রাজনীতি সাহেব মারা গেছেন

আবুল হায়দার তরিক
Published : 9 May 2015, 00:46 AM
Updated : 9 May 2015, 00:46 AM

রাজনীতি সাহেব মারা গেছেন

আমি মনে করি রাজনীতি বলতে জনগণের সেবা বা সমাজ সেবামূলক কাজ কর্মের নীতি কে বুঝায়। অন্য ভাবে বলা যায়, যে নীতি বা আদর্শ লালন করে সমাজ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও শাসন ভার গ্রহন করার মানুষিকতা সৃষ্টি করে তাকে রাজনীতি বলে। বই ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানিদের মতে রাজনীতির মূল কথা সবারই জানা আছে। সেটি আমি আর পূণরাবৃত্তি করতে চাই না।

আমার আলোচরার বিষয় হলো বর্তমান ক্ষমতানীতির দেশে আসলেই যে রাজনীতি নেই সেই সম্পর্কে বিশ্লেষন করা। রাজনীতির যে মূল আদর্শ বা দ্বারায় প্রবাহিত হয় তা আমরা বর্তমান রাজনীতিতে দেখতে পাই না। কারন বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনীতি সাহেব বেচে নেই। তিনি অনেক আগেই মারা গেছেন। বর্তমানে আমরা যে সাহেব কে দেখতে পাচ্ছি তিনি হলেন ক্ষমতানীতি সাহেব। রাজনীতির রাজ সাহেবের মৃত্যূর পর অনেক সংরাম করে দির্ঘ দিন নীতি সাহেব বেচে ছিলেন। কিন্তু তিনি শেষ রক্ষা করতে পারেন নি।

বর্তমানে আমাদের সামনে যিনি আছেন তিনি ক্ষমতানীতি সাহেব। আর তিনিই নিজস্ব নীতি ও প্রভাব দ্বারা রাষ্ট্র দখল করে আছেন। যার ফলে প্রতি নিয়ত ক্ষমতার দন্ধে প্রাণ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

কিন্তু দুক্ষজনক হলেও সত্য যে, আমরা সবাই ক্ষমতানীতি সাহেব কে রাজনীতি সাহেব বলে মেনে নিচ্ছি ও স্বিকার করছি। রাজনীতি সাহেবের কথা ছিল, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আর ক্ষমতানীতি সাহেবের কথা হলো আমি রাজনীতি করি নিজের জন্য।

রাজনীতি সাহেব রাজনৈতিক অধিকার বলতে ব্যক্তি স্বাধিনতা দেয়া, মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করার আদর্শ লালন করতেন। অপর দিকে ক্ষমতা নীতি সাহেব রাজনৈতিক অধিকার বলতে মানুষ পুড়িয়ে মারা, গাড়ীতে আগুন দেয়া, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা ও মানুষের মনে আতংক্য সৃষ্টি করা সহ ইত্যাদি আদর্শ লালন করেন।

ক্ষমতানীতি সাহেবের মতে জনগণ আমার প্রজা, আমি যা করবো তাই তাদের মেনে নিতে হবে। অন্যতায় সংবিধান লঙ্গন হতে পারে। অপর দিকে রাজনীতি সাহেব মনে করতেন আমি যা করবো জনগণের মতামত নিয়েই করবো। অন্যতায় জনগণ আমাকে জবাব দিহি করবে, তখন আমি দায় এড়িয়ে যেতে পাড়বো না, লজ্জা মাতায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।

রাজনীতি সাহেব মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন সচ্ছতা ও জবাব দিহিতাই আমার আদর্শ। আমার কাজ সমাজ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়ন করা। অবহেলিত মানুষের পাশে দ্বাড়ানো। অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে মানুষকে সচেতন করা। অন্যের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করা।

এদিকে ক্ষমতা সাহেব মনে প্রানে বিশ্বাস করেন সচ্ছতা ও জবাব দিহিতা বলতে কিছু নেই। আমার আদর্শ রাজনীতির নামে ক্ষমতায় থাকা। রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়নের দিকে তাকানোর সময় আমার নেই। আমি রাজনৈতিক ব্যবসা করি। ৫ বছরে ১০ গুন ব্যবসা না হলে আমার আদর্শ কলংকিত হবে। সুতরাং নিজের পকেট ঠিক তো সব ঠিক।

এখন কথা হলো বর্তমানে বাংলাদেশ কোন অবস্থায় আছে! বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। শুধুই আছে ক্ষমতানীতি ও প্রতি হিংসা। বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করাই ক্ষমতানীতির আদর্শ।

কথায় আছে জ্বলের সাথে তেল মিশেনা। তেমনি ক্ষমতা নীতির সাথে রাজনীতির মিলও হবে না। রাজনীতি সাহেব মারা গেছেন ক্ষমতানীতি সাহেব আমাদের রাষ্ট্র গ্রাস করেছেন। এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যেখানে সাধারণ মানুষের দুঃখ্য প্রকাশ ছাড়া কিছু করার নেই।

কারন আমরা সবাই চার দেয়ালে বন্ধি হয়ে আছি। আর বন্ধি দশাই আমাদের রক্তে মাংসে মিশে গেছে। এখান থেকে কেউ বের হতে চাইছি না। অনেকে আবার চাইলেও পারছে না। কারণ যেখানে ক্ষমতানীতিই প্রধান কর্তা সেখানে আদর্শ বা রাজনীতির কোন মূল্য নেই। অনেকেই তা বুঝে কিন্তু মেনে নিতে চায় না। কারণ আমরা ক্ষমতানীতির যে পিতা-মাতা পেয়েছি তাদের মনে কিভাবে কষ্ট দেই। আর বেশি কিছু করতে গেলে যদি ত্যাজ্য করে দেয়! তাই ভয়েও আমরা কেউ মুখ খোলে কথা বলতে চাই না। এটাই হলো আমাদের সমাজের বাস্তবতা।

এ থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে, আবারো তরুর প্রজন্মকে জেগে উঠতে হবে। সুস্থদ্বারার রাজনীতির জন্ম দিতে হবে। পতন করতে হবে ক্ষমতানীতিকে।#