চলে যেতে চাইলে কি, চলে যাওয়া যায়?

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 3 Oct 2011, 05:13 AM
Updated : 3 Oct 2011, 05:13 AM

সত্যি মনটা ভীষণ ভীষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছে নানা বিধ কারণে। গতকালের মুশফিক ভাইয়ের আমার ব্লগ থেকে ব্যান হওয়াটা দুঃখ জনক। আজ কে আমার অত্যন্ত প্রিয় ২ জন মানুষ আইরিন সুলতানা এবং আমিন ভাই যে কোন ভুল বোঝা বুঝির কারণে মৃদু তর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এটি দেখে আমার আবার ও কষ্ট লাগছে। ভার্চুয়াল এই এই জগতে আমরা কেউ কারো আপন নই। আবার আমরাই একে অপরের কত আপন হয়ে গেছি নিজের অজান্তেই। কারো প্রতি বিশেষ ধরনের দুর্বলতা ও জন্মে গেছে । কত যে আপন করে নিয়েছে আমার ব্লগার ভাই বোনেরা আমাকে সেটি ফেস বুকে গেলেই বুঝতে পাই। বয়স এখানে মুখ্য নয়। তাইতো গত কাল রাতে রনোদীপম বসুর ( দাদা) সাথে যখন সেল ফোনে কথা বলছিলাম দাদা কে মনে হচ্ছিল আমার সম বয়সী। তিনি যে আমার অনেক সিনিয়র সেটি কোন ভাবেই মনে হচ্ছিল না। দাদা ই ফেস বুকে আমার সেল নাম্বার টি চেয়েছিল। আর আমি নাম্বার দিতেই সে আমার কাছে ফোন দিল। এবং কথা বলল অনেক সময়। এক পর্যায়ে মুশফিক ভাইয়ের ব্যাপার গুলো তাকে জানালাম।

এই ব্লগে আমিন ভাই, মাহবুব ভাই এই দুই জন ও আমার থেকে বেশ বড়। কিন্তু তাদের সাথে কথা বললেই মনে হয় তারা আমার সেই ছোট্ট বেলার স্কুল জীবনের বন্ধুদের মতন। মাহবুব ভাইকে কারণে অকারণে খাদক/ পেটুক বলি। আমিন ভাইকে পাগল বলি। আইরিন সুলতানা কে বিস্ময়কর মানবী বলি এই গুলো সব ই আমার ভালোবাসার অন্য এক বহিঃপ্রকাশ। এরা ছাড়াও এই ব্লগে আরও কমপক্ষে ৩০ জন আছেন যাদের সঙ্গেও এক ধরনের আত্মার সম্পর্ক তরি হয়ে গেছে। কয় জনের নাম বা বলা যায়। যাই হোক গতকাল রাতে সিঙ্গাপুর সময়ের প্রায় রাত সাড়ে ৩ টা। আমিন ভাই এর একটি এস এম এস আমার সেল ফোনে এলো। এস এম এস টা পড়ে আবারো মনটা খারাপ হয়ে গেল।

এস এম এস টি ছিল এমন-

উজ্জ্বল ভাই, বি ডি ব্লগে আমি আর লিখব না। আমাকে আপনারা আর ব্লগে পাবেন না। আপনি দেখুন আজকের তারেক জিয়া সম্পর্কে খান সোবহানীর একটি লেখায় আইরিন আপা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। কাজেই আমি আর বি ডি ব্লগে যাবনা। লিখবনা। দেখা হবে কথা হবে ফেস বুকে। থ্যাংকস টু ইউ অ্যান্ড মাহবুব ভাই।

আমি সত্যি হতবাক হয়ে যাচ্ছি। আমিন ভাই কেন এমন টি করছে? কাজেই তাকে ফেরাতে জগতের সকল কাজ কে বাদ দিয়ে এই লেখাটি লিখতে হচ্ছে।

