বিপণনবাদ আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে

আলমগীর আলম
Published : 11 Oct 2017, 02:32 AM
Updated : 11 Oct 2017, 02:32 AM

ইদানিং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন সবাই ব্যস্ত। কেউ কারো খবর রাখার মত সময় পাচ্ছে না, যার যার মত ব্যস্ত। কোনদিন কাল ভাদ্রে দেখা হলেই বলতে শুনি ও খুব ব্যস্ত আছি। এ্যানুয়াল রিপোর্টের কাজে ব্যস্ত, কিংবা আমার শীপমেন্ট, নতুন ক্লাইন্ট বা বায়ার এসেছে ইত্যাদি সবাই ব্যস্ত। ব্যস্ততা এমন পরয়ায়ে পৌঁছেছে যে, মধ্যে রাত অবধি কাজ করে আবার সাত সকালে এসে অফিসে ঢুকছি, আবার মধ্যে রাত। এদিকে পরিবারের কারো সাথে কথা বলার ফুরসত নাই, সন্তান পরীক্ষা দিচ্ছে দেখার সময় নাই, মায়ের অসুখ ঔষধ খরচ দিয়েই খালাশ, দেখবার মত ফুরসত নাই। ব্যস্ত ব্যস্ত আর ব্যস্ত।

মধ্যবিত্তের এই রোগের নাম 'বিপণনবাদ'

সবাই ব্যস্ত বিপণন নিয়ে যার কাছে যে যাই থাকুক সবাই বিপনন করতে চায়। ব্যাংক ‍ঋণ বেচে, ডাক্তার সেবা বেচে, ইন্জিনিয়ার কৌশল বেচে, আমলা তার সময় বেচে, শিল্পী তার শিল্প বেচে, আর ব্যবসায়ীরা তো বেচে সবই, জন্মনিয়ন্ত্রণ থেকে কাফনের কাপড় সবই বেচার জন্যই।

রাজনীতি থেকে শুরু করে দিনমজুর সবাই ব্যস্ত বেচা-কেনার মধ্যে আজকাল ভালবাসাও বেচা-কেনা হয়। আসলে কি এই বিপণনবাদ?

বিপণনবাদ হচ্ছে এমন একটি মতবাদ যে মতবাদ কে গ্রাস করে নিজের লাভের জন্য প্রয়োজনীয় একটি যুক্তি উপস্থাপন করা যা শুধু মুনাফা তৈরী করবে আর একটি ন্যায্যতাকে ঢেকে রেখে নতুন বয়ান দিয়ে অলংকৃত করে চৌকষ শব্দ প্রয়োগ করে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তার জন্য নতুনত্ব বিক্রির উপযোগী করে তুলবে।

বিপণনবাদ বিশ্বব্যাপী এর কোন সীমানা নাই, নৈতিকতা নেই, আত্মীয়তা নেই, সম্পর্ক নেই, আছে শুধু লক্ষ্য (Target)। এই Target পূরণের কাজ হচ্ছে বিপণনবাদের মূলকাজ। এর লক্ষ্যে পৃথিবীব্যাপী নতুন নতুন শব্দ তৈরী করে চাকচিক্য করে এমন ভাবে উপস্থাপন করা যা সাধারণের মনে হবে এটা তার জীবনের সব চেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস। এটা ক্রয় না করলে জীবনের বেঁচে থাকাই বৃথা। শিশুরা টেলিভিশনের বিজ্ঞাপণে মোহিত হয়ে সবকিছুই আজ কেনার জন্য নানান বায়না করতে থাকে। যদি একটি প্রশ্ন ছুড়ি যে, কোন জিনিসটির বিজ্ঞাপনের কারণে আপনি কিনতে চান যা খুবই প্রয়োজন ছিলো? না এমন কোন জিনিসের কোন বিজ্ঞাপন হয় না যা আপনার জন্য অতি আবশ্যক। বিজ্ঞাপন তৈরী হয় শুধু আপনার মাধ্যমে একটি প্রয়োজন তৈরী করে নেওয়া, আপনি ঐ পণ্যকে আপনার প্রয়োজন হিসেবে বেছে নেন। এটাই বিপননবাদের স্বার্থকতা।

আজ আমরা বিপণনবাদের মধ্যে পড়ে জীবন যৌবন শেষ করে মানবতার মূল্য হাতরে ফিরছি, জানি না কোথায় গিয়ে থামবে এই বিপণন কৌশল। নিত্য নতুন কৌশলে হাজির হচ্ছে আমাদের কাছে এই বিপণন। আমাদের হুশ ফিরে আসবে কবে? বিপণন আমাদের মৌলিকতা দেয়না, আমদের দেউলিয়া করে দেয় জীবনের কাছে। আমাদের এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ তৈরী করতে হবে এখনই।