বাংলাদেশ কারাগার – অনিয়ম (পর্ব – সাত) : হাসপাতাল : দূর্ণীতির চরম ট্রেজারী

ঘৃতকুমারী
Published : 13 Jan 2015, 10:18 AM
Updated : 13 Jan 2015, 10:18 AM

বাংলদেশের প্রতিটি কারাগারে একটি করে হাসপাতাল রয়েছে। এটা বোধহয় সরকারের তরফ থেকে বন্দিদের জন্য দেওয়া অনেক বড় উপহার। সেই কারা হাসপাতালে কি ঘটছে প্রতিনিয়ত তার মোটামুটি বিবরণ সরকার তথা এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভালভাবে জানেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশের খুব কম রাজনীতিবিদ আছেন যারা জেলে আসেন নাই; তারা হয় ভাগ্যবান; নয়তো এদেশের রাজনীতিক পরিবেশে ভালভাবে বুঝেন এবং সকল সময়ে সরকারী দল করেন। তাই তাদের জেলে আসার দরকার পরে না। তবে এটা নিশ্চিত শতকরা ৭৫ জন রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা বা মধ্যম শ্রেণির নেতা কমপক্ষে ২/১ বার জেলে এসেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই নেতাগণ কোন না কোন সময়ে সরকারের ছিলেন, আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। সে ক্ষেত্রে এটা পরিস্কার সরকার ভাল করেই জানেন কারা হাসপাতালে কি কি ঘটে। চিকিৎসার নামে কি হচ্ছে, এক কথায় বলতে বলা যায় কারা হাসপাতালে যদি রোগী দেখা হয় ১০ভাগ সেক্ষেত্রে চিকিৎসার নামে দূর্নীতি হয় ৯০ভাগ। কারা হাসপাতালের বিবরণ এই প্রতিবেদনে যতটুকু সম্ভব তুলে ধরা হলো পাঠক সমাজের জ্ঞাতার্থে।

প্রতিটি কারা হাসপাতালে ১জন সহকারী সিভিল সার্জন, ১জন ফার্মাসিষ্ট রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে এর ব্যতিক্রম হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে ৪ জন সিভিল সার্জন ৩জন ফার্মাসিষ্ট ল্যাব এ্যাসিসট্যান্ট সহ কয়েদি রাইটার থাকেন। অন্যান্য কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে ১জন সরকারী সিভিল সার্জন ১জন মহিলা সহকারী সিভিল সার্জন ১জন ফার্মাসিষ্ট ও কয়েকজন মেডিক্যাল রাইটার রয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে রয়েছে মোটামুটি ভাল ধরণের ফার্মেসী। জেলা কারাগারগুলোতে ফার্মেসীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জেলা কারা হাসপাতালের ফার্মেসীতে ঔষধ পাওয়া খুবই দুসাধ্য ব্যাপার। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কারাগারগুলো বেশ ভাল অবস্থায় রয়েছে।

কারা হাসপাতালের দূর্নীতির প্রথম স্তর হলো রোগীর বদলে মক্কেল রাখা। কারা হাসপাতালে মক্কেল রাখাটা স্বাধনিতার পর হতে বিশেষ করে ৮০ এর দশকে একজন মক্কেল (ধনী বন্দি) থাকতে হলে তাকে মাসিক ৪০০ টাকা প্রদান করতে হতো। রাইটারের মাধ্যমে এই লেন দেন হতো। ৪০০ টাকা হলে কোন রোগ বালাই ছাড়া যে কোন বন্দি ১মাস হাসপাতালে ডাক্তারের তত্ববধানে আরামে কাটিয়ে দিতে পারতো। ডাক্তার সাহেব মক্কেলের টিকিটে লিখে দিতেন এই রোগ সেই। ভর্তি করতেন না অবজারভেশান নামক প্রভিশন মূলে এই কাজটি ডাক্তার সেরে রাখতেন। ৯০ দশকে এসে ৯৫ সন পর্যন্ত মক্কেলের রেট বেড়ে দাঁড়িয়ে গেল ২ হাজার টাকায়। তবে খাওয়ার জন্য দিতে হতো সপ্তাহে ৩০০ টাকা নুতবা পোকা ধরা ভাত খেতে হবে। ৯৫ সন হতে ২০০০ সন পর্যন্ত মক্কেল মাসিক রেট দাঁড়ালো ৩ হাজার টাকা। খাওয়া বাবদ সপ্তাহিক ৫০০ টাকা। ২০০০-২০০২ সালে মক্কেলের রেট এক লাফে মাসিক ৬০০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ালো, খাবারের জন্য সপ্তাহিক ১০০০ টাকা দিতে হতো। এই টাকায় দৈনিক দুপুরে আলাদা আলু ভর্তা, শাকভাজী ও ডাল দিয়ে ভাল ভাত খাওয়ার ব্যাবস্থা করা হতো। মক্কেলের মাসিক ৬০০০ টাকার মাধ্যে ডাক্তার পেতেন ৪০০০ টাকা রাইটার ১০০০ টাকা বাকী টাকা প্রশাসনের জন্য রেখে দেওয়া হতো।

