বাম্পার ফলনেও কৃষক হতাশায়!

আব্দুল হান্নান
Published : 10 June 2015, 08:49 PM
Updated : 10 June 2015, 08:49 PM

"সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।"



রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণীর স্মরণীয় পংক্তিটি আজ নিরাশায় রূপান্তর হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষকের মুখে হাসি নাই, মাঠে বাম্পার ফলন, ধানের বাইল দেখলে মন জুড়িয়ে যায়, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সুবিধা থাকায় সেচের কোন সমস্যা হয়নি, ছিল কীটনাশক ও সারের সঠিক সরবরাহ, সব কোম্পানি ও সরকারি বীজের মানও ছিল চমকপ্রদ। আবহাওয়াও ছিল অনুকুল। তবুও মনে সুখ নেই কৃষকের। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠছে না। ঘিওর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের মোহাম্মদ বারেক বলেন, " এখন জমি বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় নাই। নতুন ধান বিক্রি করছি ৫৫০ টাকা মণে। এ ধান জমিতে চাষ করতে বীজ, সেচ, সার, ডিজেল, কীটনাশক, শ্রমিকসহ প্রতি মন উৎপাদন খরচ হয়েছে ৭৫০ টাকা। যদি এই দাম থাকে, তাহলে আগামীতে আর কেউ ধান চাষ করবে না।" কৃষক অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, "সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত গভীর নলকুপ সমবায় সমিতির মাধ্যমে নিয়ে ১০০ বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করি, কিন্তু অন্যান্য খরচসহ প্রতি মন ধানের দাম প্রায় ১০০০ টাকা পড়েছে। বাজারে এখন সর্বোচ্চ দাম ৬০০ টাকা মন। সামনের বছর গভীর নলকুপটি চালাবো কিনা ভেবে কোন কুলকিনারা পাচ্ছিনা। আর কত লোকসান দিয়ে আমরা টিকে থাকবো।

এদিকে ৫০০ টাকার নিচে কোন শ্রমিক পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে গৃহস্তগিরি বাদ দিয়ে শ্রমিক হওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।" এত গেল ধানের অবস্থা। মরিচ চাষীদের তো মাথায় হাত। জমিতে মরিচ আর মরিচ। জমি থেকে এসব কাঁচা মরিচ তুলে কৃষকেরা বিক্রির জন্য নিচ্ছেন পাশের বরংগাইল হাটে। হায়!! মরিচের প্রচুর আমদানি। কৃষক ক্ষেত থেকে তুলে বস্তায় ভরে ভ্যান ভাড়া দিয়ে নিয়ে এসেছেন এই হাটে। আড়াই টাকা কেজি দরে দাম মাত্র ১০০ টাকা মণ। যা ক্ষেত থেকে তুলতেই শ্রমিকরা নিয়েছে ৩ টাকা কেজি। মনের দুঃখে কৃষক আব্দুর রহমান মরিচ তুলা বন্ধ করেছে। এদিকে কাঁচা মরিচ পেকে যাচ্ছে। মরিচে মাথা ভার হয়ে গাছ মাটিতে নুইয়ে পড়ছে। কিন্তু মরিচ তুলে বাজারে নেওয়ার সাহস হচ্ছে না কৃষকের। আব্দুর রহমান আরো জানান, "১ একর মরিচের জমিতে আশি হাজার টাকা খরচ পড়েছে কিন্তু মনে হয় দশ হাজার টাকার মরিচও বেচতে পারব না।" ধান ও মরিচের দাম না পাওয়া কৃষক দিশেহারা। কেউ তাদের দেখার নেই। কাগজে কলমে সরকার ৮৫০ টাকা মন দরে ধানের দাম ধরেই যেন তাদের দায় শেষ করেছে। স্হানীয় গুদাম কর্মকর্তারা কৃষক হতে ধান কিনছে না। যখন কিনবে তখন আর কৃষকদের কাছে ধান থাকবে না, তা চলে যাবে মজুতদারদের হাতে। রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় এই মজুতদাররা গুদাম কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে ঠিকই প্রতি মণ ৮৫০ টাকা দরে ধান গুদামে সরবরাহ করবে। মাঝে সরকারের এই অতিরিক্ত টাকা গেল মজুতদার, চাতাল মালিক, গুদাম কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। এভাবেই কৃষক আজ দিনে দিনে পথে বসছে। সরকারের খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ভবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়বে আর বাংলাদেশ আবার খাদ্য আমদানীকারক দেশে রূপান্তরিত হবে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে কৃষকদের জমিতে চাষাবাদ বাদ দিয়ে শহরে এসে শ্রমিক হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।