ব্লগাররা যাচ্ছেন দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ব্লগারদের সাহায্য নিয়ে

আরিফ হোসেন সাঈদ
Published : 5 July 2012, 03:57 AM
Updated : 5 July 2012, 03:57 AM

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস ও বন্যা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সেখানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তারা সেখানে গৃহহারা হয়েছেন, সেখানে দেখা দিয়েছে খাদ্যের অভাব, বাহিরের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ, মানুষগুলো সীমাহীন দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির সবগুলো উৎস দূষিত হয়ে গেছে। দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে যাওয়া মানুষগুলো মৃতদের জন্য শোক প্রকাশ করতে পারছে না, তারা তাকিয়ে আছে সাহায্যের আশায়। যারা এখন বেচে আছে তারা আরও বেচে থাকতে চায়। তার জন্য আমাদের ভেতর থেকে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। ব্লগাররা এ ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তারা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ করেছেন, তারা শুধু ব্লগেই মানবতার কথা বলেন না। দেশ ও দেশের বাহির থেকে অনেক ব্লগার সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। মাত্র কয়েকদিনের প্রচারণায় সে সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা।

এখন ব্লগারদের উপর অনেক দায়িত্ব। তাদের বেছে নিতে হবে কিভাবে তারা দুর্যোগ পীড়িত মানুষগুলোর জন্য এই অর্থের মাধ্যমে এর সর্বোচ্চ সাহায্য পৌঁছে দিতে পারেন। সে উদ্দেশ্যে ব্লগাররা একটি জরুরী আলোচনায় বসেন। গত ৩রা মার্চ অনলাইন বার্তা সংস্থা বিডি নিউজের প্রধান কার্যালয় মহাখালীতে এ বিষয় নিয়ে একটি গোল টেবিল আলোচনা হয়। সেখানে সাহায্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় যেমন, কোন স্থানে ত্রাণ দেয়া হবে, কবে ত্রাণ দেয়া হবে, কোন কোন ব্লগাররা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে আগ্রহী, কি কি ত্রাণ দেয়া হবে। উপস্থিত সকল ব্লগার ও সাংবাদিকগণ এখানে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। এতে ব্লগাররা একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেন।

কোন জায়গাটিতে ত্রাণ দেয়া জরুরী এ বিষয়ে মতামত দেন বিডিনিউজের সাংবাদিক চন্দন, যিনি কক্সবাজার এলাকায় বন্যা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংবাদগুলো বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখেন। তিনি বলেন, চকোরিয়া ও রামু এ দুটি অঞ্চলে বেশি সাহায্য প্রয়োজন। এ বিষয়ে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরেন।

যে জায়গাগুলো সাহায্যের জন্য বেছে নেয়া হবে সেগুলো কি অধিক মৃত্যুর সংখ্যার ভিত্তিতে নাকি বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ভিত্তিতে বেছে নেয়া হবে এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন ব্লগার উত্তর পুরুষ। এ বিষয়ে সাংবাদিক চন্দন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের দিক থেকে রামু উপজেলাকে বেছে নেয়া যায় কারণ সেখানে এখন ত্রিশ হাজার মানুষ ত্রাণ সহায়তা পায়নি। এবং মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে যদি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বেছে নেয়া হয় তবে চকোরিয়া উপজেলা।

ব্লগার উত্তর পুরুষ ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে কমিউনিটি ভিত্তিক পদ্ধতির কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় সরকার ও সেখানকার বিভিন্ন এনজিও গুলোর কথা বলেন। তিনি মনে করেন, কোথায় কোথায় সাহায্য বেশি দরকার এবং সেগুলো কি কি হতে পারে এ বিষয়ে তারা আমাদের সাহায্য করতে পারবেন। ব্লগার উত্তর পুরুষ বলেন, (এক) এখন দুর্গত এলাকায় নিউমোনিয়া, ও স্যানিটেশন সমস্যা তীব্র আকারে দেখা দিবে, নিরাপদ পানির অভাব হবে। এ অভাবগুলো আমরা পূরণ করতে পারি। (দুই) আমরা তদের নগদ ক্যাশ দিতে পারি। নগদ ক্যাশ প্রদানের ক্ষেত্রে দুটো দিক রয়েছে, আমরা তাদের হাতে হাতে গিয়ে দিয়ে আসতে পারি বা স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের কাছে অর্থ পাঠাতে পারি।