প্রশাসনের টাকা বন্টনের দায়িত্ব থাকে মেডিক্যাল রাইটারদের ওপর। খাওয়ার টাকা পায় হাজতী রাইটার, ওয়ার্ড ফালতু, চৌকা-ওস্তাগার ও চৌকার জমাদার। ২০০৮ সালে ঢাকা কারা হাসপাতালের মক্কেল রেট গিয়ে দাঁড়ায় মাসিক ১০,০০০/- টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। খাওয়ার রেট সাপ্তাহিক ১০০০ টাকা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যদি হাসপাতালে লক-আপ হতো ৪২৫ জন তার মধ্যে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা থাকতো ১০০ জন। বাকী ৩২৫ জন মক্কেল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে একটা বেশী সুবিধা রয়েছে হাসপাতালের বাহিরেও তাদের ২/৪টা আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে; ১৪ সেলের ২য় তলা যাতে মক্কেল রাখা হতো নিদেন পক্ষে ৫০ জন। হিসাব নিকাশ করলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে ডাক্তারদের মক্কেল রাখা থেকে যে আয় তা সত্যি অভাবনীয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালে মক্কেল রাখার আনুপাতিক হার ঢাকা কারা হাসপাতালের সমান; তবে রেট ১/৪ অংশ কম। জেলা কারা হাসপাতালে মক্কেল রাখা হয় একই কায়দায় তবে রেটের ক্ষেত্রে যার থেকে যত নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে ১হাজার থেকে ২হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। তবে জেলা কারা হাসপাতালের পরিবেশ কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালগুলোর সমতুল্য নয় বলে এর চাহিদাও খুব যে বেশী তা নয়। তবুও অনেক বন্দিই মনে করেন কারা হাসপাতালে থাকলে বোধ করি আরামে থাকা যাবে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে রয়েছে জলভরী। পানির ব্যবস্থা করে মক্কেলের গোসল করিয়ে দেবে কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে দিয়ে যাবে। প্রতি মক্কেলকে সাপ্তাহিক ৮০০ থেকে ১০০০/- টাকা জলভরীদের দিতে হবে। জলভরী হলো কয়েদী বন্দি যারা পানি টানে তারা। জলভরীরা পানির যোগান পায় জেলের পানি মন্ত্রি (রক্ষী) এবং যে বন্দির পানির পাম্প ছাড়বে তার মাধ্যমে। জলভরী যে টাকা পায় তার একটা অংশ দিতে হয় মেডিক্যাল রাইটার, ওয়ার্ড রাইটার; দায়িত্ব প্রাপ্ত সাপ্তাহিক জমাদার, পানি মন্ত্রী নামক রক্ষী, পানি পাম্পের ওস্তাগারকে। গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হয়; তবে সেক্ষেত্রে খুঁশী করতে হয় মেডিক্যাল চৌকার কয়েদি ওস্তাগার ও চৌকা জমাদারকে। ঢাকার বাহিরে অন্যান্য কেন্দ্রীয় কারাগার ও জেলা কারাগারগুলোতে এই ব্যবস্থা রয়েছে। তবে টাকার অংক আনুপাতিক হারে কম হয়।

