টিএসসিতে যৌন হয়রানীর প্রতিবাদে চট্টগ্রামে ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট, সংস্কৃতিজন ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধন ও মিছিল

যাহিন চৌধুরী
Published : 18 April 2015, 10:19 AM
Updated : 18 April 2015, 10:19 AM

"প্রতিবাদ-প্রতিরোধে নিপাত যাক যৌন-সন্ত্রাস" শিরোনামে গতকাল ১৭ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল চারটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে একটি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয় । সোস্যাল নেটওয়ার্ক ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খোলার মাধ্যমে এই আয়োজনটি করা হয় । গেল পহেলা বৈশাখ উদযাপনের দিন ঢাকায় টিএসসি চত্বরে ক'জন তরুণীকে হয়রানী করার প্রতিবাদে এ সমাবেশটি করা হয় । ইভেন্টটির আয়োজন করেন একজন পেশাজীবি ইসমাইল আজাদ, ফটোগ্রাফার চিত্রযোধী আবির যিনি অনলাইনে লিখে থাকেন এবং সাথে আমি । এছাড়া সার্বিকভবে ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ অ্যাকটিভিস্ট যেমন "মানবিক", "লাইটার", চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গ্রুপ অ্যাকটিভিস্ট "দাঁড়কাক" সহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ । সেই সাথে ক'জন পেশাজীবি, লেখক, শিল্পী, সমাজকর্মীও সাংস্কৃতিক কর্মীও আমাদের ইভেন্টে অংশ নেন ।

ইভেন্টটির মূল প্রতিপাদ্য ছিলো, {"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ষবরণের উৎসবে হাজার হাজার মানুষের সামনে ঘটেছে তরুণীদের শ্লীলতাহানি। মাত্র জনাতিরিশেক "লিঙ্গ-সন্ত্রাসী" ঘটিয়েছে এমন ঘৃণ্য পাশবিক নির্যাতনটি … … … পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটেছে ঘৃণ্য ঘটনাটি, অথচ পুলিশ তাদের থামানো তো দূরের কথা, হাতে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে!!

আসুন এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। ঘৃণা জানাই সমস্বরে! নির্বিকার শীতল তেলাপোকায় পরিণত হবার আগে একবার আওয়াজ তুলে যাই এসব নরকের কীটের বিরুদ্ধে"}

পুলিশকে কেন নিষ্ক্রিয় দেখা যায়? শাহবাগ, টিএসসি, ঢা.বি. পয়েন্টটিতে হরহামেশাই ঘটছে সহিংস ঘটনা। বইমেলা থেকে ফেরবার পথে চোরাগোপ্তা হামলায় নিহত হলেন অভিজিৎ রায়, পুলিশ নির্বিকার। পহেলা বৈশাখ উৎসব চলাকালীন লোকে লোকারণ্য চত্বরে প্রকাশ্যে সবার সামনে নারীর শ্লীলতাহানি হল, তখনও পুলিশ নির্বিকার!!! পুলিশের সামনে দিয়ে চলে গেল অপরাধীরা! আজকের এতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ একজনকেও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলোনা!
ঐ মাত্র জনা তিরিশেক চ্যাংড়া ইভটিজার এত শক্তিশালী যে, শত শত লোকের মাঝখান দিয়ে এমনকী পুলিশের সামনে দিয়েও তারা বেরিয়ে গেল?!! কীভাবে সম্ভব হলো???!