সূত্রপাত যেখান দিয়ে-

এই ব্লগের একজন ব্লগার খান সোবহানীর একটি পোস্ট গেল দিনে ব্লগে দেখা যায়। যার শিরোনাম ছিল তারেক রহমান এর প্রতি খোলা চিঠি। মূলত একি ধরনের একটি পোস্ট তার আগের দিন তিনি ব্লগে প্রকাশ করেছিলেন। অর্থাৎ আগের পোস্ট এর সঙ্গে তার পরের দিনের পোষ্টের অনেক জায়গাতে হুবহু মিল পাওয়া যায়। আর এই জন্যই তার ওই লেখায় আমি কমেন্ট করেছিলাম কাট কপি পেস্ট মাষ্টার। একটি ব্লগে ডিপ্লোম্যাটিক ভাবে বার বার একি মাল নূতন মোড়কে খাওয়ানোর এই চেষ্টা সকল ব্লগার রা ধরে ফেলেছেন। কাজেই সঙ্গত কারণে আমিন সাহেব ও তাদের দলে। যাই হোক বিতর্ক যখন শুরু তখন দেখা গেল ব্লগের প্রথম পাতার ডান দিকে সর্বাধিক আলোচিত এবং সর্বাধিক পঠিত জায়গাটিতে খান সোবহানীর আগের লেখাটি নেই। যেটি কালকে ক্রম অনুসারে ২য় স্থানে ছিল। অর্থাৎ আইরিন সুলতানার পারসোনা তবে কি পর্ণগ্রাফি সরবরাহকারী! এই লেখার নিচ থেকে লেখাটি হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। তার মানে বিতর্ক এড়াতে লেখক নিজে তার লেখাটি মুছে দিয়েছেন অথবা ব্লগ টিম সেটিকে সরিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু আগের লেখাটি এখন আর নেই সেহেতু এই নিয়ে আর কোন কথা বলার দরকার নেই। তবে এই ধরনের প্রাকটিস চলতে থাকলে একটি লেখার নিজস্বতা যেমন হারায় তেমনি সেই লেখক ও বিতর্কিত হয়ে যান। কাজেই এই ধরনের চালাকি না করাই উত্তম।

এখন আমার আমিন ভাইয়ের যে অভিমান এটি ভাঙ্গাবে কে? মজার ব্যাপার হল ওই সার হীন লেখা (তারেক রহমান এর প্রতি খোলা চিঠি।) এটি কিন্তু বিতর্কিত। কাজেই ওই লেখায় আমরা ব্লগার রা কমেন্ট করেই ক্লিক সংখ্যা বাড়িয়েছি। পাঠকের কাছে ওই লেখার কদর কতখানি সেটি কমেন্ট দেখলেই বুঝা যায়। যাই হোক একজন নূতন ব্লগার এর লেখা নিয়ে আমাদের মাঝে সামান্য যে ভুল বোঝা বুঝি সেটির অবসান হওয়া জরুরী।

একের পর এক বিভিন্ন ব্লগ সাইটের অশ্লীলতার ভয়াবহ চিত্র প্রতিনিয়ত আমরা দেখছি। আমার ব্লগ, সোনার বাংলা কিংবা বর্তমানে সামু তে অনেকে লাজ লজ্জার ভয়ে যেতে চান না সেখানে নিরাপদ একটি ব্লগ হিসাবে বি ডি থেকে কেউ চলে যাবে এটি আমি মানতে পারছিনা। আর পারবোওনা। আমার প্রিয় মানুষ দুইজন আইরিন সুলতানা এবং আমিন আহমেদ আপনারাই আপনাদের মান অভিমান মিটিয়ে ফেলুন। যেটি হয়েছে সেটি স্রেফ ভুল বোঝাবুঝি। কাজেই আমিন সাহেবের ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়াটা এখানে কখনো কাম্য হতে পারেনা। প্রতিষ্ঠিত এবং সুপার ব্লগার রা চলে গিয়ে ব্লগের ঝাণ্ডা কাদের হাতে তুলে দিতে চান? আমিন ভাই সিদ্ধান্ত বদলান। দেখুন কত পছন্দ করি আপনাদের। অনেক সময় দেই এই ব্লগে। আমি তো এটি মাঝে মাঝে বলি ব্লগ টিম এর পরে সকল ব্লগাররা যে ভাবে এই ব্লগে সময় দেন তাদের থেকেও কোন কোন সময় আমি অনেক বেশি সময় ব্যয় করি এই ব্লগে। এই ব্লগ নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন সত্যি হবেতো যদি আপনারা এই ভাবে চলে যেতে চান?