কারা হাসপাতালের দূর্ণীতির আরেকটি বড় মাধ্যম হলো বাহির মেডিক্যালে পাঠানো। প্রকৃত রোগী যতনা যায় তার-চেয়ে বেশী মক্কেলগণ বাহির মেডিক্যালে যায় চিকিৎসার জন্য। বাহির মেডিক্যাল বলতে পিজি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সোহরয়ার্দী হাসপাতাল, বক্ষব্যাধী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল। কারাগারের চার দেয়ালে ধনী বা রাজনৈতিক বন্দিগণ থাকতে চান না। তারা একটা মুক্ত হাওয়া চান। সেই সাথে আপন জনদের সাথে দেখা শুনা; ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রস্তাব যায় রাইটারের মাধ্যমে ডাক্তার সাহেবের দরবারে। ডাক্তার সাহেব শুনেন বুঝেন কোন কারণ দেখিয়ে মক্কেলকে বাহির মেডিক্যালে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন। স্বাধীনত্র পর বিশেষ করে ৭৫ এর পর হতে এই পদ্ধতিটি চালু হয় কারা হাসপালগুলোতে। ৭৫ এর থেকে ৮০ সন পর্যন্ত বাহির মেডিকেল যেতে মিউনিট তৈরী করতে ডাক্তারদের জন্য দিতে হতো ২/৩ হাজার টাকা; ফার্মাসিষ্ট রাইটার নিতেন ৫০০/- টাকা প্রশাসন ৫০০/- টাকা সব মিলিয়ে ৫হাজার হলেই বাহির মেডিক্যালে যেতে পারতেন। ৮০ এর শুরুতে এসে এর রেট দাঁড়ালো ৭ হাজার। ৯০ এর দশকে এর পরিমাণ দাঁড়ালো ডাক্তার ১০ হাজার টাকা ফার্মাসিষ্ট রাইটার ৫০০০ টাকা প্রশাসন ২ হাজার অন্যান্য সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা। ২০০০ সালের পর হতে বর্তমানে রেট দাঁড়ায় ডাক্তার ৪০ হাজার, রাইটার ও ফার্মাসিষ্ট ৫ হাজার, প্রশাসন ৫ হাজার সব মিলিয়ে ৬০ হাজার হলে বাহির মেডিক্যাল যাওয়া যায়। ডাক্তারদের ৪০ হাজার টাকা ভাগাভাগি হয় সিভিল সার্জন ও দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী সিভিল সার্জন যে কয়জন থাকেন। সিভিল সার্জনকে দিতে হয় এ জন্য যে, যেহেতু আইনানুগভাবে সরকারী হাসপাতালের যে কোন বোর্ড সিদ্ধান্ত নিতে হলে সিভিল সার্জনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক সেক্ষেত্রে টাকার ভাগ তাকেও দিতে হয়।

উপরোক্ত ব্যাবস্থাটি শুধু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে নয় সমগ্র কারা হাসপাতালের চালু রয়েছে রেটের ক্ষেত্রে কম বেশী হতে পারে। বাহির মেডিক্যালে যত রোগী যায় তাদের ভালোভাবে সতর্ককতার সাথে নিরীক্ষন করলে দেখা যাবে তাদের মধ্যে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা শতকরা ১৫% এর বেশী নয়। বাহির মেডিক্যাল যে সমস্ত মক্কেল রোগী যান; তারা নিজ দায়িত্বে যান। মক্কেল রোগীর জন্য রয়েছে মুক্তির পূর্ব মুহুর্তে পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে বাহির মেডিক্যাল থাকার ব্যবস্থা।

জামিনের জন্য হাসপাতাল প্রতিবেদন আসামীর পক্ষে দেয়ার আরো একটি ব্যবসা রয়েছে কারা হাসপাতালগুলোতে। অনেক আসামীর পক্ষে আদালত নিবেদন করা হয় যে আসামী শারীরিকভাবে অসুস্থ বা পাগল কারা হাসপাতালে তার যথাযথ চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ নেই বিধায় তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হোক। আদালত আসমী পক্ষের নিবেদনের ভিত্তিতে উক্ত আসামীর শারীরিক অবস্থা জানার জন্য কারা হাসপাতালের প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। প্রতিবেদন পক্ষে যাবে না বিপক্ষে যাবে তা নির্ভর করে কত টাকা দেয়া হবে তার উপর। বর্তমান সময়ে যদি কোন বন্দিকে পাগল সাবস্ত্য করে প্রতিবেদন দিতে হয় সেজন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। যদি কোন বন্দি আসামীর কারা হাসপাতালে চিকিৎসা করা সম্ভব না হয় তাহলে বাহিরের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে এই প্রতিবেদন দিতে হয় তবে নিদেন পক্ষে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। যদি টাকা না দেয়া হয় তবে প্রকৃত রোগী তাদের সত্যি কারা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো কোনভাবেই সম্ভব নয় এই রিপোর্ট না দিয়ে বরং বিপক্ষে রিপোর্ট দেয়া হয়। দরকার হলে মরে যাবে কারাগারে তবুও তার শারীরিক অবস্থা সত্যি শোচনীয় তা সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিবেনা। শুধু ঢাকা নয় সমগ্র বাংলাদেশের কারা হাসপাতালে একই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। রেটের ক্ষেত্রে হেরফের হতে পারে তবে পদ্ধতিগত কোন প্রার্থক্য নেই।

