মৌলভীবাজারে হাওরাঞ্চলে কৃষকের ফসল হারানোর হাহাকার

আবুল হায়দার তরিক
Published : 23 April 2017, 07:22 PM
Updated : 23 April 2017, 07:22 PM

বসন্তের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে কয়েক দফায় ভারী বর্ষনের ফলে তলিয়ে গেছে এশিয়ার বৃহৎ হাওর হাকালুকি, আইল হাওর, বিলকোয়ালির হাওর, হাবলের হাওর কাওয়াদিঘীর হাওর সহ মৌলভীবাজার জেলা অঞ্চলের  ছোট-মাঝারি-বড় কয়েকটি হাওর। কোথাও ২ ফুট, কোথাও ৫ ফুট আবার কোথাও ১০-১২ ফুট পানির নিচে হাওরের মাটি। এতে ফসল হারানোর বেদনায় হাহাকার করছে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক। তাদের অভিযোগ কেউই খোঁজ নিচ্ছেন না। এই এলাকায় প্রায় ৭০ শতাংশ লোক কৃষি নির্ভলশীল। ভারী বর্ষনের ফলে ফসল তলিয়ে যাওয়াতে বার্ষিক দুর্গতির সম্মুখে এই সব হাওর এলাকার লক্ষাধিক কৃষক। যাদের একমাত্র আয়ের উৎস বোরো মৌসুমের উৎপাদিত ফসল। কিন্তু আগামি এক বছর তাদের জীবিকা নির্বাহের চিন্তায় দিশেহারা এই সমস্ত কৃষক। দীঘদিন থেকে হাকালুকি হাওরের ফসল পানির নিচে থাকায় সমস্ত ফসল পচে গেছে। এতে হাওরের মাছে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগবালাই।

স্থানীয় মৎস কর্মকর্তা এই এলাকায় মাছ ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একদিকে ফসল হারানোর শোকে হতাশ কৃষকরা, অন্যদিকে হতাশ জেলেরাও, ফসল হারানোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়। এখানে এমন জেলেও আছে যে দিন আনে তো দিন খায়। তাদের চিন্তার কোন সীমা নেই। সরেজমিনে গেলে দেখা যায় হাওরে যেমন সিমাহীন পানি তেমনি কৃষকের চোখেও পানি। কৃষকদের ঘাম ঝরানো মাঠ অথই জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফলন ভালো হয়েছিল, কয়েক দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলার আশা করছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু সেই আশায় সর্বনাশ বয়ে আনলো উপর থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢল। মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরাঞ্চলের কালেরা, কানেহা, কালেশা, ছকাপন, বড়ধন, বাদে ভুকশিমইল, কুরবানপুর, শাহাপুর, গৌরকরন, মুক্তাজিপুর ও জুড়ী উপজেলার জায়ফর নগর ও পশ্চিম জুড়ী, বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘোরে দেখা গেলো হেকটরের পর হেকটর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফসল ঘরে তুলতে না পেরে নিরবে কাঁদছেন কৃষকেরা। তারপরেও তাকিয়ে আছেন আবাদ করা সেই জমির দিকে, কখন জেগে উঠবে। এদিকে বৃষ্টিও থামছে না, দফায়-দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। অসময়ে আকাল বন্যায় দিশেহারা মৌলভীবাজারের লক্ষাধিক কৃষক। হাবলের হাওরের একজন কৃষক বলেন, চোখের সামনে জোয়ারের মত এসে আধাপাকা ধান পানিতে ডুবে আছে। ঘাম ঝরানো ফসলি মাঠ থেকে চোখ সরাতে পারছি না। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বাড়ি।

এই অঞ্চলের মানুষ এক মাত্র বোরো ক্ষেতের উপর নির্ভরশীল, অথচ এক মুঠো ধান ঘরে তুলতে পারেনি। তাই তাদের কষ্টের কোন সীমা নেই। মৌলভীবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান  জানান, চলতি বৎসরে জেলায় বোড় ধানের আবাদ করা হয় প্রায় ৫৫৪৬০ হেকটর। এর মধ্যে ভারী বর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার হেকটরেরও বেশি জমির বোরো ধান।

কৃষকদের দাবি এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যে ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিল কৃষকেরা। সারা বছরের খাবার ঘরে থাকবে। আগামি বছর ভালোই কাটাতে পারবে। কিন্ত তাদের স্বপ্ন পূরণ হলো না। একটি ধানও ঘরে তোলা গেলো না। দুশ্চিন্তায় তাদের আগামি বছরের জীবিকা নির্বাহ। একাধিক কৃষক বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জের বাঁধটি ক্লিয়ার থাকলে হাকালুকি হাওরের পানিসমূহ কুশিয়ারা নদী দিয়ে প্রবাহিত হত। সেই বাঁধটি ক্লিয়ার না থাকায় আজ আমরা ফসল হারানোর বেদনায় হাহাকার করছি।