এ কেমন চলে যাওয়া, ফারুক!

তাপস রায়হান
Published : 8 Oct 2014, 03:29 PM
Updated : 8 Oct 2014, 03:29 PM

তখন আমি ভোরের কাগজে। টগবগে তরুণ। মাত্র অনার্স শেষ করেছি। ১৯৯৩ সাল। পল্টনের জুয়েল হাউসে অফিস। আমাদের গুরু সঞ্জীব'দা
(দলছুটের )। পাগলের মত কাজ করি। অনেকটা লবণের মত। যখন যেখানে প্রয়োজন। কন্ট্রিবিউটিং। কাগজের সম্পাদক মতি ভাই ( প্রথম আলো সম্পাদক) একদিন বললেন, ফয়েজ আহমদকে চেন? বললাম, না। তিনি অবাক এবং বিরক্তি নিয়ে বললেন, তোমার সাংবাদিকতার দরকার নাই। পরদিন তিনি আবার ডাকলেন। বললেন, আমাদের অগ্রজ গুণী সাংবাদিক। চোখে ভাল দেখেন না।  হাত কাঁপে। তার ডিক্টেশন নিতে হবে। প্রতি লেখা ১০০ টাকা পাবা। আমি শুরু করলাম। তারপর…

১৯৯৫ সাল। আমি ভোরের কাগজের সহ-সম্পাদক। একদিন শুনলাম, বাজারে একটা ফাটাফাটি ম্যাগাজিন আসছে। নাম আনন্দভুবন। সম্পাদক গোলাম ফারুক। তেমন পাত্তা দিলাম না।

সে বছরই ঈদে বাড়ি গেলাম। ময়মনসিংহ শহরে। ফারুকের সঙ্গে একদিন দেখা। আমার সঙ্গে দেখা হলেই ঠোঁট বন্ধ করে, গাল ফুলিয়ে একটা নীরব হাসি। তারপর চিৎকার করে বলতো- কীরে শালা………….?

আমিও পাল্টা জবাব দিতাম। তখনই জানলাম ঐ ফারুকই আমাদের ফারুক।

১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। ভোরের কাগজ ছেড়ে দেব ৩১ তারিখে। যোগাযোগ করলাম ফারুকের সঙ্গে। সব বললাম। ও বললো, একটা সিভি দে। আরও বললো, তুই কাজ করিস দৈনিকে। ম্যাগাজিনে ভাল লাগব? যাই হোক আমার আর কাজ করা হয়নি। আমি জনকণ্ঠে জয়েন করলাম। ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে। ২০০৮ পর্যন্ত ছিলাম। এর মধ্যে ফারুক চলে এলো ভোরের কাগজে। তারপর সমকাল। সেখান থেকে এবিসি রেডিও। এরপর বণিক বার্তা। বলতে কোন দ্বিধা নেই, ও ছিল অসম্ভব মেধাবি এবং উন্নত রুচির একজন আলোকিত মানুষ।

গত রোজার কথা। ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতির ইফতার পার্টি প্রেসক্লাবে। বেশ ক'বার ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। বললাম, দোস্ত অনেকদিন দেখা নেই। আয় না ক্লাবে। বললো, দোস্ত অবশ্যই আসবো। দিনটা ভাল। শুক্রবার। সময় পাব। এমনকি ইফতারের আযানের আগেও ওর সঙ্গে কথা। অপারগতা জানিয়ে অনেক কথা।

গতকাল মূল ধারার একটি দৈনিকের সম্পাদক আমাকে মোবাইলে ম্যাসেজে খবরটা জানালেন। আমি নির্বাক। কোন কথা বলতে পারছি না। খেতে পারছি না। শরীর ঘেমে ঘেমে যাচ্ছে। প্রেসার আপডাউন করছে। নিজেকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, ফারুক মুচকি মুচকি গাল ফুলিয়ে হাসছে আর আমাকে ডাকছে। বলছে- কীরে, আমার জানাযায় প্রেসক্লাবে আসলি না কেন? ইফতারে না যাই, খাটিয়ায় তো গেছি।

কীভাবে বলি, দোস্ত- তোর জানাযা পড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। ভাল থাকিস,  অনেক ভাল।