যৌন মিলনের সময় উত্থিত হত না। ভকেশানল স্কুলে পড়াকালীন চিকাটিলোর সাথে তার দু বছরের ছোট এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক দৈহিক মিলনের মতো গভীর ছিল বটে কিন্তু চিকাটিলোর স্বাভাবিক যৌন দুর্বলাতার জন্যই তিন তিন বার যৌন মিললেন প্রচেষ্টা নিয়েও তারা সুখভোগে ব্যর্থ হন। কোন সময়ই চরম মুহূর্তে চিকাটিলোর পুরুষাঙ্গ উত্থিত হত না। বিষয়টি বুঝতে পেরে ১৮ মাস পরে সেই মেয়ে চিকাটিলোর সাথে প্রেমের সম্পর্কের ইতি টানে।

নপুংশকের বহিঃপ্রকাশ

সেনাবহিনী থেকে গ্রামে ফিরে চিকাটিলো তার বাবা-মার সাথে বসবাস করা শুরু করেন। এ সময় একজন তালাকপ্রাপ্তা মহিলার সাথে চিকাটিলো প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু এ সম্পর্কের স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র তিন মাস। বহুবার চিকাটিলো এ মহিলার সাথে যৌন মিলনের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন বারই তার যৌনাঙ্গ উত্থিত হয়নি। তখন এ মহিলা সরল বিশ্বাসে এ বিষয়টি তার বান্ধবীদের কাছে উত্থাপন করে এর প্রতিকারের পরামর্শ চায়। কিন্তু চিকাটিলোর প্রেমিকা যতটা সরল ছিলেন, তার পরিচিতজনরা তা ছিলেন না। তারা বিষয়টি অন্যদের কাছে প্রকাশ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই বিবাহযোগ্য মেয়েদের কাছে চাউর হয়ে যায় যে চিকাটিলো নপুংসক। এতে চিকাটিলো এতটাই লজ্জিত হন যে তিনি আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালান। এর পর চিকাটিলো একপ্রকার তার নিজ বাসভূমি থেকে পালিয়ে অন্যস্থানে চলে যান যেখানে কেউ তার নপুংসকতার কথা জানতে পারবে না  এবং একটি মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে।

জীবিকার সন্ধান ও বিয়ে

নিজ গ্রাম থেকে রাশিয়ায় পালিয়ে এসে চিকাটিলো কাজের সন্ধান করেন। কয়েক মাস পর তিনি রোস্টভ-অন-ডন নামক শহরে একটি কমিউনিকেশন ইনজিনিয়ারের চাকরি পেয়ে যান। ১৯৬১ সালে তিনি রাশিয়ায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন। পরে তার পরিবারও তার সাথে বসবাসের জন্য আসে। এ সময় তার ছোট বোন তাতিয়ানা স্কুলের পড়া শেষ করে তার বাসায় চলে আসে। মাত্র ছয় মাস পর তার বিয়ে হয়ে গেলে তাতিয়ানা তার শ্বশুর পরিবারের সাথে বসবাসের জন্য চিকাটিলোর বাসা ছেড়ে চলে যায়।

ভাইয়ের জীবনযাপনে তাতিয়ানা কোন প্রকার অসঙ্গতি লক্ষ করেনি। তবে তার ভাই ছিল লাজুক এবং মেয়েদের কাছে অত্যধিক লজ্জিত বোধ করত। ভাইয়ের এ লজ্জাবোধ ও একাতিত্ব দূর করা জন্য তাতিয়ানা ফিউদোসিয়া ওডনাছিভা নামের এক মহিলার সাথে ১৯৬৩ সালে চিকাটিলোর বিয়ের ব্যবস্থা করে।

অদ্ভূত উপায়ে সন্তানলাভ

বিয়ের পর ফিউদোসিয়া বুঝতে পারে, তার স্বামী এক প্রকারের নপুংশক। তবে তার ভাগ্য ভাল ছিল যে যৌন মিলনের সুখভোগের জন্য তার স্বামীর পুরুষাঙ্গ যথেষ্ঠ উত্থিত না হলেও তিনি যৌনাঙ্গের বাইরে বীর্জপাতে সক্ষম। তাই সংসার ভাঙ্গার চেয়ে বিকল্প উপায়ে সন্তান জন্ম দিয়ে সংসারকে স্থায়ী করার কৌশল খুঁজে বের করনে তিনি। উভয়েই এক মত হয় যে চিকাটিলো ফিউদোসার যৌনাঙ্গের ভিতর বীর্জপাত না করলেও এর বাইরে করা বীর্জকে হাতের আঙ্গুল দিতে যোনির ভিতর ঠেলে দিয়ে গর্ভধারণের চেষ্টা করবে । এভাবে যৌনসুখ ভোগ করতে না পারলেও চিকাটিলো দম্পতি ১৯৬৯ সালের মধ্যে দুইটি সন্তানের জন্ম দেয়। এ সময় টিকাটিলো আঞ্চলিক খেলাধুলা নিয়ন্ত্রকের অফিসে একটি অল্প বেতনের চাকরি জুটিয়ে নেন।

