বাংলাদেশের মানুষের বেশ কয়েকটা জন্মদিন হয়। আসল জন্মদিন তো আছেই। এর বাইরে আছে সার্টিফিকেটের জন্মদিন। এস এস সি দেবার আগে সার্টিফিকেটে বয়স কমিয়ে দেয়া হত। হোক না একটু আইবুড়ো, তবুও চাকরির বাজারে একটু বেশি দিন এপ্লাই করার সময় তো থাকবে! তবে আমার আম্মুর এস এস সি সার্টিফিকেটে স্কুল থেকে ভুল করে বয়স বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আম্মুর এখনো সেই আফসোস রয়েই গেছে।
এরপর এলো জন্ম নিবন্ধনের পালা। স্কুলে ভর্তি করতে হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতেই হবে। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন জন্ম নিবন্ধনের প্রচলন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। তো, ক্যাডেট কলেজে এক্সাম দেবো। জন্ম নিবন্ধন সনদ তোলা হলো। আমার বাবা আমার নাম দিলো 'আকিব রায়হান চৌধুরী'। আমি তো মহা বিরক্ত। ক্যাডেট কলেজে ওই নাম দিয়েই এক্সাম দিলাম।
এরপর এসএসসি দেব। তখন ঠিক করলাম আমার নাম আকিব রায়হানই থাকবে। চৌধুরী-টৌধুরী আমি মানি না। মানব না। আবার জন্ম নিবন্ধন সনদ তোলা হলো নতুন ভাবে। এবার শুধু আকিব রায়হান। জন্মদিনের তারিখ আবারও চেঞ্জ করা হলো। সেই তারিখ দেখিয়েই এসএসসি, এইচএসসি দিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। এর মধ্যেই আমার ৩টা জন্মদিন হয়ে গেলো।
৪র্থ জন্মদিনও আছে আমার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সাম দিতে যেয়ে দেখি জন্ম তারিখ লেখা লাগবে। আমি তো ভুলে গেছি সার্টিফিকেটের জন্ম তারিখ। এক্সাম হলে বসে আম্মুকেও কল দিতে পারবো না। 😀 একটা আন্তাজে মেরে দিলাম। বাসায় এসে দেখি তা ভুল 😀 । একটা মানুষেরই ৪ টা জন্মদিন। হা হা হা।
যাই হোক, বাঙালীর আরেকটা জন্ম তারিখ আছে। জাতীয় জন্ম তারিখ বলা যায়। সেটা হলো জানুয়ারির ১ তারিখ, ফেসবুকে সবার ফ্রেন্ড লিস্টের বিশাল অংশের জন্মদিন জানুয়ারির ১ তারিখ। কেউ বা ফেক আইডি, কেউ বা একাউন্ট খুলবার সময় ভুলে ওই কাজ করেছিলো। মাঝে বিপদে পড়ে যাদের জন্মদিন ১ জানুয়ারি সত্যিকার ভাবেই। বেচারাদের নিয়েও ফেসবুকে হাসাহাসি হয়।
জন্মদিন নিয়ে এখন আলাদা সংস্কৃতি তৈরি করেছে ফেসবুক। ফেসবুকে ছবি দিয়ে উইশ করা খুব কমন। কেউ কেউ আবার ভিডিও উইশ করে বসে আছে। আমি নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর সেকেন্ড ইয়ারে ৩ জনের জন্য ভিডিও উইশ বানালাম। একেকজন রীতিমত আবেগ আপ্লুত। এক বন্ধুকে আমরা ষাঁড় আরিফ বলে ডাকি। ষাঁড় আরিফের জন্মদিনের ভিডিও উইশ, সে পুরো সূর্যসেন হলের শত সহস্র মানুষকে দেখিয়ে বসে ছিলো। তার বন্ধুরা এত সুন্দর উইশ করেছে। সবাইকে দেখতেই হবে ……
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে রুম মেটদের মধ্যে থাকে আত্মার বন্ধন। সবার জন্মদিনেই আনা হয় কেক। এরপর, সবাই মিলে হই হুল্লোড় করে। এই ব্লগ পোস্ট লেখার সময় আমি জন্মদিনের উইশ নিচ্ছি আর নিচ্ছি। সব সময় আমি তার ছিড়া উইশ করায় আমি ভেবেছিলাম আমাকে কেউ চমকে দিতে পারবে না। কিন্তু, আসলেই চমকে দিয়েছে আমাকে বেশ কয়েকজন।
বন্ধুত্ব বেঁচে থাক, বন্ধুরা বেঁচে থাক। জন্মদিন আসবে, যাবে। বেঁচে থাকলে আমরা বুড়ো হবো। তবে স্মৃতিগুলো তো বিমলিন। তাই না?