ব্লগার জাহেদ উর রহমান এ বিষয়ে দুর্গতদের নগদ অর্থ প্রদানের ব্যাপারে মত দেন। এবং ব্লগার উত্তর পুরুষের কমিউনিটি ভিত্তিক পদ্ধতিকেই সঠিক বলে মনে করেন। তবে ব্লগার জাহেদ আরও যোগ করেন, যদি আমরা তাদের নগদ অর্থ প্রদান করি তবে সে ক্ষেত্রে কমিউনিটি ভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে দেয়া যাবে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এতে স্বচ্ছতা থাকবে না এবং ক্ষতিগ্রস্তরা এই টাকা নাও পেতে পারে। কিন্তু ব্লগার উত্তর পুরুষ মনে করেন নগদ অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রেও কমিউনিটি ভিত্তিক পদ্ধতিই তার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেন, তিনি দীর্ঘ দিন সে পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকায় কাজ করেছেন এবং এ ব্যাপারে এ পদ্ধতির উপরই তিনি বিশ্বাস রাখেন।

তবে শেষে নগদ অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে তারা দুজনেই একমত হন। এবং এ ব্যাপারে আমি নিজে এবং ব্লগার কৌশিক আহমেদও সম্মতি প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে ব্লগার কৌশিক আহমেদ বলেন প্রশাসন ও সিকিউরিটির সাপোর্ট পেলে আমরা ক্যাশ দিতে পারি। শেষে সকল ব্লগারদের সর্ব সম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে দুর্গতদের নগদ অর্থই দেয়া হবে।

এখন কিভাবে তাদের কাছে এই অর্থ পৌঁছে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে ব্লগার জাহেদ উর রহমান বলেন যে, যদি আমরা ক্যাশই দেই তবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে না পাঠিয়ে সেটা নিজেদের গিয়ে গিয়ে হাতে হাতে পৌঁছে দেয়াই ভাল। এ ব্যাপারে আমি নিজেও হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে মত দেই। হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে যুক্তি দাঁড়ায়, প্রতিটি দুর্যোগের পর পরই সুযোগ সন্ধানী একটি গোষ্ঠী বের হয় যারা সবখানে মিশে যায়। যার ফলে সাধারণ মানুষ সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে বঞ্চিত হন। তবে ব্লগার উত্তর পুরুষ এ ব্যাপারে ভিন্ন মত দেন।

পরে এ বিষয়ে সম্মতিতে আসা যায় যে, আমরা স্থানীয় প্রতিনিধি, জনগণ ও বিভিন্ন এনজিওর সহায়তা নিব কিন্তু মূল দায়িত্ব ও তত্ত্বাবধানে আমরাই থাকব। অর্থাৎ এ দায়িত্বটি আমরা অন্যদের উপর ছেড়ে দিব না। জানা গেছে সে এলাকার ১২/১৩টি ইউনিয়নের প্রায় পনের হাজার মানুষ এখনও পানি বন্দী রয়েছেন। রাস্তাঘাটগুলো যোগাযোগের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে দুর্গতদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। যেসব পরিবারগুলোতে শিশু রয়েছে সেসব পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে মত দেন ব্লগার আইরিন সুলতানা।

সাংবাদিক চন্দন বলেন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞ দুজন প্রতিনিধিকে দুএক দিন আগেই সে এলাকায় পাঠিয়ে দিতে পারি। পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঐ প্রতিনিধিগণ ঐ এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো লিস্ট করবেন, যাদের সাহায্য করা হবে। এ ব্যাপারে এনজিও ও গ্রামের লোকজনদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, গ্রামের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই সাহায্য পৌঁছে দেয়া হবে।

আলোচনায় ঠিক করা হয় দুর্গত এলাকায় কোন কোন ব্লগাররা যাবেন। এ ব্যাপারে ব্লগার আরিফ হোসেন সাঈদ, ব্লগার কৌশিক আহমেদ, ব্লগার আলোর সন্ধানে, ব্লগার মঞ্জুর মোর্শেদ, ব্লগার সুলতান মির্জা যাচ্ছেন। এবং যাওয়ার পথে আমাদের সাথে চট্টগ্রাম থেকে যোগ দিচ্ছেন ব্লগার সুমিত চৌধুরী যোগ দিচ্ছেন। এবং বিডিনিউজের সাংবাদিক হাসান বিপুলকে আমরা সাথে পাচ্ছি।

ব্লগারদের দুর্গত এলাকায় যাবার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ব্লগাররা ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই, ২০১২) রাত আনুমানিক ১০টায় রওয়ানা হবে এবং শুক্রবার (৬ জুলাই, ২০১২) রাতে ঢাকায় ফিরে আসবে।

ব্লগার আইরিন সুলতানা জানিয়েছে, ব্লগারদের পক্ষ থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। অর্থ ছাড়াও বন্যার্তদের জন্য আমাদের এখানে বিভিন্ন ত্রাণ এসে পৌঁছেছে যেমন, ঔষধ।

আরিফ হোসেন সাঈদ, ৪ঠা জুলাই, ২০১২