আমরা শংকিত হই, পুলিশ আসলে কী প্রটোকলে চলে??? ডিএমপির এই মুহূর্তের প্রটোকল কী??? শাহবাগ-টিএসসি-জাদুঘর এই পয়েন্টের পুলিশ কি কোন বিশেষ প্রটোকলের আন্ডারে আছে??? কী সেটা???? সে প্রটোকল যাই হোক না কেন, সেটা কেন জন-বান্ধব নয়???? তাহলে পুলিশ দিয়ে মানুষ করেটা কী??? কেন বারেবারে একটার পর একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটছে আর আমাদেরকে শোক ও ক্ষোভের সাথে দেখতে হচ্ছে প্রশাসনের নীরব রূপ??? পুলিশ আর প্রশাসনের কাজ আসলে কী????
যদি রাজধানী শহরের মেট্রোপলিটন পুলিশের অবস্থা এই হয়, তাহলে চিটাগং বা আরো ছোট শহর গুলোর কী অবস্থা??? জনজীবন সেখানে কেমন???
সেই সাথে হতাশ হই জনমানুষ কেমন করে, কেন এমন নির্বিকার হলো?!!! যে তাদের সামনে দিয়ে অপরাধী একটা নিকৃষ্ট কাজ করে চলে যাচ্ছে, অথচ একটা মানুষ রা- টুকু কাড়ল না!!
এ প্রশ্নগুলো ঘুরছে সবার মাথায় । সবাই চাপা আতঙ্কে, সচকিত হয়ে আছে । শুনেছি যুদ্ধচলাকালনি কার্ফুর বিরতির সময় মানুষ এভাবে চলাফেরা কাজকর্ম করত । এখন কেন ??? কেমন করে সৃষ্টি হল এ ধরণের পরিস্থিতির???


গতকালের ইভেন্টটি করবার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, মানুষ আসলে ফুঁসছে ভেতরে ভেতরে- রাগে, ক্ষোভে! সে তপ্ত নিঃশ্বাস টা কোথাও না কোথাও দিয়ে বেরিয়ে আসবেই…! এটা স্বাভাবিক । এবং গতকালকে আমাদের ইভেন্টের বক্তারা তাদের কথার আড়ালে তাই প্রকাশ করে গেলেন ।

পরিস্থিতি যখন এরকম নাজুক, প্রশাসন যখন সাধারণ নাগরিকের ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধানে অক্ষম (বা অনিচ্ছুক!!!) তখন শেষতক নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নাগরিককে নিজেই নিতে হবে । নারীকে আক্রমণাত্বক প্রতিরোধ করা শিখতে হবে । এছাড়া ঠিক এই মুহূর্তে আর কোন প্রতিষেধক নেই ।
আর এর সাথে সাথে ভবিষ্যতের সময়ের পরিচালকদেরকে- অর্থ্যাৎ আজকের সময়ের শিশুদেরকে গড়ে তুলতে হবে সুস্থ ও সচেতন মানসিকতার অধিকারী করে । আজকের শিশু, যারা ভবিষ্যতে হতে যাচ্ছে এক একজন নারী ও এক একজন পুরুষ- সম্মিলিতভাবে সমাজ বিনির্মাণের কারিগর, তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে শক্ত স্নায়ু আর নির্মল হৃদয়ের মানুষ হিসাবে ।

ইভেন্টে শিল্পী শান্তনু বিশ্বাস বলেন, "নারী আর পুরুষ শত্রু নয়, একে অপরের বন্ধু।" লেখক নাহিদ খান বলেন, "নারীর পোষাক কেমন হবে তা নারীই ঠিক করবে, কিন্তু নারীর পোষাক এমন হবেনা, যা তাকে বন্দী করে রাখবে!" উপস্থিতদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যাক্তি বিস্তার আর্ট কমপ্লেক্স এর পরিচালক জনাব আলম খোরশেদ মানববন্ধন ও মিছিল এর শেষে সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান ।


শপথের বাক্যগুলো জুড়ে ছিল নারীর প্রতি কখনো কোন প্রকার নিপীড়ন, বৈষম্য না করবার অঙ্গীকার । ছিলো নারী ও পুরুষ সম্মিলিত অর্থে মানুষ হিসেবে জীবনের পথে এগিয়ে যাবার অঙ্গীকার, সমাজ বিনির্মাণের অঙ্গীকার ।

ছবিগুলো তুলেছেনঃ অন্যতম আয়োজক ফটোগ্রাফার মহিউদ্দিন আবির।।।