গ্রাহাম ডায়ার ও একটি সিংহ পরিবার

মোনেম অপু
Published : 14 Oct 2016, 07:57 PM
Updated : 14 Oct 2016, 07:57 PM

আলোকচিত্রগ্রাহক গ্রাহাম ডায়ার বরাবরের মতোই সেদিনও অবস্থান নিয়েছিলেন এক সাফারিতে। উদ্দেশ্য ছিল একটা সিংহ পরিবারকে পর্যবেক্ষণ করা। যদি কোনো অসাধারণ আচরণ নজরে পড়ে! এ-মতলবে দিনের পর দিন গেলেও দিনগুলো সাধারণত কেবলই মাঠেই মারা যায়। কিন্তু সেদিনটা তার জন্য হয়ে গেল অন্যরকম। গ্রাহামের সবরে সেদিন মেওয়া ফলেছিল। তিনি ছবির পর ছবি তুললেন, আর রচনা করলেন হৃদয়গ্রাহী এক কাহিনী।
.

গ্রাহামের নজরে পড়লো সিংহ পরিবারটির কর্তা বাবুটি অস্থির হয়ে উঠছে। সে কিছু একটা শুনতে পেয়ে সতর্ক চোখে অধীর হয়ে আছে। গ্রাহামও একই তালে আন্দোলিত হৃদয়ে ক্যামেরা নিয়ে চোখ-কানসহ প্রস্তুত হলেন—ঘটনা কী দেখবার জন্যে। সিংহরাজ কি শত্রুর পায়ের আওয়াজ পেয়েছে? নাকি মধ্যাহ্নভোজ শিকারে প্রস্তুত হচ্ছে? না, ব্যাপার একেবারেই উল্টো; গ্রাহাম শিগগিরই দেখতে পাবেন। আর পাঠক! আপনি হয়তো এখন অনুমানেও আনতে পারবেন না গ্রাহাম পরে কিসের সাক্ষী হলেন।
.

রাজা এগিয়ে গেলেন এবং দেখতে পেলেন, সিংহরানী একটা আহত বড়-কান খ্যাঁকশিয়ালকে (big-eared fox বা bat-eared fox) গভীর মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন। রানীজী একেবারেই বদলে গিয়েছেন। তিনি এখন প্রশান্তা ও সুসংহতা। আক্রমণ করার কোনো লক্ষণই আর তার অবয়বে দেখা যাচ্ছে না। গ্রাহাম বুঝতে পেরেছিলেন, শেয়ালটির শ্রোণী অথবা মেরুদণ্ডে চোট লেগেছে। সে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেও পারছিল না। পড়ে থেকে করছিল কেবল চেঁচামেচি।
.

ভাবনা-চিন্তায় যৎসামান্যমাত্রও সময় দেয়াটা রাজাসুলভ কাজ নয়। এতে নিজ পরিবারের অস্তিত্ব বিপন্ন হবার আশঙ্কা থাকে। কাজেই সিংহরাজ স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় আপদটাকে সাবাড় করে দিতে চাইলেন। সাবধানতার তো মার নেই। কিন্তু বাধ সাধলেন রানীমা। তার মাতৃহৃদয় ততক্ষণে পরিবারের খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে সার্বজনীনতার আকাশে বিহঙ্গের মতো আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তিনি গর্জে উঠলেন স্বরাজের বিপক্ষে, আহত শত্রুকে পাশে রেখে।
.

তবে রাজা হলেও রাজা কিন্তু অ-রাজা ছিলেন না। রানীর ইচ্ছাকে, রানীর মাতৃ-ইচ্ছাকে তিনিও মেনে নিলেন। রাজা যখন পিছু হটেন তখন সকলেই কিছুটা শান্তিতে থিতু হতে পারেন। কাজেই এবার বাচ্চা-কাচ্চার পালা, তারাও দেখতে চায় ঘটনা কী। রাজা-রানীর ঝগড়া আর আহতটির ব্যথাকাতরতাপ্রসূত বিলাপের ডোলে পড়ে তারা একরকম দূরে থেকেই উঁকিঝুকি দিচ্ছিল। অবশেষে সবকিছু শান্ত হলে এসে জড়ো হলো মায়ের প্রতিরক্ষার দৃপ্ত প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত বিভীষণ আগন্তুকের সামনে। কৌতূহল মেশানো নেত্রে তারাও দেখতে লাগলো মায়ের ছায়ায় বসে থাকা নতুন আত্মীয়কে।

এর পরের কাহিনী অনুমান-দুঃসাধ্য নয়। তবে খ্যাঁকশিয়ালটি বিপদে একটা পড়েছিল। দুটো নাদুস-নুদুস শেয়াল (jackal) তাকে তাড়া করেছিল। সিংহ পরিবারটি এর আগেই চলে গিয়েছিল সেখান থেকে। আনন্দের কথা হচ্ছে, শেষতক সে শেয়াল দুটোর হাত থেকে বেঁচেই ফিরেছিল। আর একটি কথা না বললেই নয়। সিংহীটাই খ্যাঁকশিয়ালটাকে ধরতে গিয়ে তাকে আহত করেছিল। কিন্তু পরে তার আচরণ একেবারেই পাল্টে গেল। কাহিনীটা এই পরের কাহিনী।

সূত্র:

1. Africa Geographic: The lions and the fox
2. Reshareworthy: Lioness Protects Injured Fox From Male Lion
3. Cyber-Breeze: Lion Family Caught Injured Fox: Then, the Unexpected…

[ওয়েবসাইটে এ-ঘটনায় গ্রাহামের তোলা ১৭টির মতো ছবি দেখেছি। আপনারাও ইচ্ছে করলে সূত্রে দেয়া লিংক অনুসরণ করে সবগুলো দেখতে পারেন। আসল ঘটনাও প্রথম দুটি লিংক থেকে জানতে পারবেন। তবে ব্লগটা লিখতে গিয়ে ৩নং সূত্রে দেয়া প্রতিবেদনটার সহায়তা নিয়েছি। এ প্রতিবেদনটা গ্রাহামের লেখা নয়। যিনি লিখেছেন তিনি, যাকে বলে, মনের মাধুরী মিশিয়ে নাটকীয় ঢংয়ে লিখেছেন। মাতৃত্বের রূপ তৈরি করতে গিয়ে তথ্য সংক্রান্তে হয়তো কিছুটা ছলেরও আশ্রয় নিয়েছেন। আপনারা নিজেরাই সেটার পুরোটা পড়ে দেখতে পারেন।

কপিরাইট বিবেচনায় ছবিগুলো থেকে মোটে চারটে ছবি নিয়েছি। উচ্চতা কমানোর জন্য প্রত্যেকটির উপর-নিচের কিছু অংশ ক্রপ করেছি। ঘটনাটি নিয়ে লেখার লোভে পড়ে লিখতে হলো, ছবি নিতে হলো। কপিরাইট ইনফ্রিনজমেন্টের কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না।]