পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধে একদিন

মোঃ আলাউদ্দীন ভুঁইয়া
Published : 8 July 2015, 05:49 PM
Updated : 8 July 2015, 05:49 PM

ব্রাজিল-প্যারাগুয়ে সীমান্তে পারানা নদীর উপরে নির্মিত পৃথিবীর সবচে' বড় জলবিদ্যুত বাঁধ 'ইতাইপু' (Itaipu)। 'ইতাইপু' শব্দটি প্যারাগুয়ের আদি ভাষা 'গুয়ারানি' (অফিসিয়াল ভাষা স্প্যানিশ) থেকে এসেছে যার অর্থ 'নিনাদিত পাথর' (sounding stone)। ২০১৩ সালে এই বাঁধ হতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৯৮.৬ টেরাওয়াট ঘণ্টা। এ বাঁধ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে ব্যবহার করে।

১৯৭৩ সালে ব্রাজিল-প্যারাগুয়ের মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা 'পারানা' নদীর উপর ইতাইপু বাঁধের সূচনা ঘটে। বাঁধের নির্মানের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৮৪ সালে, তবে চালু হয় ১৯৯১ সালে।  পৃথিবীর আধুনিক সপ্তাশ্চার্যের মধ্যে একটি। উচ্চতা ২২৫ মি (৬৫ তলা ভবনের সমান), দৈর্ঘ্য ৭.২ কিমি, নির্মাণ ব্যয় ১৮ বি. মাঃ ডঃ, পানিধারণ ক্ষমতা ১,০২ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট, নির্মাতা 'International Engineering Company' ও 'Itaipu Binacional', রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে Itaipu Binacional, মোট শ্রমিক কাজ করেছিল ৪০,০০০, অত্যন্ত সুরক্ষিত। এতে ১৮টি পেনস্টক রয়েছে যার প্রতিটি ৩৪ মি. প্রশস্ত ও ১৯৬ মি উঁচু। মূল বাঁধটি কংক্রিট ও স্টিলের তৈরী ও সংযুক্ত বাঁধ মাটি ও পাথরের। পরিসংখ্যান বলে, যে পরিমাণ লোহা ও স্টিল এ বাঁধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে ৩৮০ টি আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করা সম্ভব ছিল।

২০০৮ সালে একক বাঁধ হিসেবে ৯৪,৬৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এটি বিশ্ব রেকর্ডও করেছিল। এটি প্যারাগুয়ের ৯০% এবং ব্রাজিলের ২৫% বিদ্যুত চাহিদা পূরণ করে। এটি প্রতিদিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জ্বালানী থেকে উৎপাদন করা হলে প্রতিদিন ৪,৩৪,০০০ ব্যারেল পেট্রোলিয়ামের প্রয়োজন হতো। বাঁধটি তৈরীর সময় ১০,০০০ (মতান্তরে ৪০,০০০) পরিবারকে পূর্নবাসন করার প্রয়োজন হয়েছিল, বিলুপ্ত হয়েছে ১২৯ প্রজাতির পাখি, ৩২ ধরণের স্তন্যপায়ী ও ৯ জাতের সরীসৃপ। তবে সর্বোৎকৃষ্ট পানি ব্যবস্থাপনার উদাহরণ হিসেবে ২০১৫ সালে এটি জাতিসংঘের কাছ থেকে "Water for Life Award 2015" পুরস্কার লাভ করে। এ যাবৎ ১৯৭ টি দেশের প্রায় ১৭ মি. লোক এটি ভিজিট করেছে।