ডায়াবেটিক্স ডায়েট অনমতি প্রদান করা হচ্ছে কারা হাসপাতাল দূর্ণীতির আরো একটি অংশ। জেলে অনেক হাজতী ও কয়েদী বন্দি অনেক দিন যাবৎ কারাগারের থেকে কারাগারে পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে বেশ সচেতন হয়ে ওঠেন। তারা একটি ভাল থাকা ও ভাল খাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কিছু কিছু কারা বন্দি হাসপাতালের রাইটারদের মাধ্যমে তাদের টিকিটে ডাক্তার দিয়ে লিখিয়ে নেয় ডায়াবেটিক্স রোগী। ডায়াবেটিক্স ডায়েট এর জন্য কার্ড প্রতি ৬শত টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে রাইটার ২শত টাকা রেখে বাকী টাকা ডাক্তার সাহেবকে দিয়ে দেয়। এধরনের বহু ডায়াবেটিক্স রোগী কারাগারে পাওয়া যাবে।

ঔষধ বিক্রি কারা হাসপাতালগুলোতে যেন নিত্তনৈমেত্তিক ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। ডাক্তারগণ প্রতি সপ্তাহে তাদের কারা রক্ষী অর্ডালীর মাধ্যমে ৪/৫ হাজার টাকার দামী ঔষধ ইনজেকশন রিকুইজিশন দেন। সেই মতে ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে যান ডাক্তার অর্ডালী পরবর্তীতে সেই রিকুইজিশন স্লিপে প্রতিস্বাক্ষর করে দেন। এভাবে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ টাকার ঔষধ ইনজেকশন কারাগরের বাহিরে বিক্রি করা হচ্ছে। যা ডাক্তারদের পকেটস্থ; হচ্ছে। এই ব্যবসার সাথে জড়িত ডাক্তার ও ফার্মাসিষ্টগণ। এত বেশী দাম দিয়ে নিন্ম মানের ঔষধ কিনার প্রবল মানসিকতা কাজ করে ডাক্তার ফার্মাসিষ্টদের মাঝে; এর মূল কারণ ঔষধ সরবরাহকারীদের নিকট হতে Underground Commission লাভ করা।

ডান্ডা বেরী খোলা ও লাগানোর মাধ্যমে অবৈধ টাকা আদায়ের একটি পথ রয়েছে কারা হাসপাতালের ডাক্তারদের। যদি বন্দিকে কারা সুপার ডান্ডা বেরী লাগানোর নির্দেশ দেন। সেক্ষেত্রে বিধান হলো ডান্ডা বেরী হাসপাতালের ডাক্তারদের অনুমোদন সাপেক্ষে লাগাতে হবে। ডান্ডা বেরী শাস্তি প্রাপ্ত বন্দিগণ রাইটারদের মাধ্যমে ডাক্তারদের সাথে ১০০০ টাকার হিসাব চুকিয়ে ফেলেন ডাক্তার বন্দির কার্ড লিখে দেন Medically Unfit for fetters; কাজ হয়ে গেল।