২৩শে মে, ২০১১ এই ব্লগে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রোফাইল যেটি বলে সেটি হল এই পর্যন্ত আমার পোস্ট এর সংখ্যা ৯৭। কাজেই আর ৩ টি পোস্ট দিলেই ১০০ তম পোস্ট পূর্ণ হবে। কিন্তু দেখুন খুব বেশি দিন কিন্তু আমি এই ব্লগে আসিনি। এর মধ্যেই কত কিছু দেখলাম। অনেক কে নাস্তানাবুদ বানিয়ে ছেড়ে দিলাম। অনেক বিতর্কিত ব্লগার রা যারা বিভিন্ন ব্লগে ব্যান হয়েছে তাদের কে আমরা সবাই এই ব্লগে নিরুৎসাহিত হতে বাধ্য করলাম। ইচ্ছা আছে ১০০ তম পোস্টে সেই ব্লগ আড্ডা বা হট সিট নিয়ে আপডেট জানাবো। আগামী শীতে ঢাকায় বৃহৎ পরিসরে ব্লগ আড্ডার আয়োজন করবো। এবং আমরা ব্লগার রা একটি আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করবো। আমরা একটি এ্যাসোসিয়েশন করবো। সেই সব স্বপ্ন গুলো কি তবে ফিকে হয়ে যাচ্ছে?

ব্লগে মান বা অভিমান থাকবেই। কোন এক সময় নারী বিষয়ক একটি লেখা নিয়ে আমি ও অভিমান করেছিলাম ব্লগ টিমের সাথে। পরে লেখাটি প্রথম আলো ব্লগে দিয়েছিলাম। আসলে একি পরিবারে থাকলে একটা হাড়ির সঙ্গে আর একটি হাড়ির টাক গুঁতা তো লাগবেই। এই নিয়ে কি ধরে বসে থাকা উচিৎ? আমরা বন্ধুরা ও এই বয়সেও ঝগড়া করি। মাস তিনেক আগে যখন বান্দরবনে নীলগিরিতে গিয়েছিলাম সেখানেও আমরা ৬ বন্ধুর মধ্যে ২ জন তর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। তারা দুই জনেই (এ সি এ)। দেখুন সেই গুলো ছিল ভুল বোঝাবুঝি। আবার হোটেলে যখন আসলাম সবাই সব কিছু ভুলে গেল। কাজেই আইরিন সুলতানার সঙ্গে যেই বোঝা পড়ার সমস্যা হয়েছে সেটি একটি ভুলের ই বহিঃপ্রকাশ। আর এই জন্যই ব্লগ আড্ডা জরুরী। কেননা ফিজিক্যাল ভাবে যখন ব্লগারদের মধ্যে দেখা বা জানা শুনা হয় তখন অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

আসুন আমরা সবাই ব্লগ থেকে বিমুখ না হই। প্লিজ আমিন ভাই সিদ্ধান্ত বদলান। এই ভাবে চলে গেলে আমিও তবে চলে যাই। কারণ এই ব্লগে সুপার ব্লগার যারা আছেন তাদের কাউকে হারাতে চাইনা। আর আইরিন সুলতানা আপনি কি একটু অভিমান ভাঙাবেন আমিন সাহেবের? এই দাবিটি করতে পারি কি? সকল অভিমান ভুলে আবারো আসি ফিরে, বিডি ব্লগের তীরে।

ভালোবাসার পদ্ম ফুটুক অভিমানের দীঘির জ্বলে।