ক্রিকেট বিশ্বে নতুন পরাশক্তি বাংলাদেশ! (২য় পর্ব)

মোঃ মুজিব উল্লাহ
Published : 29 March 2012, 06:01 AM
Updated : 29 March 2012, 06:01 AM

(পূর্ব প্রকাশের পর)

যে কোন ক্রিকেট দলের সাফল্যের পেছনে খেলোয়াড়দের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সবারই কমবেশী অবদান থাকে। নির্বাচকমণ্ডলী থেকে গ্রাউণ্ডসম্যান, কোচ থেকে শুরু করে পুরো ম্যানেজমেন্ট। তবে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এই যে, এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের চমকপ্রদ সাফল্যের যারা নেপথ্য রুপকার, তাদের অবদানের কথা ঠিক তেমনভাবে বলা হয় নি। আজকের এই `টিম বাংলাদেশ` এর পিছনে কোচ স্টুয়ার্ট লসহ কোচিং স্টাফ, নির্বাচকমণ্ডলী, ম্যানেজমেন্টের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ও সর্বোপরি ক্রিকেটপ্রেমী দেশবাসীর উৎসাহ ও প্রার্থনা কোন অংশে কম নয়। সব মহলের মিলিত প্রচেস্টায় আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল!

একটি দলকে ভালো করতে হলে খেলোয়াড়দের সম্মিলিত প্রয়াসের সাথে আরও যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেগুলোর মধ্যে প্রতিপক্ষ ও কণ্ডিশনের উপর নির্ভর করে সঠিক একাদশ নির্বাচন, খেলোয়াড়দের ফিটনেস, অধিনায়কের ভূমিকা ইত্যাদি অন্যতম।

কোন খেলোয়াড় যদি পরিপূর্ণ ফিট না থাকেন তাহলে তাকে ঝুঁকি নিয়ে স্কোয়াডে রাখা উচিত নয়। আর ইনজুরিতে পড়লে খেলোয়াড়দের দ্রুত চিকিৎসার দায়িত্ব ক্রিকেট বোর্ডের নেওয়া উচিত। বিগত দশকে মাশরাফিসহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের ইনজুরি ও চিকিৎসার ব্যাপারে বোর্ডের সঠিক দায়িত্ব পালনে ঘাটতি দেখা গেছে। অভিজ্ঞ মহলের দৃঢ় বিশ্বাস প্রথমবারেই যদি মাশরাফির ইনজুরি নিয়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হত তাহলে আর `ইনজুরি আর মাশরাফি` সমার্থক হতো না। ঐদিকে ইনজুরি লুকিয়ে ক্রিকেটারদের আইপিএল, বিপিএল সহ গ্ল্যামার ও অর্থে ভরপুর টি টুয়েন্টি খেলা উচিত নয়। আবার বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে কোন দেশের ঘরোয়া লীগ খেলাও উচিত নয়। অতীতে বিদ্রোহী আইসিএলে খেলে আফতাব, অলক, শাহরিয়ার নাফিস, নাজিমরা তাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন। সবার আগে জাতীয় দলে খেলাটাকে সব ক্রিকেটারেরই প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অসি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ককে রোল মডেল মানা উচিত যদিও এবারের আইপিএলে তিনি পুনে ওয়ারিয়র্সের পক্ষে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। বিগত সালগুলোতে জাতীয় দলের জন্য নিজেকে শতভাগ ফিট রাখতে তিনি আইপিএলে খেলেন নি।

একটি দলের জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে অধিনায়কের একটি সিদ্ধান্তই অনেক সময় বড় ধরনের নিয়ামক হয়ে উঠে। টাইগারদের দলপতি মুশফিকুর রহিম অনেক প্রতিভাবান হলেও অধিনায়ক হিসেবে বিচক্ষণতার পরিচয় ঠিকমত দিতে পারেন নি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি বর্তমান সাফল্যকে ধরে রেখে সামনে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি হতে চায় তাহলে অধিনায়ক হিসেবে মুশফিককে আরো আক্রমণাত্বক, বুদ্ধিমান ও দায়িত্বশীল হতে হবে। একজন অধিনায়ক হিসেবে তার মাঠে ও মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেয়া, পরামর্শ দেয়া, ব্যাকআপ দেওয়া উচিত। আর ক্রিকেটীয় যে কোন সিদ্ধান্ত খেলার মাঠে আরো দক্ষতার সাথে নিতে হবে। নিকট অতীতে ফিল্ডিং সাজানো, বোলারদের ব্যবহার ও ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অধিনায়কের রক্ষণাত্বক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে। আদর্শ অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক, শ্রীলংকার মাহেলা জয়াবর্ধনে ও সোনালী সময়ের ভারতীয় টি টুয়েন্টি ও ওয়ানডেতে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ধোনি (এখন অধিনায়ক হিসেবেও ব্যর্থ) উল্লেখযোগ্য নাম।

একাদশ নিয়ে কথা বলার আগে খেলোয়াড়দের আচরণের দিকে দৃষ্টি দিই। রাজকীয় এ খেলায় খেলোয়াড়দের খেলার মাঠে মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলোয়াড়সুলভ আচরণ করা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে আচরণবিধি নিয়ে নানা বিতর্কে এখনকার বিশ্বসেরা অলরাউণ্ডার ও সাবেক অধিনায়ক সাকিব, ব্যাটিং স্টার তামিমের সাথে বোর্ড সভাপতি মুস্তফা কামালের অনেক জলঘোলা হয়েছে। খেলোয়াড়দের মাঠে ক্রিকেটের কোড অব কনডাক্ট ও মাঠের বাইরে বোর্ডের নীতিমালা মেনে চলতে হবে। হঠাৎ করে পাওয়া তারকাখ্যাতিতে ব্যক্তিজীবনে উচ্ছৃংখল হয়ে যেন আবার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বিরাট কোহলি থেকে পজিটিভ শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। সাবেক ইংলিশ অলরাউণ্ডার ফ্লিনটফ (ফ্রেডি), অস্ট্রেলিয়ান সাইমণ্ডস এর কার্যকলাপ তো ক্রিকেটারদের জানাই আছে। এশিয়া কাপে তামিমের অর্ধশতক উদযাপনের ভঙ্গিতে (যদিও তিনি স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে করেছেন বলে জানিয়েছেন) কাউকে ইঙ্গিত করে করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। উদীয়মান নাসির হোসেনকেও এ ব্যাপারে একটু বেপরোয়া দেখা গেছে। সত্যিকারের তারকা হতে হলে এসব বিষয়ে আরো ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তী শচীন তার দীর্ঘ ২৪ বছরের (চলমান) ক্যারিয়ারে কখনো দৃষ্টিকটু বিতর্কে জড়িয়েছেন বলে তার কট্টর সমালোচকরাও বলতে পারেন নি। আমাদের ক্রিকেটাররা তাকে এ ক্ষেত্রে আদর্শ মানতে পারেন। স্নায়ুচাপের ক্রিকেটে নিজেকে নিয়ণ্ত্রন করাও সফলতা লাভের অন্যতম হাতিয়ার। এ সকল ক্ষেত্রে টাইগাররা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ব্যাপারে আরো সচেতন হয়ে পরবর্তী পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করবেন এই আশায় আছে সবাই।

(চলবে)

মোঃ মুজিব উল্লাহ: mdmujib_ullah@yahoo.com