খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য

আলমগীর আলম
Published : 2 May 2017, 01:09 AM
Updated : 2 May 2017, 01:09 AM

আমাদের এই জনবহুল দেশে খাদ্য নিরাপত্তা খুব জরুরী যার জন্য সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বলয় তৈরী করতে পেরেছে। এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই- কি চাল, কি সবজি, কি ফল- কোন কিছুই কমতি নেই এখন। যেখানে যাবেন খাদ্যে কোন সংকট পাবেন না, অজো পাড়াগাঁয়েও পেপসি পাবেন, চিপস পাবেন, ফার্মের মুরগী পাবেন, চাষের মাছ পাবেন। কোন খাদ্য ঘাটতি নাই। দেশের সরকারী গুদামে খাদ্য মুজত থাকছে, বেসরকারী পর্যায়েও কোন ধরনের খাদ্য পণ্যের ঘাটতি পাবেন না।

কিন্তু নিরাপদ খাদ্য পাবেন না:

দেশের বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে বড় অর্জন হয়েছে যার পিছনে রাসায়নিক সার প্রয়োগ একটি বড় কারণ। আর মাটির উপর নির্বিচারে রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু খাদ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়েছে, প্রাণ বৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে, স্বাদ গন্ধ হারিয়ে গেছে। এখন শুধু ব্যপক উৎপাদন কিন্তু নিরাপদ খাদ্য হিসেবে বলবার মত সাহস কেউ করেন না।

খাদ্য যখন নিরাপদ থাকে না তখন এই খাদ্য খেয়ে, দেশে তিন কোটির অধিক মানুষ ডায়েবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন। নানান ধরনের পেটের অসুখে ভুগছেন, হৃদরোগ এখন ঘরে ঘরে, ক্যান্সার এখন যেন সহজ অসুখ! হাপতালগুলো উপচেভরা মানুষ, সরকারী হাসপাতালে ঠাঁই নাই, বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে জীবনের অর্জিত বা জমানো সব টাকা পয়সা খরচ করে পরিবারের আগামী প্রজন্মের জন্য ঋণের বোঝা চাপিয়ে মারা যাচ্ছেন।

.

এই খাদ্য নিরাপত্তা যে কতটা ব্যয়বহুল তা চিকিৎসা ব্যয় যোগ করলে যে অংকে দাড়াবে তাতে মানুষের মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হবে। আর অলিগলিতে গ্যাসের ঔষধ তো এখন প্রধান বিপনন পণ্য। এ স্বাস্থ্যহানী কি আমাদের নজরে আসছে ? দেশের খাদ্য উৎপাদনে বাম্পার ফলনের জন্য ফসল উৎপাদনে  "২২,৬৯,২২৬ মে.টন ইউরিয়া, ৫,৮৫,১০৭ মে.টন টিএসপি, ৫,৭৯,৮২৩ মে.টন এমওপি, ৫,১৬,১১৬ মে. টন ডিএপি এবং ২,৮৬,২৮১ মে.টন জিপসাম ব্যবহার করা হয়েছে।" ( কৃষি অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রদত্ত হিসাবমতে)। এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৮ ধরনের ২২৮টি মাকড়ানাশক, ৭৯ ধরনের ১০১৫টি ছত্রাকনাশক, ১১৭ ধরনের ২৫৮৮টি কীটনাশক, ৫১ ধরনের ৬৯১টি আগাছানাশক, ২ ধরনের ১৩টি ইঁদুরনাশক, ৮৮ ধরনের ৭১৭টি জনস্বাস্থ্যকীটনাশক বিষ বাজারে রয়েছে । এছাড়াও ১৮টি নেমাটোডনাশক এবং গুদামজাত শস্যের পোকা দমনের জন্য চার ধরনের ৮৯টি বিশেষ কীটনাশক রয়েছে । মোট ৩৫৯ ধরনের ৫৩৫৯টি বালাইনাশক বা পেস্টিসাইট বাজারে বিদ্যমান আছে। উল্লেখ্য, কীটনাশকের ৬০% ব্যবহার হয় ধান উৎপাদনে। আর বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ধান!

এইসব রাসায়নিক আমাদের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে, যদি বলা হয় আমাদের সন্তানকে একগ্রাম বিষ খাওয়ানোর জন্য পৃথিবীতে কোন মানুষ রাজি হবেনা তার সন্তানকে বিষ খাওয়ানোর জন্য, অথচ বছরে আমরা প্রায় ৫৪ গ্রাম বিষ খাচ্ছি, আমাদের সন্তানদের খাওয়াচ্ছি।

এই থেকে বাঁচার উপায় কি ?

এখনই সময় আমাদের রুখে দাঁড়াবার, মাটি ও প্রাণকে বাঁচাতে কার্যকর জৈব কৃষিতে ফিরে যাওয়া। পৃথিবীতে জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে যেভাবে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে তা মানব স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা মাথা না রেখে শুধু বিশ্ব বাণিজ্য, অধিক মুনাফার জন্য বিজ্ঞানকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ফাঁদে পা দিয়েছে জনবহুল দেশ ও গরীব দেশগুলো- এর জ্বলন্ত উদাহরণ বাংলাদেশ। বিশ্বে বড় বড় কর্পোরেশনগুলো আমাদের মত গরীব দেশের মানুষকে তাদের পরীক্ষাগারের স্যাম্পল বানিয়ে আমাদের উপর টেস্ট করা হচ্ছে আমরা তাদের উৎপাদিত রাসায়নিক খেয়ে কোন কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মরি।

শুনতে হয়তো খারাপ শুনাবে, কিন্তু বাস্তব উপলব্ধি এমনই।  তাই আমরা আমাদের খাদ্যের যোগান নিজেই নিশ্চিত করি, নিজ উদ্যোগে জৈব কৃষিতে মনোযোগ দেই। জৈবকৃষিও আজ ব্যপক উন্নয়ন ঘটেছে, সেই বিষয়গুলো খোজ করি, ব্যাপক মুনাফার দিকে না ঝুঁকে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টা বুঝি। এতে দেশ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ জাতি গঠনে কাজ করি। অধিক ফলন না গুণগত মান ঠিক রেখে ফলন ফলানোর চেষ্টা করি।