কারা হাসপাতালের সবচেয়ে বড় অনিয়ম হলো ডাক্তারদের রোগী দেখার অনিহা, মারমুখী; ব্যঙ্গাত্মক মনোভাব প্রদর্শন করা। অধিকাংশ সময় দেখা যে রোগী বন্দিদের সমস্যা সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে ডাক্তারগণ আগ্রহী নন। না দেখে না শুনেই ঔষধ লেখার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এতে ডাক্তারদের সম্পর্কে বন্দিদের মনে এক ধরণের নেতিবাচক মনোভাব গেড় উঠেছে। ডাক্তারগণ যদি মনে করেন কোন বন্দিকে একটু খানি বিব্রত করবেন সেক্ষেত্রে প্রায়শই জিজ্ঞাসা করেন তোর মামলা কি? এ নিয়ে নিজেরা নানা ধরণের মন্তব্য করতে শুরু করেন। এমনকি সেই রোগী বন্দির ভবিষ্যৎ সাজা হবে এ ধরনের রায় শুনিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কথাবার্তা বনাবনি না হলে বন্দিদের ওপর মারমুখী হয়ে এমনকি শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। ডাক্তারদের পেশা হচ্ছে সেবা প্রদান করা কোন রোগীর কি মামলা কি রায় হবে এ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা তার কাজ নয়। ফলশ্রুতিতে কারা বন্দিদের শতকরা ৯০ জনের ধারণা কারা হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে।

কারা হাসপাতালের আরেকটি বড় ধরণের অনিয়ম হচ্ছে সময়োচিত পদক্ষেপ না নেয়া; সেই কারণে কারা হাসপাতালে প্রতি মাসে ২/৪ জন বন্দি মারা যাবার পর অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে কারাগারের বাহিরে চিকিৎসার জন্য রওনা দেন। একটি ঘটনা আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো সামগ্রীক অবস্থা অনুধাবনের জন্য।

ঘটনাটি ঘটে ২০০৪ সালের জুলাই/আগষ্ট মাসে বন্দির নাম আবু সাঈদ, পিতা লাল মিঞা। বাড়ী সাতক্ষীরা। একদিন খাওয়ার পর সুস্থ সবল আবু সাঈদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বহিঃগমন রাইটারগণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার দেখে বললেন কিছু না গ্যাসের প্রবলেম। সাঈদের বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে দেখে কয়েদী রাইটারগণ বলে উঠে স্যার মনে হয় অবস্থা ভাল নয়। ডাক্তার সাহেব উত্তেজিত হয়ে যান। ভোর বেলায় আবু সাঈদ মারা যায়; তাড়াতাড়ি মিউনিট করে মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হলো মৃত আবু সাঈদকে চিকিৎসার জন্য সকাল-৯:০০টার সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। রোগী মারা গেছে আনুমানিক ভোর ৪:০০ টার সময়। সেই রোগীকে সকাল ৯:০০ টার সময় অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো নাটক যে কতখানি প্রহসন ও প্রতারণামূলক তা অবশ্যই সভ্য মানুষদের ভাবতে হবে। শুধু আবু সাঈদ এ ধরণের ঘটানার শিকার নয়। প্রতি মাসেই কারা হাসপাতালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কারা হাসপাতালগুলোতে যদি এখনো এর প্রতিকার না করা যায় তবে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা ঘটে চলবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

কারা হাসপালগুলোতে মক্কেল রোগীরা ঘুমান শিশুর আদরে খাটিয়ায় ধোয়া চাদরে। প্রকৃত রোগীদের থাকার জায়গা হলো মাটিতে নোংরা পরিবেশে। কারা চৌকায় যা রান্না হয় তার এক চতুর্থাংশ বিক্রি হয় মক্কেলদের মাঝে আর ডায়বেটিক্স নামক টিকিট ধারী রোগীদের কাছে। মক্কেল রোগীরা খাটে বসে ফালতুর চৌকস তত্ত্বাবধানে খাচ্ছেন আর প্রকৃত রোগীদের জন্য রয়েছে উচ্ছিটাংশ। কোন ভিজিটার আসলে মক্কেল রোগীরা হারিয়ে যান সমগ্র জেলে এখানে সেখানে; তখন খাটে বসে থাকেন প্রকৃত রোগী। ডাক্তারগণ কত দ্রুত নিজেদের ও কারা হাসপাতালের রুপ পাল্টিয়ে ফেলতে পারেন; ভিজিটারগণ ভিজিট করে যা দেখেনে তার সাথে কোন মিলই প্রকৃত অর্থে কারা হাসপাতালগুলোতে নেই।

বাংলাদেশ কারাগার-অনিয়ম (পর্ব -ছয় ) পড়তে বিডি নিউজ এখানে  অথবা at news bd এখানে ক্লিক করুন ।