আওয়ামী লীগের মন্ত্রীগুলো এমন ভারসাম্যহীন কেন?

আহমদ আল হুসাইন
Published : 30 Sept 2014, 08:10 AM
Updated : 30 Sept 2014, 08:10 AM

বৈচিত্র্য মণ্ডিত আওয়ামি লীগের মন্ত্রিরা । একজন কে আরেক জনের সাথে তুলনাই করা যায় না । সবাই বিশেষজ্ঞ । বিশেষ গুণের কারণে কয়েকজন মন্ত্রি কে এক কথাতেই সবাই চেনে । এই যেমন ফটকাবাজ বা রাবিশ বললেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সুন্দর মুখচ্ছবি টা ভেসে ওঠে । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশ জাতি র চিন্তা করেন আর ঘুম ভাঙলেই মঞ্চে সবাই কে গান শোনান মহসিন আলি । এবার আবার নতুন করে আলোচনায় আসলেন ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

নিউ ইয়র্কের কুইন্স কাউন্টির বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তরায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দাবি করেন যে তিনি হজ ও তাবলীগের বিরোধী। কিন্তু ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ। তাই হজ নিয়ে এমন মন্তব্য করায় যুক্তরাষ্ট্রেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলীগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলীগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোন কাম নাই। এদের কোন প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন আছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দীকী প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন 'সজিব ওয়াজেদ জয় কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোন সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন। জয় শুধু উপদেশ দিতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক সরকার। লতিফ সিদ্দিকী প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বিদেশে এসেছেন কামলা দিতে এবং সবসময় কামলাই দিবেন। প্রবাস থেকে প্রকাশিত পত্র পত্রিকা গুলোকে লতিফ সিদ্দিকী টয়লেট পেপার বলে আখ্যায়িত করেন। অপরদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে যারা গ্রহণ করেন তাদেরকে 'টক মারানি' বলে অভিহিত করেন। পত্র পত্রিকা যদি টয়লেট পেপার হয় আর টক শোতে যারা গ্রহণ করেন তারা যদি 'টক মারানি' তাহলে এই কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্ত্রি নিজেকে কি দাবি করেন ? উনি হয় তো রাম ছাগল না হয় বস্তির পাগল ।

টক মারানি, কামলা আর টয়লেট পেপারের মত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য যদি মন্ত্রির ভাষা হয় তাহলে বুঝতে হবে উনি মানসিক ভারসাম্যহীন। কিংবা উনি ভালো বংশের মানুষ না । উনার বংশের সমস্যা আছে। সাধারণ মানুষ যদি উনার মত নির্লজ্জ বেহায়া আর অবিবেচক হতেন তাহলে এই সব কথা বলার পরে উনাকে জুতা পেটা করত এটা অনেক টা নিশ্চিত। কোথায় কি বলতে হয়, কাকে কি বলতে হয় এটাই যে জানে না সে মন্ত্রি হয় কিভাবে ? আর যারা এই সব পাগল কে মন্ত্রিত্ব দেন তারাই বা কত টা সুস্থ মস্তিস্কের ।

এবার অভিজ্ঞতার কথা বলি। এই মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখে আইসিটি মন্ত্রানালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সোসাইটি টিএসসি তে দুই দিন ব্যাপি 'আইটি ফেস্ট' এর আয়োজন করে । টাইটেল স্পন্সর ছিল এরিকসন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী । মন্ত্রি বক্তব্য শুরুই করলেন আইটি সোসাইটির কঠোর সমালোচনা দিয়ে । ঢাবি আইটি সোসাইটি নাকি ব্যবসা শুরু করেছে । প্রযুক্তি নির্ভর ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়ে কিছু উদ্যমী ছাত্র-ছাত্রি মিলে আইটি সোসাইটি নামে একটা সংগঠন দার করিয়েছে। উৎসাহ দেওয়া বাদ দিয়ে উনি সমালোচনা করলেন । আর এরিকসন যেখানে টাকা দিয়ে সহায়তা করেছে, তবুও মন্ত্রি এরিকসনের সমালোচনা করে বললেন ওরা নাকি ঢাবি কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানানোর ষড়যন্ত্র করছে । তখন ই আমি বুঝেছিলাম উনি আসলে ভারসম্যহীন ।

পিতা পাগল হলে সন্তানও পাগল হবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার নিজেই যেখানে ভারসম্যহীন, বেসামাল তখন মন্ত্রিরা এমন রাবিশ হবে, পাগলের মত গান শোনাবে, যাচ্ছে তাই মন্তব্য করবে এটা অস্বাভাবিকের কিছুই না । তসলিমা নাসরিন আর লতিফ সিদ্দিকির মধ্যে তাহলে পার্থক্য কি থাকল ? হয় তসলিমা কে দেশে ফেরত আনতে হবে না হয় লতিফ সিদ্দিকি কে তসলিমার মত দেশান্তরি করতে হবে ।
লতিফ সিদ্দিকির কিছুই হবে না। লতিফ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে রাজপথে নামলে সরকার লাঠিপেটা করবে, টিয়ার শেল বা কাঁদানে গ্যাস ছাড়বে। লতিফ সিদ্দিকি যা বলেছে তাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে কি না তা সরকার ভেবে দেখবে। ধাপে ধাপে যেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম খুনের ( সাত খুন ) রাজত্ব কায়েম করছে সেখানে লতিফ সিদ্দিকির এই কথায় সরকারের কি ই বা আসে যায় ।