উচ্চতর ডিগ্রিলাভ ও শিক্ষতার পেশা গ্রহণ

চিকাটিলো এর মাঝে তার উচ্চতর পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ১৯৭০ সালে  রোস্টভ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রুশ ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। এ ডিগ্রির বদলৌতে চিকাটিলো নোভোশাখটিস্কে রুশ ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে তার পেশা শুরু করেন। শিক্ষক হিসেবে চিকাটিলো অত্যন্ত অসফল ছিলেন। তিনি যেমন শিক্ষাদানের সুকৌশল জানতেন না, তেমনি তার ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের শৃঙ্খলাও নিশ্চিত করতে পারতেন না। ছাত্রগণ তাকে নিয়ে প্রায়শই মশকরা করত। দুষ্ট ছাত্রগণ তার নরম স্বভাবের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে তার ক্লাসকে অশান্ত করে রাখত।

যৌন হয়রানি ও শিক্ষকতার অবসান

শিক্ষাদানে অপটু হলেও চিকাটিলোর শিক্ষকতা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে অন্য কারণে। এ কারণটিই ছিল মূলত চিকাটিলোর কুখ্যাত ধারাবাহিক খুনি চিকাটিলো হওয়ারই এক মাত্র কারণ। যৌন সঙ্গমকালে তার পুরুষাঙ্গ উত্থিত না হলেও চিকাটিলোর যৌনাকাঙ্খা ছিল প্রবল। বয়স্ক মহিলারা তাকে নপুংসকতার জন্য অপছন্দ ও পরিহার করলে চিকাটিলো নাবালিকা মেয়েদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। তিনি তার ছাত্রীদের যৌন হয়রানি শুরু করেন।

চিকাটিলো ১৯৭৩ সালে প্রথম এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ১৫ বছরের এক বালিকার শরীরে অন্ধকারে হাত দিয়ে তিনি তার স্তন ও যোনি স্পর্শের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। কিন্তু এর ফলে তাকে খুব একটা শাস্তির সম্মুখিন হতে হয়নি। এর মাত্র কয়েক মাস পরে তিনি শ্রেণিকক্ষেই এক কিশোরীকে যৌনহয়রানি করে ধরা পড়েন। শাস্তিস্বরূপ চিকাটিলোকে পদত্যাগ করতে বলা হলে তিনি তা নিজ থেকেই ছেড়ে দেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে একই শহরে অন্য একটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি সংগ্রহ করেন। তবে ১৯৭৮ সালে স্কুলের অর্থের অভাবে কর্মচারি ছাঁটাইয়ের কবলে পড়ে তিনি তার দ্বিতীয় শিক্ষকতার চাকরিটিও হারান।

এর পর তিনি শাকতি শহরে অন্য একটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি সংগ্রহ করেন। কিন্তু শাকতি স্কুলেও চিকাটিলো একইভাবে ছাত্রীদের যৌনহয়রানি শুরু করেন। এবার তিনি শুধু বালিকাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বালক-বালিকা উভয় লিঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে একের পর এক অভিযোগ পড়তে শুরু করলে ১৯৮১ সালে চিকাটিলোকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখানেই তার শিক্ষকতার পেশার পূর্ণ সমাপ্তি ঘটে।

ভ্রমণদায়ী চাকরিলাভ

স্কুলের চাকরি হারিয়ে চিকাটিলো অন্য পেশায় তার কেরিয়ার গড়ানোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। তিনি রোস্টভ শহরে অবস্থিত একটি নির্মাণ সামগ্রি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করণিকের পদে চাকরি গ্রহণ করেন। এ চাকরির সুবাদে চিকাটিলোকে সোভিয়েতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক ভ্রমণ করতে হত। তার পরবর্তী জীবনের গণখুনের ঘটনাগুলোর অনেকগুলোই চিকাটিলোর এ ভ্রমণকর্মের মাধ্যমেই সুযোগ করে নিয়েছিল।